দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের আপত্তি সত্ত্বেও সৌরভকে জাতীয় দলে ফেরানো হয়েছিল। বিস্ফোরক এমন কাহিনী খুল্লামখুল্লা জানিয়ে ফের বিতর্ক তৈরি করলেন গ্রেগ চ্যাপেল। প্রাক্তন ভারতীয় কোচ।
নিজে নতুন বই প্রকাশ করেছেন 'নট আউট'। সেই বইয়েই ফের একবার চাঞ্চল্যকর ঘটনা সামনে আনলেন চ্যাপেল। জানালেন, "২০০৫-এ আমার ভারতীয় কোচিংয়ের শুরুর দিকে শ্রীলঙ্কা সফরে যেতে হয়েছিল। ত্রিদেশীয় সেই সেই সিরিজে স্লো ওভার রেটের কারণে নির্বাসনে ছিল সৌরভ। সেই সময় বিসিসিআইয়ের প্রভাবশালী কর্তা ছিলেন জগমোহন ডালমিয়া। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন- গ্রেগ তুমি কি চাও সৌরভ এই ট্যুরে যাক? সেটা আমি ব্যবস্থা করতে পারি। আমার রিপ্লাই ছিল- নিয়মের বাইরে গিয়ে কিছু করা বোধহয় ঠিক হবে না। তাছাড়া দ্রাবিড়কেও এই সুযোগে দেখে নেওয়া যাবে। অন্যান্য অপশন নিয়েও সেই মত প্ল্যানিং করা যাবে। আমায় বক্তব্যে সন্তুষ্ট হন ডালমিয়া। আমরাও সেই সফরে সৌরভকে ছাড়া খেলতে নামি।"
আরও পড়ুন: বেনজির ঘটনা টিম ইন্ডিয়ায়! হার্দিককে দেশে ফেরাতে চেয়েছিলেন নির্বাচকরা, আটকান ধোনি
এরপরে বিস্ফোরক ঘটনা সামনে এনে অজি কোচ বলে দেন, সফরের মাঝপথে দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের আপত্তি সত্ত্বেও জোর করে ঢোকানো হয় সৌরভকে। "সৌরভকে ছাড়া দল আমূল বদলে গিয়েছিল। তবে সফরের মাঝপথে ফের একবার সৌরভের নির্বাসন মিটে যাওয়ায় দলে জায়গা পাওয়ার দাবিদার হয়ে ওঠে ও। সেই সময় কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে আলোচনা করি, সৌরভের প্রত্যাবর্তন নিয়ে। সেই সময় সকলেই সাফ জানিয়েছিল, ওঁরা সৌরভকে ফেরত চায় না। তা স্বত্ত্বেও নির্বাচকরা সৌরভকে নিয়ে আসে।" জানিয়েছেন চ্যাপেল।
জন রাইট জমানা শেষ হয়ে যাওয়ার পরে ২০০৫-এ গ্রেগ চ্যাপেল ভারতীয় জাতীয় দলের দায়িত্বে আসেন। দু বছর ভারতীয় দলের কোচ থাকাকালীন একাধিকবার বিতর্কের শিরোনাম হয়েছেন কিংবদন্তি অস্ট্রেলীয়। সৌরভ তো বটেই দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদেরও বিরাগভাজন হন তিনি। ভারতের দায়িত্ব ছাড়ার পরে সৌরভের দায়বদ্ধতা, নেতৃত্ব দেওয়ার ধরণ নিয়ে একাধিকবার সরব হয়েছেন চ্যাপেল।
আরও পড়ুন: আস্থাই নেই শার্দূলে! কিউয়ি ম্যাচে ভারতের দল গঠনে ব্যাপক বিস্ময়, কেমন হচ্ছে একাদশ
কয়েকদিন আগে একইভাবে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে চ্যাপেল জানান, সৌরভই তাঁকে ভারতের হেড কোচ হতে সাহায্য করেন। তারপরে দলে প্রতিরোধের মুখে পড়ে দায়িত্ব ছাড়তে বাধ্য হন তিনি।
ক্রিকেট লাইফ পডকাস্টে চ্যাপেল খোলাখুলিভাবে জানিয়েছেন, "সৌরভ প্রথম আমাকে ভারতে কোচিং করানোর প্রস্তাব দেয়। আমার কাছে সেই সময় একাধিক প্রস্তাব ছিল। তবে যেহেতু জন বুকানন অস্ট্রেলীয় দলের হেড কোচ ছিল, তাই ঠিক করি বিশ্বের অন্যতম ক্রিকেট পাগল দেশে কোচ হয়ে যাব। সেই সময় সৌরভ ক্যাপ্টেন ছিল। আমিই যেন কোচ হই, সেই বিষয়টা ও-ই নিশ্চিত করেছিল। তবে ভারতে কোচিং করানো সবদিক থেকে চ্যালেঞ্জিং ছিল। সকলের প্রত্যাশা ছিল হাস্যকর রকমের। অনেকের আবার সৌরভের ক্যাপ্টেন হওয়া নিয়ে আপত্তি ছিল। ও একদমই পরিশ্রম করতে চাইত না। নিজের খেলার উন্নতি করতেও সমস্যা ছিল ওঁর। ও স্রেফ দলের ক্যাপ্টেন হতে চাইত, যাতে সবকিছু ওঁর নিয়ন্ত্রণে থাকে।"
সৌরভ অবশ্য পাল্টা এক বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে গিয়ে স্বীকার করে নেন, চ্যাপেলকে কোচ করে আনাটাই তাঁর ভুল ছিল। "একসময় কোচ বাছাইয়ের স্বাধীনতা ছিল আমার। ২০০৫-এ সেই সুযোগ হারিয়েছি। পুরো দায়িত্ব পেয়ে লন্ডভন্ড করে ফেলেছিলাম। সেই দায়িত্ব আমাকে আবার দেওয়া হয়েছে। আশা করি, অতীতের সেই ভুল সংশোধন করতে পারব। আমাকে সাহায্য করার জন্য রয়েছে শচীন, ভিভিএস, বিসিসিআই সভাপতি এবং সচিব। একসঙ্গে আমরা সঠিক লোককেই কোচের চেয়ারে বসাব।" ২০১৬ এমনটা জানিয়েছিলেন সৌরভ।
নিজের বই নট আউটে কেবল মাত্র ভারতে কোচিং নয়, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার বিষয়েও আলোকপাত করেছেন গ্রেগ চ্যাপেল। দক্ষিণ আফ্রিকায় অস্ট্রেলিয়া দলের বল বিকৃতি কাণ্ডও তুলে ধরেছেন তিনি।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন