Advertisment

আইপিএল ২০১৮: স্যামসন-রানার চিরাচরিত দ্বৈরথেও অটুট বাবাদের বন্ধুত্ব

সনজু স্যামসন ও নীতীশ রানা, আইপিএল-এ একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু শুনলে অবাক হবেন তাঁদের বাবা একে-অপরের পুরনো দিনের বন্ধু।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
স্যামসন-রানার চিরাচরিত দ্বৈরথেও অটুট বাবাদের বন্ধুত্ব

স্যামসন-রানার চিরাচরিত দ্বৈরথেও অটুট বাবাদের বন্ধুত্ব

নিহাল কোশি

Advertisment

সনজু স্যামসন ও নীতীশ রানা, আইপিএল-এ একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী। রাজস্থান রয়্য়ালসের ব্যাটিংয়ের বড় ভরসা স্যামসন। পাশাপাশি উইকেটের পিছনেও তাঁর বিশ্বস্ত দস্তানা আশ্বস্ত করে দলকে।  অন্যদিকে কলকাতা নাইট রাইডার্সের অত্যন্ত কার্যকরী অলরাউন্ডার রানা। কিন্তু শুনলে অবাক হবেন, রানা ও স্যামসনের বাবা একে-অপরের পুরনো দিনের বন্ধু। তাঁদের সম্পর্ক আজও অটুট।

আইপিএল ২০১৮: ডিজে ব্র্যাভোর নতুন গান, পা মেলালেন কোহলি-ভাজ্জি-রাহুল

২৪ ঘণ্টা আগেই রাজস্থানের সোয়াই মানসিং স্টেডিয়াম দেখল কলকাতা-রাজস্থানের দ্বৈরথ। রাহানের রাজস্থানকে সাত উইকেটে হারিয়ে লিগ তালিকায় শীর্ষে চলে এল দীনেশের নাইটরা। এম্যাচে ব্যাটে-বলে ফের ছাপ রাখলেন রানা। ২৭ বলে ৩৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলার পাশাপাশি দু ওভার হাত ঘুরিয়ে দু উইকেটও পেলেন তিনি। হয়ে গেলেন ম্যাচের সেরা। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আট বলে সাত রান করেই আউট হয়ে যান স্যামসন।

প্রতিবেদনটি ইংরাজিতে পড়তে ক্লিক করুন

নীতীশের খেলা দেখতে তাঁর বাবা দারা সিং রানা জয়পুরের একটি হোটেলে ওঠেন। সেখানে গিয়েই ফোন করেছিলেন সনজুর বাবা বিশ্বনাথ স্যামসনকে। নীতীশের ভাবা ভেবেছিলেন যে, তাঁর বন্ধু বিশ্বনাথ স্যামসনও সম্ভবত এই শহরেই রয়েছেন। কিন্তু দারা জানতে পারেন, বিশ্বনাথের আসা সম্ভব হয়নি। সনজুর বাবা একজন প্রাক্তন ফুটবলার। এখন তিনি কোচিং করান। পেশার জন্য ছেলের খেলা দেখতে কেরল থেকে রাজস্থানে আসতে পারেননি তিনি। সেভেন-আ-সাইড ফুটবল টিমের দায়িত্বে থাকায় আটকে গিয়েছেন তিনি। দারা ভেবেছিলেন বন্ধুর সঙ্গে একসঙ্গে বসে গ্যালারিতে খেলা দেখতে দেখতে পুরনো দিনগুলোয় ফিরে যাবেন। কিন্তু আপাতত সে ইচ্ছা অসম্পূর্ণ থেকে গেল। যদিও দারা ছাড়ার পাত্র নন, বন্ধুকে দিয়ে প্রমিস করিয়ে নিয়েছেন যে, চলতি আইপিএল-এ  তাঁকে কেরল থেকে দিল্লিতে এসে একটা ম্যাচ দেখতেই হবে। সনজু বা নীতীশ যে কোনও একজনের খেলাতে হাজির থাকলেই হবে।

আইপিএল ২০১৮: কেন অরেঞ্জ ক্যাপ পরতে অস্বীকার করলেন কোহলি!

দারা বলছেন, “ আমি বিশ্বনাথকে বলেছি দিল্লিতে আসতে। নীতীশ বা সনজু যে কোনও একজনেরই খেলা দেখতে হবে ফিরোজ শাহ কোটলায়। আমাদের ছেলেরা যখন প্রথম ব্যাট ধরেছিল তখন থেকে একে-অপরকে চিনি। ঈশ্বরের কৃপায় দুজনেই খুব ভাল খেলছে। এটা অভিভাবকদের কাছে ভীষণ বিশেষ অনুভূতি। একমাত্র আমরাই ওদের শুরুর দিনগুলো দেখেছি। খুব কষ্ট করেছে।" চলতি আইপিএল-এ বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে স্যামসন ঝকঝকে আপরাজিত  ৯২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। তার পরের দিনই আবার রানা দিল্লির বিরুদ্ধে হাফ-সেঞ্চুরি করেন। ছেলেদের সাফল্যে বাবাদের মধ্যে শুভেচ্ছা জানিয়ে টেক্সট চালাচালিও হয়েছে।

আইপিএল ২০১৮: ফ্যানের বয়স ৯৩, শুধু শেহওয়াগের জন্য মাঠে এলেন

স্যামসন ও রানা পরিবারের সম্পর্ক আজকের নয়, প্রায় দেড় দশকের। দারার ছোট ভাই অনিল ও বিশ্বনাথ দিল্লি পুলিশে কনস্টেবলের চাকরি করতেন, অনিল ফাস্ট বোলারের পাশাপাশি একজন অলরাউন্ডার ছিলেন। অনিলের অধীনেই নীতীশ ক্রিকেট প্রশিক্ষণ নিতেন। বিশ্বনাথ তাঁর দুই সন্তান সনজু ও স্যালির মেন্টর ছিলেন। স্থানীয় ম্যাচে সাক্ষাৎ হত দুজনের। মূলত কিংসওয়ে ক্যাম্পেই অনিল-বিশ্বনাথের কথা হত, এটাই ছিল দিল্লি পুলিশের স্পোর্টিং হাব। অনিল এখন সাব-ইনস্পেকটর। বলছেন, “আমাদের প্র্যাকটিসের সময় দেখা হত। বিশ্বনাথ ফুটবল টিমের সদস্য ছিল। আমি ক্রিকেট খেলতাম। বেশিরভাগ দিনই আমি প্র্যাকটিসে আসতাম আর ও প্র্যাকটিস শেষ করে বেরিয়ে আসত। এরপর যখন আমাদের ছেলেরা নিজেদের রাজ্য় ও আইপিএল টিমের হয়ে খেলা শুরু করল, তখনই আমাদের বন্ধুত্ব নতুন করে শুরু হল।” ২০০৮-এ বিশ্বনাথ স্বেচ্ছাবসর নেন। দিল্লিতে বয়সভিত্তিক দলে সনজু সুযোগ না-পেয়ে প্রায় খেলাই ছেড়ে দিয়েছিলেন। তখনই বিশ্বনাথ ফিরে আসেন কেরলের ভিজিনজামে। দুই পরিবারের মধ্যে সংযোগটা কখনই হারায়নি। বিশ্বনাথ বলছেন, “আমি দিল্লিতে আসলেই রানা জি ও অনিল জি কে ফোন করতাম। গত বছর আমি ওদের বাড়িতে এসেছিলাম। দারুণ লাগল পুরনো দিনগুলো ফিরে পেয়ে। আমাদের কমন ফ্রেন্ড ও কলিগ রয়েছে। সুযোগ পেলেই আমরা গেটটুগেদার করি। ফুটবলও খেলি। সনজুও দিল্লিতে এলে রানাদের ফোন করে।”

আইপিএল ২০১৮: রায়নাকে ছাপিয়ে মগডালে কোহলি

সনজু শালিমার বাগের ডিএল ডিএভি মডেল স্কুলের অ্য়াকাডেমিতে যশপালের কাছে ট্রেনিং নিতেন। এলবি শাস্ত্রী ক্রিকেট অ্য়াকাডেমিতে রানার কোচ ছিলেন সঞ্জয় ভরদ্বাজ। বিশ্বনাথ আরও বলছেন, “সনজু-রানা দুজনেই সমবয়সী। উঠতি ক্রিকেটার হিসেবে দুজনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। কিন্তু কখনই সেটা অস্বাস্থ্যকর ছিল না।” দারা সিং জানালেন, “সনজু ও রানার পরিবার ও বন্ধুবান্ধবরা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। কিন্তু ক্রিকেটের ব্যাপারে দুজনেই প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতার। আমি বলব দুই পরিবারই প্রতিযোগী এক্ষেত্রে। আসলে আমাদের বন্ধুত্ব আমাদের ছেলেদের ক্রিকেটিয় যাত্রার উপরেই দাঁড়িয়ে।” সনজু-রানার প্রতিদ্বন্দ্বিতা ফের একবার দেখা যাবে আগামী ১৫ মে। ম্য়াচটা হবে ইডেনে।

অনুলিখন: শুভপম সাহা

Rajasthan Royals Kolkata Knight Riders
Advertisment