বোর্ডের গদি থেকে বিদায় ঘটছে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের। বর্তমান থেকে একধাক্কায় বোর্ডে প্রাক্তন হয়ে গেলেন আইকনিক ক্রিকেটার। ১৮ অক্টোবর এজিএম-এ সরকারিভাবে সৌরভের বিদায় ঘোষণা করা হবে। সেই সঙ্গে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে রজার বিনির হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়া হবে।
সূত্রের খবর, মঙ্গলবার বোর্ডের মিটিংয়ের সময়েই সৌরভ বুঝে যান বোর্ড সভাপতি হিসেবে তাঁর আয়ুকাল খতম। বোর্ড মিটিংয়ে তাঁর কর্মপন্থার তুমুল সমালোচনা করা হয়। যাতে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন সৌরভ। এমনটাই খবর। সৌরভের সবথেকে বড় সমালোচক হিসাবে আবির্ভূত ঘটে শ্রীনিবাসনের। প্রশাসক সৌরভের বেশ কিছু স্ট্রাটেজি নিয়ে বোর্ডের অন্দরমহলে ক্ষোভ প্রকাশ্যে এসে পড়ে।
আরও পড়ুন: বোর্ডে তীব্র সমালোচিত সৌরভ! গদি হারিয়ে প্রকাশ্যেই ভেঙে পড়লেন মহারাজ
১) এন্ডোর্সমেন্ট: সৌরভ প্রেসিডেন্ট হয়ে বোর্ডেরই একাধিক স্পনসর সংস্থার কম্পিটিটির কোম্পানির এন্ডোর্সমেন্ট করতেন। যেমন ড্রিম ইলেভেন বোর্ডের স্পনসর হলেও সৌরভ মাই সার্কেলের বিজ্ঞাপন করেছেন।
২) স্বার্থ সংঘাত: বোর্ড সভাপতি হিসেবে একাধিকবার কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট-এ জড়িয়েছেন মহারাজ। এন্ডোর্সমেন্ট সংক্রান্ত বিষয়ে তো বটেই, সৌরভ বোর্ড সভাপতি হয়েও একটা সময় পর্যন্ত এটিকে মোহনবাগানের বোর্ড মেম্বার ছিলেন। তবে প্রশ্ন ওঠার পর তিনি সেই পদ থেকে সরে দাঁড়ান। এছাড়াও জেএসডব্লিউ সিমেন্টের ব্র্যান্ড এম্বাসাডরও হন সৌরভ বোর্ড সভাপতি থাকাকালীন। দিল্লি ক্যাপিটালস-এর মত একটি নির্দিষ্ট ফ্র্যাঞ্চাইজি গোষ্ঠীর মালিক পক্ষের হয়ে কীভাবে বোর্ড সভাপতি ব্র্যান্ড এমবাসাডরের মত ভূমিকা পালন করতে পারেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায়।
আরও পড়ুন: কোহলির ‘অভিশাপেই’ কি বোর্ডে ‘অপমানিত’ সৌরভ! লাগামছাড়া উল্লাস বিরাট-ভক্তদের
৩) আইপিএল বায়ো বাবল: আইপিএলের বায়ো বাবল করোনার সময়ে কার্যত 'ফুটো' হয়ে গিয়েছিল। করোনার সময়ে দেশেই আইপিএল আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বোর্ড। তবে অচিরেই সেই সিদ্ধান্ত বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে। মাঝপথে আইপিএলে একাধিক ফ্র্যাঞ্চাইজিতে করোনার প্রকোপ বাড়তে থাকায় শেষমেশ স্থগিত করে দেওয়া হয় আইপিএল। শেষে বছরের শেষদিকে আমিরশাহিতে বাকি আইপিএল আয়োজন করা হয়। গোটা ঘটনায় বোর্ডের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছিল।
আরও পড়ুন: সৌরভকে সরিয়ে বোর্ডের ক্ষমতায় রজার বিনি! প্রকাশ্যেই আনন্দে আত্মহারা রবি শাস্ত্রী
৪) বিরাট কোহলি এবং ঋদ্ধিমান সাহা ইস্যু: সৌরভের বোর্ড সভাপতি মেয়াদ পর্বে সবথেকে চ্যালেঞ্জিং বিষয় ছিল বিরাট কোহলি ইস্যু। সর্বসমক্ষে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া ইস্যুতে কোহলি এবং সৌরভ প্রকাশ্যেই পরস্পরবিরোধী মন্তব্য করেছিলেন। যার জল অনেকদূর গড়ায়। এরকম ঘটনা ভারতের ড্রেসিংরুমেট পরিবেশ অশান্ত করে তোলে।
একইভাবে ঋদ্ধিমান সাহাও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মন্তব্য করে বসেন। পরে বিতর্কের মুখে ঋদ্ধিমান বাংলা ছেড়ে ত্রিপুরা চলে যান।
সবমিলিয়ে গত তিন বছরে একের পর এক বিতর্কের ঘনঘটা যে সৌরভের চেয়ার নড়বড়ে করে দিয়েছিল, তা নিয়ে সন্দেহ নেই।