ঋষভ পন্থ বহুদিন আগেই পিতাকে হারিয়েছিলেন। টি২০ বিশ্বকাপ চলাকালীন দ্বিতীয়বার কার্যত পিতৃহারা হলেন পন্থ। একাধিকবার সাক্ষাৎকারে পন্থ বলেছেন, কোচ তারক সিনহা তাঁর কাছে পিতৃতুল্য। সেই তারক সিনহাই শনিবার প্রয়াত হলেন ফুসফুসের সংক্রমণে। বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। তবে সংক্রমণের ধাক্কা আর সামলাতে পারলেন না তারক সিনহা।
অবিবাহিত ছিলেন। মৃত্যুর সময় রেখে গেলেন বোনকে। কোচ হিসেবে ভারতের প্রথম সারির বহু ক্রিকেটারকে তুলে এনেছেন। মনোজ প্রভাকর, সুরিন্দর খান্না, অজয় শর্মা, রমন লাম্বা, অতুল ওয়াসন, সঞ্জীব শর্মার মত প্রখ্যাত ক্রিকেটার থেকে হালের ঋষভ পন্থের উত্থান তাঁর কোচিংয়ে। দিল্লির বিখ্যাত সনেট ক্লাবের কোচ ছিলেন। অগুনতি ক্রিকেটার দেশকে উপহার দিয়েছেন। তাঁর প্রয়াণে শোকের ছায়া দেশের ক্রিকেট মহলে।
আরও পড়ুন: স্কটল্যান্ডকে কচুকাটা করল ভারত! কীভাবে এখন কোহলিরা সেমিফাইনালে পৌঁছবে, জানুন
৮০-র দশক থেকেই কেপি ভাস্করের মত তারকাদের গড়েপিঠে নিয়েছিলেন। এরপরে নব্বইয়ের দশকে দেশকে উপহার দিয়েছেন একের পর এক তারকা- আকাশ চোপড়া থেকে মহিলা ক্রিকেটার অঞ্জুম চোপড়া, এরপরে তাঁর কোচিংয়ে ক্রিকেটে হাতেখড়ি আশিস নেহরা, শিখর ধাওয়ানদের মত সুপারস্টারদের।
দেশে এমনিতে ক্রিকেট কোচের অভাব নেই। তবে উস্তাদজি ছিলেন একজন-ই, তিনি তারক সিনহা। অবিবাহিত তারক স্যারের কাছে পরিবার ছিল সনেট ক্লাব-ই। ভারতীয় বোর্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারক সিনহার মত জহুরির চোখকে সেভাবে দেশের ক্রিকেটে কাজেই লাগানো হল না। একবার যদিও তাঁকে জাতীয় মহিলা দলের হেড কোচ হিসেবে নিয়োগ করে। সেই সময় ঝুলন গোস্বামী, মিতালি রাজদের আরও ঝকঝকে করে তোলেন।
দেশে নতুন নতুন ক্রিকেট প্রতিভা চেনার বিষয়ে তাঁর জুড়ি মেলা ভার ছিল। তিনি অবশ্য জানতেন, সকলেই আশিস নেহেরা বা ধাওয়ান বা পন্থের পর্যায়ে যেতে পারবে না, তাই তিনি কোচিংয়ে প্ল্যান বি সবসময়ে রেডি রাখতেন।
পন্থকে কীভাবে গড়ে তুললেন তা এখনও দিল্লির ক্রিকেট মহলে আলোচনা হয়। পন্থকে প্রথমে স্পট করেন তারক সিনহার সহকারী দেবেন্দর। সেই সময় রাজস্থানে কোচিং করছিলেন তারক সিনহা। পন্থের ক্রিকেট শিক্ষা নেওয়ার জন্য গুরুদ্বারায় আশ্রয় নেওয়া এখন ভারতীয় ক্রিকেটে মিথ হয়ে গিয়েছে। তবে অনেকেই জানেন না, গুরুদ্বারায় থাকা-খাওয়ার পুরো বন্দোবস্ত করেছিলেন তারক সিনহা। তাছাড়াও পন্থ যাতে দশম এবং দ্বাদশের পরীক্ষাও দিতে পারেন, সেই ব্যবস্থা দিল্লি থেকে করেন তিনি। পরের দিকে পন্থকে দিল্লিতে থাকার ব্যবস্থাও করেন।
পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পন্থ পরে জানান, "উনি মোটেই আমার পিতৃতুল্য নন। উনি আমার সাক্ষাৎ পিতা।" পন্থ কেরিয়ারে এখনও পর্যন্ত যা কিছু অর্জন করেছে, তার জন্য বিশাল গর্বিত ছিলেন তারক স্যার।
সকলেই বিশ্বাস করতেন, তারক স্যারের কাছে হয়ত কিছু জাদুদন্ড রয়েছে, যা দিয়ে অজ্ঞাতকুলশীলদের তারকা-খ্যাতি দিতে পারেন। এখনও দিল্লির ক্রিকেট সার্কিটে একটি ঘটনা ব্যাপক আলোচনা হয়। মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি তারক সিনহার কাছে হাজির হয়ে একবার আর্জি জানান, "পন্থ যেখানে বড় হয়েছে, সেই রৌরকির বাসিন্দা আমি। অনুগ্রহ করে ওঁকেও পন্থের মত বানিয়ে দেন। ও ক্রিকেটের বিষয়ে ভীষণ প্যাশনেট।" সকলেই বিশ্বাস করত তারক স্যারের কাছেই হয়ত রয়েছে তারকা হিসেবে গড়ে তোলার ম্যাজিক পাসওয়ার্ড।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন