Advertisment

সেদিন ব্য়াট হাতে রূপকথা লিখেছিল দুই কিশোর

একজনের বয়স ১৬, আরেক জনের ১৪। বড়া পাও খেতে খেতেই পরের দিনের হেভিওয়েট ম্য়াচের কথা ভাবছিল তারা। আজ থেকে ঠিক ৩০ বছর আগে। কী হল সে ম্যাচে?

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Cricket Player Vinod Kambli and Sachin Tendulkar. Express archive photo

শচীন তেনডুলকর একবার পাকিস্তানের হয়ে খেলেছিলেন

দুই কিশোর, হরিহর আত্মা বা জিগরি দোস্তও বলা চলে। একজনের বয়স ১৬, আরেক জনের ১৪। বড়া পাও খেতে খেতেই পরের দিনের হেভিওয়েট ম্য়াচের কথা ভাবছিল তারা। আজ থেকে ঠিক ৩০ বছর আগের ফেব্রুয়ারি মাসের ঘটনা সেটা। দুই কিশোরের নাম শচীন তেন্ডুলকর ও বিনোদ কাম্বলি। যাঁদের পরিচয় দেওয়ার জন্য় একটি অতিরিক্ত শব্দ খরচ করাও বাতুলতা। গোটা দেশে তাঁদেরকে চেনে একডাকেই।

Advertisment

আরও পড়ুন-হ্যাপি বার্থডে শচীন: মাস্টার ব্লাস্টারের ৪৫তম জন্মদিনের কিছু ছবি

সেদিন মুম্বইয়ের আজাদ ময়দানে শচীন-বিনোদের যুগলবন্দি ব্য়াট হাতে বসন্ত এনেছিল হ্য়ারিস শিল্ড ক্রিকেটের সেমিফাইনালে। রেকর্ডের রঙে তাঁরা রাঙিয়েছিলেন ক্রিকেট বিশ্বকে। পার্টনারশিপের এমন ইতিহাস লিখেছিলেন দুই মুম্বইকর, যা আজও আলোচনার বিষয়বস্তু। রানের হাত ধরেই রেকর্ড বুকে নিজেদের নাম সোনার হরফে খোদাই করেছিলেন শচীন-কাম্বলি। গড়েছিলেন ৬৬৪ রানের অপরাজিত পার্টনারশিপ, যা আজও অক্ষত। যে কোনও ফর্ম্য়াটের ক্রিকেটে আজও এটাই সর্বোচ্চ রানের যুগলবন্দি।

দিনটা ছিল ১৯৮৮-র ২৩ ফেব্রুয়ারি। সারদাশ্রম বিদ্য়ামন্দির স্কুলের হয়ে মাঠে নেমেছিলেন শচীন-কাম্বলি। শেফিল্ড ক্রিকেটে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে শচীনদের প্রতিপক্ষ ছিল সেন্ট জেভিয়ার্স (ফোর্ট)। শচীনের টিম টস জিতে ব্য়াটিং নিয়েছিল। দলের ওপেনাররা ক্রিজে এলেন আর ফিরে গেলেন। এরপরই ব্য়াট হাতে মাঠে নেমেছিলেন শচীন-কাম্বলি। প্রথম দিনের শেষে শচীন মাঠ ছেড়েছিলেন অপরাজিত ১৯২ রানে। কাম্বলি ছিলেন  ১৮২ রানে নট-আউট।

