সৌরভকে সরানোর নেপথ্য কান্ডারি হিসাবে তিনি হঠাৎ আলোচনায়। নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের প্রবল বিরোধিতাতেই সৌরভের আরও একবার বোর্ড সভাপতি পদে থাকার স্বপ্ন অপূর্ণ রয়ে গেল। দ্য টেলিগ্রাফ-এর প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, নয়া দিল্লিতে বোর্ডের নির্বাচনের আগে যে বৈঠক হয়েছিল, সেখানেই বোর্ডে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন মহারাজ।
সুপ্রিমকোর্টের কুলিং অফ নিয়মে শিথিলতার পরে সৌরভ কার্যত নিশ্চিত ছিলেন যে তিনিই আরও একবার বোর্ডের মসনদে বসবেন। তবে গত মঙ্গলবারের আচমকা বৈঠকে সমস্ত পরিস্থিতি ইউ-টার্ন নিয়ে নেয়। আচম্বিতে অবস্থা বদলের আন্দাজ আগে থেকে পাননি সৌরভ। সেই বৈঠকেই সৌরভকে চেয়ার খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। বোর্ডের তরফে কোনও ব্যাকিং না পেয়ে বৈঠকেই মুষড়ে পড়েন সৌরভ।
আরও পড়ুন: আর বোর্ড সভাপতি নন সৌরভ! BCCI প্রেসিডেন্ট হিসেবে কত বেতন পেতেন দাদা
আর টেলিগ্রাফ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌরভের বিরূদ্ধে বোর্ডের বৈঠকে সবথেকে সরব ছিলেন নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন। তিনি সৌরভ-কে সরাসরি নন-পারফর্মার বলে দেন। চেন্নাই সুপার কিংসের মালিক শ্রীনিবাসন বোর্ডের বৈঠকে এসেছিলেন তামিলনাড়ু ক্রিকেট সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে। বোর্ডের ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী প্রেসিডেন্ট হিসেবে এমনিতেই তিনি বিসিসিআইয়ের রাজনীতি সম্পর্কে ভালোরকম ওয়াকিবহাল। একসময় বোর্ড চলত তাঁর অঙ্গুলিলেহনে। এবারেও সৌরভকে সরিয়ে বোর্ড রজার বিনির নাম প্রস্তাব করেন তিনি। যাতে সায় দেন বোর্ডের বাকি সদস্যরা। তারপরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বলাবলি শুরু হয়ে যায়, সৌরভকে সরিয়ে আসল মাস্টারস্ট্রোক দিয়ে গেলেন শ্রীনিবাসনই।
আরও পড়ুন: এই চার বিতর্কেই হয়ত বোর্ডে ভরাডুবি সৌরভের! ছেড়ে কথা বললেন না শ্রীনিবাসনও
সৌরভের বোর্ডে মেয়াদকাল ছিল ঘটনাবহুল। একাধিক ক্ষেত্রে বোর্ডে নেতিবাচক কারণে শিরোনামে উঠে এসেছে। সৌরভ নিজে বোর্ড প্রেসিডেন্ট হয়েও বোর্ডের স্পনসর সংস্থার বিরোধী কোম্পানির ব্র্যান্ড এন্ডোর্সমেন্ট করেছেন। এছাড়াও আইপিএল-এ দিল্লি ক্যাপিটালস দলের মালিক গোষ্ঠী জেএসডব্লিউ গ্রুপের ব্র্যান্ড এমবাসাডর হওয়ার পরে স্বার্থ-সংঘাতের ইস্যুতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। প্রশ্ন ওঠে, বোর্ড প্রেসিডেন্ট হয়েও কীভাবে একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি পক্ষের হয়ে পরোক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে পারেন তিনি। সেই সঙ্গে এটিকে মোহনবাগানের বোর্ড মেম্বার পদে থাকায় ফের একবার স্বার্থ সংঘাতের প্রশ্ন ওঠায়, তিনি আইএসএল ফ্র্যাঞ্চাইজির সংস্রব ছাড়তে বাধ্য হন।
আরও পড়ুন: সৌরভকে সরিয়ে বোর্ডের ক্ষমতায় রজার বিনি! প্রকাশ্যেই আনন্দে আত্মহারা রবি শাস্ত্রী
আইপিএলের সময় যেভাবে করোনায় ছারখার হয়ে গিয়েছিল টুর্নামেন্ট, তাতে সৌরভের বোর্ড প্রশ্নের মুখে পড়ে। তবে বোর্ডে সৌরভ জমানার সবথেকে বিতর্কিত বিষয় ছিল বিরাট কোহলির সঙ্গে সংঘাত। সৌরভ জানিয়েছিলেন, টি২০ নেতৃত্ব না ছাড়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল বিরাট কোহলিকে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে রওনা হওয়ার ঠিক আগেই কোহলি প্রকাশ্যে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বলে দেন, একবারের জন্যও তাঁকে নেতৃত্ব না ছাড়ার অনুরোধ করা হয়নি। এতেই বোর্ডের সঙ্গে কোহলির টেনশনে আবহ তৈরি হয়।
ঋদ্ধিমান সাহাও প্রকাশ্যে মহারাজের বিপক্ষে মুখ খোলেন। সবমিলিয়ে টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরিই ছিল, যা বোর্ড মিটিংয়ে ঝড় হয়ে আছড়ে পড়ে সৌরভের বিরুদ্ধে।