Rohit Sharma on retirement: ২০২৪-এ বার্বাডোসে টি২০ বিশ্বকাপ জেতার পরই এই ফরম্যাট থেকে তাঁর অবসরের কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন রোহিত শর্মা। কিন্তু, তারপরও রোহিতের ফর্ম নিয়ে কোনও প্রশ্ন ওঠেনি। অনুরাগীদের অনেকেই চান, রোহিত অবসরের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে টি২০ ফরম্যাটে ফিরে আসুন। কিন্তু, রোহিতের স্পষ্ট কথা যে, সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের কোনও সম্ভাবনাই নেই।
এই ব্যাপারে রোহিত জানিয়েছেন যে তিনি, অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে রীতিমতো শান্তিতে দিন কাটাচ্ছেন। তিন মাস আগে ভারত বিশ্বকাপ জেতার পরে টি২০ আন্তর্জাতিককে বিদায় জানিয়েছিলেন রোহিত। তবে, ক্রীডা়জগতে এইভাবে 'অবসর' ভেঙে মাঠে ফিরে আসার নজির কম নেই। আর, সেই কারণেই 'অবসর' শব্দটাও তার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। শাহিদ আফ্রিদি, মহম্মদ হাফিজ, শোয়েব মালিক এবং বিশ্বের আরও কিছু তাবড় ক্রিকেটার একাধিকবার অবসর ভেঙে মাঠে ফিরেছেন। শুধু ২২ গজই নয়। এই ছবিটা দেখা গিয়েছে অন্যান্য খেলাতেও। মাইকেল জর্ডান, মাইকেল ফেলপস, কিম ক্লিস্টারস, টম ব্র্যাডির মতো বিখ্যাত ক্রীড়াবিদরাও অতীতে তাঁদের অবসর ভেঙে মাঠে ফিরেছেন।
সেই প্রসঙ্গ খুঁচিয়ে তুলে রোহিত শর্মা এসব কথা বলার পর অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ভারত অধিনায়ক কি তাহলে আফ্রিদি, স্টোকস, আমিরকে খোঁচা দিলেন? কারণ ২০১০, ২০১১, ২০১৪, ২০১৬- চার বার অবসর নিয়ে অবসর ভেঙে খেলায় ফিরেছিলেন আফ্রিদি। অবশেষে পাকিস্তানের এই অলরাউন্ডার ২০১৭ সালে চূড়ান্ত অবসর নেন। তার আগে ২২ গজে তাঁর ব্যাটিংয়ের মতই অবসর ভাঙা আর অবসর ঘোষণার খেলার জন্যও তিনি রীতিমতো বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিলেন। শুধু আফ্রিদিই বা কেন? মহম্মদ আমিরও তো তাই। তিনি এবং ইমাম ওয়াসিমের পাকিস্তানি জুটি ২০২৪ টি২০ বিশ্বকাপ খেলার জন্য তাঁদের অবসর ভেঙেছেন। ইংল্যান্ডের তারকা অলরাউন্ডার বেন স্টোকস আবার ২০২২ সালে একদিনের ক্রিকেট থেকে তাঁর অবসরের ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু, একবছর পরে জস বাটলারের নেতৃত্বাধীন ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ দলের হয়ে তাঁকে খেলতে দেখা গিয়েছে।
তবে, রোহিত- 'বোল দিয়া সো বোল দিয়া!' এককথার মানুষ, তাই আফ্রিদিদের পথ মাড়াতে নারাজ। শুধু তাই নয়, রোহিত জানাচ্ছেন যে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট। কিন্তু, প্রশ্ন উঠছে যে ফর্মে থাকা রোহিত আর টি২০ খেলবেন না কেন? ভারতীয় দলের অধিনায়ককে যাঁরা কাছ থেকে চেনেন, তাঁরা মনে করেন যে, অনেকেই তাঁদের নিজস্ব শর্তের বাইরে যেতে পারেন না। রোহিত সেই রকমই একজন। কুমার সাঙ্গাকারা এবং মাহেলা জয়াবর্ধনে যেমন ২০১৪ সালে অবসর নিয়েছিলেন। মাইকেল ক্লার্কই যেমন ২০১৫-য় অবসর নিয়েছিলেন। কিন্তু, বিশ্বকাপ জয়ের পর অবসরের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ অনেকেরই থাকে না। রোহিত সেই সুযোগ পেয়েছেন। আর তাই তা হারাতে নারাজ। ২০২৪ টি২০ বিশ্বকাপ জেতার পর, গোটা ভারত সেই ট্রফিজয় উদযাপন করেছে। তার মধ্যেই রোহিত আর কোহলি ফরম্যাট থেকে তাঁদের অবসরের ঘোষণা করেছেন।
এই ব্যাপারে রোহিত বলেছেন, 'বিশ্ব ক্রিকেটে অবসরের ধারণাটা একটু রসিকতায় পরিণত হয়েছে। কেউ অবসর ঘোষণা করে আবার খেলার মাঠে ফিরে আসেন। যদিও ভারতে এমনটা হয়নি। আমি দেখছি, বিদেশের খেলোয়াড়রা অবসরের ঘোষণা করছেন। আবার, ফিরে আসছেন। আপনি বুঝতে পারবেন না যে, খেলোয়াড়টি আসলে অবসর নিয়েছে কি না! আমি কিন্তু, আমার সিদ্ধান্তে অটল।'
আরও পড়ুন- শিব-হনুমানের ম্যাজিকেই ভারত জিতেছে বিদেশে! ঈশ্বর ভক্তিতে গা কাঁপানো অভিজ্ঞতা গম্ভীর-কোহলির
ভারত অধিনায়ক তাঁর টি২০ কেরিয়ারের শেষ ফরম্যাটে দেশের সর্বোচ্চ রান-সংগ্রহকারী হিসেবে নিজের নাম ইতিহাসে তুলে ফেলেছেন। ১৫৯ ম্যাচে ১৪০ স্ট্রাইক রেটে তাঁর রান ৪,২৩১। টি২০ ফরম্যাটে রোহিতের পাঁচটি সেঞ্চুরি আছে। যা, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে যৌথ-সর্বোচ্চ। রোহিতের কাছে ২৯ জুলাই যেন জীবনের একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হওয়া। ১৭ বছর আগে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতের ঐতিহাসিক ২০০৭ টি২০ বিশ্বকাপে যাত্রা শুরু করেছিলেন। সেবার ট্রফি তুলেছিলেন দলের সদস্য হিসেবে। এবার তিনি অধিনায়ক হিসেবে রৌপ্যপাত্র তুললেন। সত্যি বলতে, এর চেয়ে বেশি উপযুক্ত বিদায় কেউ চাইতেই পারে না। ২০২২ টি২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ভারতের বিদায়ের পরে দেখে মনে হয়েছিল যেন রোহিত এবং কোহলি শেষ হয়ে গেছেন। কিন্তু, তাঁরা ফর্মে ফিরে এসেছেন। রাজকীয়ভাবে নিজেদের সাফল্যকে তুলে ধরে টি২০ আন্তর্জাতিক ফরম্যাটকে বিদায় জানিয়েছেন। এটাই তাঁদের জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।