লিওনেল মেসি এবং নেইমার দ্য জুনিয়র আজ নিছকই খেলোয়াড় নন। ফুটবলটাকে তাঁরা একপ্রকার শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন। আর্জেন্তাইন রাজপুত্র এবং ব্রাজিলিয়ান ওয়ান্ডার কিডের ফুটবল দেখলে মনে হয় তাঁরা যেন ছবি আঁকছেন সবুজ ক্যানভাসে। ফুটবলের সঙ্গে কথা বলতে পারেন তাঁরা। আর মেসি-নেইমারকে ভালবেসেই এক বঙ্গজ সন্তান নিজের স্পিড ড্রয়িং স্কিলকে তুলে ধরছেন ইউটিউবে। তাঁর স্কেচে সাদা কাগজে প্রাণ পাচ্ছে এলএম টেন এবং এনজে টেন।
বারাসাতের নব পল্লীর শতানিক দাশগুপ্তের সঙ্গে অনেকেরই হয়ত পরিচয় নেই। কিন্তু আগামী দিনে ইউটিউব স্টার হয়ে ওঠার যাবতীয় সম্ভাবনা রয়েছে বছর বাইশের এই যুবকের মধ্যে। প্রথমে ছবি এঁকে নিজের ফেসবুক পেজেই পোস্ট করতেন শতানিক। বছরখানেক হল নিজের প্রতিভা তুলে ধরার জন্য ইউটিউবের মঞ্চকে বেছে নিয়েছেন তিনি। স্কেচে প্রথম পেনসিলের টান থেকে ফাইনাল টাচ, সবটাই দারুণ দক্ষতায় মোবাইলে এডিট করে মেসি-নেইমারের খেলার ক্লিপিং-এর সঙ্গে মিশিয়ে দিচ্ছেন। শতানিকের কাজ অনেকেরই বেশ ভাল লাগতে শুরু করেছে। তিনি বলছেন, "আমি যেভাবে ছবি এঁকে ইউটিউবে পোস্ট করছি, সেরকমটা খুব একটা ইন্ডিয়াতে দেখিনি। বিদেশে কিন্তু এটা ভীষণ জনপ্রিয়। আপাতত ইউটিউবে ভিউয়ার্স বাড়াতে চাই।"
আরও পড়ুন: চা, রুটি বানানোর ফাঁকে হাল্কা ড্রিবলিং, সঞ্জীবও বলতে পারেন, রোনাল্ডোও
মেসি-নেইমার এবং ইব্রাহিভোমিচের ছবিতেই নিজেকে বেঁধে রাখেননি শতানিক। হিউ জ্যাকম্যানের মত হেভিওয়েট হলিউড স্টারের ছবিও রয়েছে তাঁর ইনস্টাগ্রামে। সুপারম্যান এবং ব্যাটম্যানের মত সুপারহিরোদের নিয়েও কাজ করছেন শতানিক। যদিও এসবকেই ছাপিয়ে তাঁর মেসি বন্দনা।
২০০৮-০৯ থেকেই মেসিকে ভালবাসেন বার্সেলোনার এই ডাই-হার্ড ফ্যান। নেইমারের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল বলেই জানালেন শতানিক। আইসল্যান্ডের বিরুদ্ধে মেসির পেনাল্টি মিস নিয়ে যখন সারা পৃথিবী তোলপাড়, তখন জ্বলে উঠল শতানিকের তুলি। ফের মেসির একটা স্কেচের ভিডিও ইউটিউবে পোস্ট করে তিনি বার্তা দিলেন, "লিওনেল মেসি উইল রাইজ এগেইন।" মেসির পেনাল্টির প্রসঙ্গে শতানিক বললেন, "এরকম তো হতেই পারে। কিন্তু মেসিই বিশ্বকাপের দাবিদার।"
শতানিকের ছবি দেখলে বিশ্বাস হয় না যে তিনি কখনো ছবি আঁকা শেখেননি। অবাক হতে হয় যখন তিনি বলেন, “ছোটবেলা থেকেই আঁকছি। কিন্তু কখনো শিখিনি। আমার দিদি আঁকা শিখত, ওকে দেখেই ভালোলাগাটা জন্মায়।" বারাসতের এ পি সি কলেজ থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক হওয়ার পর শতানিক গ্রাফিক্স এবং ওয়েব ডিজাইনের কোর্স করেন। কিন্তু এই শিক্ষাটাও তাঁর কাছে কোথাও একঘেয়ে লাগছিল। ওসবের পাট তুলে দিতে দু’বারও ভাবেননি তিনি।
পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া সরকারি চাকরির উপদেশও কানে নেন না শতানিক। ক্রিয়েটিভ কিছুই করতে চান তিনি। আপাতত তাঁর একটাই ফোকাস, ইউটিউবের মঞ্চ থেকে জনপ্রিয়তা অর্জন। স্বপ্ন দেখেন একটাই। কোনদিন যেন তাঁর আঁকা ছবি পৌঁছে যায় মেসি-নেইমারের হাতে। বিশ্বকাপের গল্পগুলোতেও এভাবেই থেকে যাবেন শতানিকরা। সৃষ্টিশীলতার হাত ধরেই ফুটে উঠবে ফুটবলের আবেগ।