যত কাণ্ড রবিবারে। তাও আবার কলকাতা নয়, সূদূর উত্তরপ্রদেশে। একেবারে সাহসপুরে। লালমোহনবাবু হলে নির্ঘাত লিখতেন, 'সাহসপুরে সাসপেন্স'। আইপিএল খেলতে ব্যস্ত মহম্মদ সামি। সোমবারের সন্ধেতেই তিনি হায়দরাবাদে খেলতে নামছেন সানরাইজার্সের বিরুদ্ধে। তিনি বোধহয় জানেনও না, উত্তরপ্রদেশে তাঁর পৈতৃক বাড়িতে কী কাণ্ডই না হচ্ছে!
থানা, পুলিশ, আইনত দাবি নিয়ে বিচ্ছিন্না স্ত্রী! পুরো জমজমাট চিত্রনাট্য। যে চিত্রনাট্যে তিনি থেকেও নেই। ঘটনার সূত্রপাত রবিবারের সন্ধেতে। যা চলল ২৪ ঘণ্টা। পুরো সোমবারের বিকাল পর্যন্ত।
আরও পড়ুন গ্রেফতার হাসিন জাহান, পুলিশের হেফাজতে তারকা ক্রিকেটারের স্ত্রী
আইপিএল আর নির্বাচনের গরমাগরম আবহেও সোমবার বেলা থেকেই গুগল নিউজে ট্রেন্ডিং দেখাচ্ছিল হাসিন জাহানকে। দেশজোড়া মিডিয়ায় শিরোনামে সেই বঙ্গকন্যা, যিনি গতবছরেই সামির বিরুদ্ধে একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে গিয়েছেন। এবারের লোকেশন আবার ভিন রাজ্যে! সপ্তাহের শুরুতেই প্রচারমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, অবৈধভাবে নিজের শ্বশুরবাড়িতে প্রবেশ করে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ার জন্য গ্রেফতার হয়েছেন হাসিন জাহান।
সকাল থেকেই একের পর এক ফোন। সাড়া দিচ্ছিলেন না। হোয়্যাটসঅ্যাপে পরিচিত নম্বর থেকে 'নক' করে অবশেষে পাওয়া গেল বিদ্রোহী কন্যাকে। কী কারণে ধৃত তিনি? কেনই বা হঠাৎ করে উত্তরপ্রদেশে 'হানা' দিলেন তিনি? আকাশছোঁয়া কৌতূহল মিটিয়ে হোয়্যাটসঅ্যাপে যা বললেন হাসিন, তার নির্যাস-
"আমি ২৮ তারিখ সন্ধেয় শ্বশুরবাড়ি যাই। আমার শ্বশুড়বাড়ির অর্ধেক অংশ সামির নিজের টাকায় বানানো। ওখানে আমার জুয়েলারি, আসবাবপত্র, জামাকাপড় সহ অনেককিছু রয়েছে। আমার নির্দিষ্ট রুমের চাবি খুলে প্রবেশ করি। বেবোকে নিয়ে ওখানে ছিলাম। আমি ওখানে যাওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ আসে। তারপরে পুলিশের সামনেই শাশুড়ি অঞ্জুমা, দেওর মহম্মদ কাইফ প্রচণ্ড চিৎকার শুরু করে। ওদের পাত্তা না দিয়ে রুমেই ছিলাম। তারপর পুলিশকে সমস্ত কিছু জানাই। পুলিশ চলে যাওয়ার পরে বাচ্চা নিয়ে রুমে শুয়ে পড়ি।
তখন কিছু না হলেও রাত্রি ১২ টার সময় পুলিশ রুমের দরজা জোরে জোরে নক করে এবং চিৎকার করতে থাকে। বেবো ঘুম থেকে উঠে যাওয়ার ভয়ে আমি দরজা খুলতে বাধ্য হই। দরজা খোলার সঙ্গেই পুলিশ হুড়মুড় করে আমার রুমে ঢোকে। তারপরে আমাকে বলে থানায় যেতে হবে। রুমে অশালীন ব্যবহার করে জোরপূর্বক। আমার হাত ধরে টানাটানি করতে শুরু করে।
প্রথমে থানায় যেতে ইস্তঃস্তত বোধ করছিলাম। সকালে যাওয়ার কথা বলি। আমি নাইট গাউন পরেছিলাম। বলতে থাকে, ওই পোশাকেই যেতে হবে। অনেক অনুরোধ করার পরে পোশাক পরিবর্তন করে থানায় যাওয়ার অনুমতি পাই। ঘুমন্ত অবস্থা থেকে তোলা হয় বাচ্চাকেও। থানাতে কিছুক্ষণ থাকার পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় আমাদের। বিভিন্ন নথিতে সই করতে হয়। এরপরে মশা ভর্তি ছোট্ট অস্বাস্থ্যকর একটা ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়া। অনাহারে আমাকে আর বেবোকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। কিছুক্ষণ পরে আইনজীবীকে ফোন করার চেষ্টা করি। সেই সময়ে আমার ফোন কেড়ে নেওয়া হয়।
সারা রাত ভীষণ কষ্টে কাটানোর পরে সকালে বেবো খিদেতে ছটফট করতে থাকে। খাবার, জল কিছু আমাদের দেওয়া হয়নি। বেলা ১১টার পরে থানায় যাওয়ার পরে বুঝতে পারি, দখলদারি, শান্তি নষ্ট করা- এমন সমস্ত চার্জে আমাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে। ওখান থেকে জামিনে ছাড়া পাই। এরপরে এসডিও-কে বলে শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করি। তবে গাড়িতে যাওয়ার সময় চালককে শ্বশুরবাড়ি থেকে শাসানো হয়, সাহসপুরের দিকে গেলে খুন করে ফেলা হবে। আমাকেও তিন লক্ষ টাকার তোলা নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।"
তাহলে কী বোঝা গেল? হাসিন বনাম মহম্মদ সামি দ্বৈরথে যাঁরা ক্রিকেটারের জয় অবশ্য়ম্ভাবী বলে ধরে নিয়েছিলেন, তাঁদেরকে স্রেফ বুঝিয়ে দেওয়া, 'পিকচার আভি বাকি হ্যায়, মেরে দোস্ত!'