Rohit Sharma Test opener: ভারতের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় রোহিত শর্মা আছেন ১৬তম স্থানে—১১০ ইনিংসে ৪,৩০১ রান, গড় ৪০.৫৭, সঙ্গে ১২টি শতরান। এই পরিসংখ্যান তাঁর অবস্থানটা স্পষ্ট করে দেয়—রোহিত ছিলেন একজন ভাল ব্যাটসম্যান, যিনি মাঝে মাঝে অসাধারণ মুহূর্ত তৈরি করেছিলেন। তবে, তাঁর নিঃসন্দেহ প্রতিভার কথা মাথায় রেখে বলা যেতেই পারে, টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর সামর্থ্যের পূর্ণ বিকাশ ঘটেনি।
তাঁর অবস্থানটা আরও আকর্ষণীয়, কারণ ভারতের এমন এক শ্রেণির ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তিনি পড়েন যাঁরা ৪,০০০-এর ঘর অতিক্রম করেছেন—তাঁরা হয়তো কিংবদন্তি নন, কিন্তু অধিকাংশের তুলনায় এগিয়ে। এই তালিকার শীর্ষে আছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি (৪,৮৬৭), যাঁর টেস্ট ব্যাটিং ছিল অধ্যবসায়ের ফসল; আছেন মোহিন্দর অমরনাথ, যিনি নিজেই বলতেন তিনি তাঁর ভাইদের তুলনায় কম প্রতিভাবান, কিন্তু মানসিক দৃঢ়তা দিয়ে টেকনিক্যাল ত্রুটি কাটিয়ে উঠেছিলেন।
রোহিতের ক্ষেত্রেও মিল আছে—তাঁর খেলা ইংল্যান্ডে ব্যর্থ হবার জন্য যেন আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল, এবং প্রথম সফরেই ব্যর্থ হন। কিন্তু ২০২১ সালে তিনি দেখান যে কঠোর সংযম এবং মনোযোগ দিয়েই বড় ইনিংস খেলা সম্ভব। সেই সফরেই তিনি ওপেনার হিসেবে একটি শতরান ও একটি ৮৩ রানের ইনিংস খেলেন, যা ছিল তাঁর টেস্ট কেরিয়ারের অন্যতম সেরা অধ্যায়।
তাঁর নিচে আছেন গৌতম গম্ভীর—ততটা শৈল্পিক ব্যাটসম্যান নন, তবে রোহিত তাঁর কেরিয়ারের পরের ভাগে গম্ভীরের মতো দৃঢ়তা অর্জন করেন। এই দুই ব্যাটসম্যান ছিলেন স্পিন বোলারদের বিরুদ্ধে পুরোনো ঘরানার শেষ বিপজ্জনক যোদ্ধাদের একজন।
আরও পড়ুন অস্ট্রেলিয়াই খেয়ে নিল কেরিয়ার! দ্রাবিড়-লক্ষ্মণদের মতোই হাল হল রোহিতের?
তবে রোহিতকে ঘিরে চিরকাল একটা প্রশ্ন থেকে যাবে—তিনি কি তাঁর সম্ভাবনার পূর্ণতা পাননি? সম্ভবত, না। কিন্তু কিছু ইনিংস আছে যেগুলোতে রোহিত শর্মার ক্রিকেট জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ের আত্মা ধরা পড়ে:
৮৩ রান বনাম ইংল্যান্ড, লর্ডস (২০২১):
যদিও পরে সিরিজে একটি শতরান আসে, লর্ডসের এই ইনিংস ছিল তাঁর ওপেনার হিসেবে মাত্র তৃতীয় ইনিংস, তাও আবার জেমস অ্যান্ডারসনের চোখধাঁধানো বোলিংয়ের বিরুদ্ধে। শুরুতে প্রথম ৪৮ বলে মাত্র ৮ রান করেছিলেন, একটি বাউন্ডারিও মারেননি। বলের ধার কমার পর এবং রোদ উঠলে তবেই ছন্দে আসেন। সেই ইনিংসটি রোহিতের খেলায় নতুন মাত্রা যুক্ত করে।
৩৭ রান বনাম অস্ট্রেলিয়া, অ্যাডিলেড (২০১৮):
সূর্য আলো ছড়ানো অ্যাডিলেডের মাঠে, বল পুরনো হয়ে গেলে তিনি নিজের বিদেশ সফরের কোডটা বুঝে ফেলেছেন বলে মনে হচ্ছিল। প্যাট কামিন্সকে দুর্দান্ত কভার ড্রাইভে ছক্কা হাঁকানো, অনায়াসে ড্রাইভ ও পুল শট—সবই ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু নাথান লায়নকে মাঠের বাইরে মারতে গিয়ে আউট হন, ঠিক আগের বলেই তিনি একটি ভুল শট খেলেছিলেন। আরেকটি সম্ভাবনাময় ইনিংস হঠাৎ করেই শেষ।
১৬১ রান বনাম ইংল্যান্ড, চিপক (২০২১):
একটি এবড়ো-খেবড়ো উইকেটে, যেখানে দুই ইনিংসে মাত্র দুইজন ব্যাটসম্যানই হাফ-সেঞ্চুরি করতে পেরেছিলেন, সেখানে রোহিত রচনা করেন এক রাজকীয় ইনিংস। সুইপ, কাট, স্লগ—সব কিছু মিশিয়ে একটি দুর্দান্ত শতরান করেন, যা টার্নিং ট্র্যাকে স্পিনার ধ্বংস করার একটি রীতিমতো চিট কোডের মতো ছিল।
আরও পড়ুন কেন আচমকা অবসর গ্রহণ করলেন রোহিত? অবশেষে সামনে এল আসল কারণ
৪৩ রান বনাম অস্ট্রেলিয়া, অ্যাডিলেড (২০১৪):
পাটা উইকেটে ধৈর্য ধরে খেলছিলেন। আগের বলেই লায়নকে মিড-অনের উপর দিয়ে দারুণ শটে মেরেছিলেন। পরের বলেই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে বল লেগ সাইডে ঠেলার চেষ্টা করেন, কিন্তু বল ব্যাটের কোণে লেগে বোলারের কাছে ধরা পড়েন। আবারও একটি ইনিংস, যা "হতে পারত"—সেই তালিকায় যোগ হল।
১৭৬ রান বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা, বিশাখাপত্তনম (২০১৯):
প্রথমবার ওপেন করতে নেমেই শতরান করেন রোহিত—সম্ভবত তাঁর টেস্ট কেরিয়ারকে নতুন জীবন দেওয়ার শেষ সুযোগ ছিল এটি। সেই ইনিংসে ছিল পরিপক্ব টেকনিক, সাহসী শট খেলা এবং দীর্ঘ ইনিংস খেলার তাগিদ। দ্বিতীয় ইনিংসেও আরেকটি শতরান করে তিনি প্রমাণ করেন—এই জায়গাটা তাঁর প্রাপ্য।
আরও পড়ুন টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় রোহিতের, বড় সিদ্ধান্ত নিলেন হিটম্য়ান