আরও পড়ুন-গলি ক্রিকেটে আচমকাই দেখা মিলল মাস্টারব্লাস্টারের

দ্বিতীয় দিন খেলা শুরুর আগে স্কোরবোর্ড দেখে শচীনদের কোচ রমাকান্ত আচারেকর ইনিংস ডিক্লেয়ারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সারদাশ্রম বিদ্য়ামন্দির স্কুলের ক্য়াপ্টেন শচীন সেকথায় কর্ণপাত করেননি। ব্য়াট না-থামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন  তিনি। ঘটনাচক্রে সেদিন মাঠে ছিলেন না আচারেকর স্য়ার। তাঁর নির্দেশ পালনের কাজটা দলের সহকারr কোচ লক্ষ্মণ চৌহানের উপরেই বর্তায়। কিন্ত শচীনদের ব্য়াট করা থেকে বিরত রাখতে তিনি অসমর্থ হন। শচীন-কাম্বলি মাঠে নেমেই গতদিনের মতো ব্য়াট হাতে আগুন ঝলসাতে থাকেন। তাঁদের চার-ছয়ের বন্য়ায় কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল জেভিয়ার্স। ইনিংস ডিক্লেয়ার করার নির্দেশ পাঠাতে একাধিকবার মাঠে টিমের দ্বাদশ ব্যক্তিকে পাঠিয়েও ব্য়র্থ হন চৌহান। কিন্তু শচীন-কাম্বলি দুজনেই বোলারদের ধ্বংসলীলায় এতটাই মত্ত ছিলেন যে, কোনও কথা শোনারই প্রয়োজন মনে করেননি তাঁরা। ব্য়াট করেই যাচ্ছিলেন।

পরিস্থিতি সামাল দিতে চৌহান পৌঁছে গিয়েছিলেন আচারেকরের অফিসে। সেখানে গিয়ে তিনি জানান যে, শচীন-কাম্বলি দু’জনেই ব্য়ক্তিগত ট্রিপল সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন। তাও তাঁরা ব্য়াট ছাড়ার কথা ভাবছেন না। শচীন-কাম্বলিরা আচারেকরের সঙ্গে ফোনে কথাও বলেন। কাম্বলি আচারেকরকে বলেন যে, তিনি ৩৫০ রান থেকে শুধুমাত্র এককদম দূরে। কিন্তু আচারেকর শচীন-কাম্বলিকে দুরন্ত ইনিংসের জন্য় ধন্য়বাদ জানিয়েই  সাফ বলে দেন যে, ইনিংস এখনই ডিক্লেয়ার করতে হবে। আর একটা কথাও শুনবেন না তিনি। শেষ পর্যন্ত শচীন ৩২৬-এ ও কাম্বলি -৩৪৯ রানে অপরাজিত থাকা অবস্থায় ইনিংস ডিক্লেয়ার করা হয়। ৬৬৪ রানের পার্টনারশিপ গড়ে নয়া ইতিহাস লেখেন তাঁরা। যে কোনও ফর্ম্য়াটের ক্রিকেটে আজও এটাই সর্বোচ্চ রানের যুগলবন্দি। এই ম্য়াচে কাম্বলি বল হাতেও কামাল করেছিলেন। ৩৭ রানে ৬ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন। ১৯১৩-১৪-তে অস্ট্রেলীয় ব্য়াটসম্য়ান টি প্যাটন ও এ রিপনের ৬৪১ রানের বিশ্বরেকর্ড ভাঙেন তাঁরা।

শচীন-কাম্বলির জন্য় সেই ম্য়াচে সবচেয়ে করুণ অবস্থা হয়েছিল অমোল মজুমদারের। দলের এই ব্য়াটসম্য়ান টানা দু’দিন প্য়াড-আপ করে বসেছিলেন। কিন্তু মাঠে নামার আর সুযোগ পাননি। শচীনদের ব্য়াটিংয়েই ইঙ্গিত ছিল যে, তাঁরা আর আউট হবেন না। এই ইনিংসের পরেই শচীনের মুম্বই ও ভারতীয় দলের জন্য় দরজা খুলে গেল। বাকিটা ইতিহাস। বাইশ গজ পেয়ে গেল ক্রিকেট ঈশ্বরকে। আর তার সূত্রপাত হয়েছিল বছর তিরিশ আগের আজাদ ময়দানের এই ম্য়াচেই।  

Sachin Tendulkar Vinod Kambli
Advertisment