আমার গত সপ্তাহের কলামে লিখেছিলাম যে, জসপ্রীত বুমরা চিকিৎসার জন্য় বিদেশে যাবেন। তার সঙ্গে এও বলেছিলাম যে, বিদেশের ফিজিওর সঙ্গে ভারতীয় ফিজিও-র যোগাযোগ থাকবে। পাশাপাশি আরও একটি দুঃখের খবর পেলাম, হার্দিক পাণ্ডিয়াও হয়তো চোটের জন্য় পরবর্তী সিরিজ খেলবেন না। তাঁকেও চিকিৎসার জন্য় বিদেশে যেতে হতে পারে। আমি এও বলেছিলাম যে, চিকিৎসা ও ওষুধপত্রের দিক থেকে ভারত এখন অনেক উন্নত। কিন্তু বিশ্বের টপ অ্যাথলিটরা প্রাথমিক পরামর্শ বা অপারেশনের ক্ষেত্রে পশ্চিমী দেশগুলির ওপরেই নির্ভরশীল। ক্রিকেটের তিন ফর্ম্য়াট মিলিয়ে বুমরা ভারতীয় দলের সম্পদ। ফলে তাঁর ক্ষেত্রে বিসিসিআই কোনও ঝুঁকি নেবে না।
ভারত নিজেদের মাটিতে এই টেস্ট সিরিজ শুরু করল। অতীতে দুই দল এদেশে ১২টি টেস্ট খেলেছে। জয়-পরাজয়ের রেকর্ড ৫-৫, দুটি ড্র। দক্ষিণ আফ্রিকা ১৯৯৯-২০০০ সিরিজে ভারতকে হারিয়েছিল। এরপর ২০০৮-০৯ সিরিজ ড্র হয়। কিন্তু ২০১৫-১৬ তে ভারতের হাতে ৩-০ পর্যুদস্ত হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। যদিও এই দক্ষিণ আফ্রিকা দলে বিশ্ববন্দিত তারকা খেলোয়াড় নেই। হাশিম আমলা, এ বি ডি ভিলিয়ার্স, ডেইল স্টেইন, মর্নি মর্কেল সম্প্রতি অবসর নিয়েছেন। তবে ওরা কিন্তু আস্তে আস্তে নতুন দল তৈরি করছে। ব্য়াটিংটা আপাতদৃষ্টিতে যথেষ্ট ভাল লাগছে। আইদেন মাকরম, ডিন এলগার, টেম্বা বাভুমা, কুইন্টন ডি কক, অধিনায়ক ফাফ দু প্লেসি, রাসি ভ্য়ান ডার ডুসেন। যিনি সবচেয়ে ভাল স্পিন খেলেন।
আরও পড়ুন: বুমরা-বিহীন দলে কি পরীক্ষার জায়গা রয়েছে?
বোলিংটাও ওদের বেশ ব্য়ালান্সড দেখাচ্ছে। আছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার কাগিসো রাবাদা। সঙ্গে রয়েছেন নতুন বোলার অ্যানরিক নোকিয়া। যিনি ৯০ মাইল বেগে বল করতে পারেন। আন্দিলে ফেহলুকোয়ায়েও, ডোয়েন প্রিটোরিয়াস, ভার্নন ফিল্যান্ডার ও স্পিনার কেশব মহারাজ। যদিও বাঁ-হাতি স্পিনার বিয়ন্ড ফরচুন থাকলে আরও ভাল হতো। ধীরে ধীরে এই দলটি পায়ের তলার জমি খুঁজে পাচ্ছে তারকা ক্রিকেটাররা অবসর নেওয়ার পর। এই দক্ষিণ আফ্রিকা অবশ্য শ্রীলঙ্কার কাছে হোম সিরিজ খুইয়েছে, কিন্তু শক্তিশালী পাকিস্তানকে ৩-০ হারিয়েছে তারা।
বিশ্ব টেস্ট চ্য়াম্পিয়নশিপে ভারতের এটি দ্বিতীয় সিরিজ। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানো সহজ হবে না। যদি না উইকেট ঘূর্ণী হয়। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আশা রাখছি। রেকর্ডও সেটাই বলছে। ভারতীয় দলে তিনটি পরিবর্তন এসেছে - কে এল রাহুলের জায়গায় এসেছেন রোহিত শর্মা। ঋদ্ধিমান সাহা এসেছেন ঋষভ পন্থের বদলে। অন্যদিকে রবিচন্দ্রন অশ্বিন ফিরেছেন। আমি অত্য়ন্ত খুশি বাংলার ঋদ্ধি ফেরায়। তবে কেউ কি বলতে পারবেন, অশ্বিন কেন দল থেকে বাদ গিয়েছিলেন? ঘরের মাঠে ওঁর রেকর্ড দেখলে বোঝা যাবে, সবার চেয়ে উনি এগিয়ে। তবুও বলব, বেটার লেট দ্য়ান নেভার। অশ্বিন ফেরায় ভারতের বোলিং অ্যাটাক স্বচ্ছন্দ ও ব্য়ালান্সড লাগছে আমার।
রোহিত দলে ফিরে সেঞ্চুরি করেই নিজের জাত চেনালেন বিশাখাপত্তনমে। হতে পারে প্র্যাকটিস ম্য়াচে রান পান নি তিনি। কিন্তু বুঝিয়ে দিলেন, তিনি শুধুই সাদা বলের সুলতান নন। রোহিত যখন দল থেকে বাদ পড়েন, ওঁর গড় ছিল ৩৯.৬২। যে কোনও ক্রিকেটারই সীমিত ওভারের ফর্ম্যাটে বা আইপিএল-এ সফল হলেও সবসময় চান টেস্ট খেলতে। খেলোয়াড়ের জন্য় সেটাই আসল ক্রিকেট। অভিজ্ঞ রোহিতও টেস্টে সুযোগ না পাওয়ায় হাঁকপাক করছিলেন। একদিনের ক্রিকেটে তিনি এমন পারফর্ম করেছেন যে বলার ভাষা নেই। বিশ্বকাপে পাঁচটি সেঞ্চুরি করেন, নির্বাচকদের বাধ্য করেন তাঁকে দলে নিতে। আমি আশা করব, তাঁর টেস্ট জীবন দীর্ঘায়িত হোক, তাতে ভারতেরই মঙ্গল।
আরও পড়ুন: ক্রিকেটে আর ‘আম্পায়ার্স কল’ রাখার অর্থ কী?
যেহেতু দোহায় বিশ্ব অ্যাথলেটিকস চ্য়াম্পিয়নশিপ চলছে, সেহেতু পরিশেষে কিছু কথা বলতেই হবে। বিশেষত তাঁদের কথা বলব যাঁরা মা হওয়ার পর ওখানে ইতিহাস লিখেছেন। প্রথমেই বলব জামাইকার ট্যাক অ্যান্ড ফিল্ড অ্যাথলিট শেলি-অ্যান ফ্রেজার-প্রাইসের কথা। মা হওয়ার পরেই চতুর্থবার তিনি একশ মিটারে সোনা পেলেন। দেখে অত্য়ন্ত ভাল লাগল, ফ্রেজার-প্রাইস ভিকট্রি ল্য়াপটা নিলেন দু'বছরের সন্তান জিওনকে নিয়ে। তিনিই প্রথম অ্যাথলিট যিনি মা হওয়ার পর ১০০ মিটারে বিশ্ব চ্য়াম্পিয়ন হলেন। ১০.৭১ সেকেন্ডে এই দৌড় জিতেছেন তিনি। একই সময় নিয়েছিলেন ২০১৩ সালে। সেবার মস্কোতে বিশ্ব চ্য়াম্পিয়ন হয়েছিলেন তিনি। ভুললে চলবে না, দুটো অলিম্পিক স্বর্ণপদকও আছে তাঁর ঝুলিতে।
মার্কিনি ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড অ্যাথলিট অ্য়ালিসন মিশেল ফেলিক্সের কথাও বলতেই হবে। কিংবদন্তি স্প্রিন্টার উসেইন বোল্টের রেকর্ড ভাঙলেন তিনি ১২টি সোনা জিতে। সব মিলিয়ে ২৬টি পদক জিতে নতুন বিশ্বরেকর্ড করলেন অ্য়ালিসন। ওঁর ৬টি অলিম্পিক সোনাও রয়েছে। অন্যদিকে চায়নার লিউও গিয়েছিলেন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে ২০১৭-১৮'র মরসুমে। কিন্তু ফিরে সোনা জিতলেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে।