'গোটা দলের সামনে আমাকে এবং রাহুল দ্রাবিড়কে অপমান করে শ্রীসন্থ'

২০১৩ সালেই মুম্বই ইন্ডিয়ানসের বিরুদ্ধে একটি ম্যাচে বাদ পড়ার পর অভূতপূর্বভাবে ক্ষোভে ফেটে পড়েন শ্রীসন্থ, যে প্রতিক্রিয়ার কথা অনেকেই জানেন না।

২০১৩ সালেই মুম্বই ইন্ডিয়ানসের বিরুদ্ধে একটি ম্যাচে বাদ পড়ার পর অভূতপূর্বভাবে ক্ষোভে ফেটে পড়েন শ্রীসন্থ, যে প্রতিক্রিয়ার কথা অনেকেই জানেন না।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
'গোটা দলের সামনে আমাকে এবং রাহুল দ্রাবিড়কে অপমান করে শ্রীসন্থ'

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (আইপিএল)-এর সঙ্গে যুক্ত বেটিং কেলেঙ্কারির উপর নতুন করে আলোকপাত করলেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন 'মেন্টাল কন্ডিশনিং কোচ' প্যাডি আপটন, যিনি ২০১৩ সাল থেকে রাজস্থান রয়্যালসের দায়িত্বে রয়েছেন। ওই কেলেঙ্কারির কথা উঠে এসেছে তাঁর সম্প্রতি প্রকাশিত বই 'দ্য বেয়ারফুট কোচ'-এ।

Advertisment

২০১৩ সালেই মুম্বই ইন্ডিয়ানসের বিরুদ্ধে একটি ম্যাচে বাদ পড়ার পর অভূতপূর্বভাবে ক্ষোভে ফেটে পড়েন শ্রীসন্থ, যে প্রতিক্রিয়ার কথা অনেকেই জানেন না। ঘটনার পর বিলম্বিত বোধোদয় হয় আপটনের, এবং তিনি জানাচ্ছেন, শ্রীসন্থের এই প্রতিক্রিয়ার জেরেই তিনি আন্দাজ করেন যে শ্রীসন্থ এবং রাজস্থান রয়্যালসের অন্য দুই সদস্য অজিত চান্ডিলা ও অঙ্কিত চবনের মধ্যে সন্দেহজনক আঁতাত রয়েছে। উল্লেখ্য, চান্ডিলা ও চবনকে 'স্পট ফিক্সিং'-এর অপরাধে ২০১৩ সালে গ্রেফতার করা হয়।

আপটনের কথায়, ১৬ মে, ২০১৩ সালে ওই দুজনের গ্রেফতারির ২৪ ঘণ্টা আগে শ্রীসন্থকে "অভব্য আচরণের জন্য দল থেকে বরখাস্ত করে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়"। রাজস্থান রয়্যালসের কোচ আরও লিখেছেন, "ওকে বাদ দেওয়ার জন্য গোটা দলের সামনে আমাকে এবং রাহুল দ্রাবিড়কে চুলোয় যেতে বলা, এবং শ্রীসন্থের আরও নিয়মিত অভব্য আচরণের কারণ এবার আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল।"

আরও পড়ুন: IPL 2019: প্লে অফে খেলতে নামার আগেই বড় ধাক্কা মহারাজের দিল্লি দলে

Advertisment

তাঁর সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে শ্রীসন্থ ঘটনার কথা সরাসরি অস্বীকার করেছেন, এবং আপটনকে "মিথ্যাবাদী" আখ্যা দিয়েছেন। "উনি এত বড় মিথ্যাবাদী...আমি এসবের কিছুই বলি নি," একটি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে জানান শ্রীসন্থ।

ঘটনার ছ'বছর পর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আপটন দাবি করেন, স্থান-কাল ভুলে গিয়েছিলেন শ্রীসন্থ। "কেউ যদি বলেন শ্রীসন্থ খুব আবেগপ্রবণ, যার ফলে ধৈর্য হারিয়ে ফেলে সে, আমি বলব না যে কেউ আবেগের বশে কোনও আচরণ করতে পারেন না। কিন্তু খেলতে পারবে না জেনে ওই প্রতিক্রিয়াকে আমি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া বলব না। গত সাতটি মরশুম ধরে আমরা প্রতিটি ম্যাচে ১৩ জন প্লেয়ারকে বলি যে তাঁরা খেলছেন না (রাজস্থান রয়্যালসের বর্তমান খেলোয়াড় সংখ্যা ২৪)। ওই ১৩ জনের মধ্যে চারজনের হতাশ হওয়ার যথেষ্ট কারণ থাকে, কিন্তু শ্রীসন্থের মতন প্রকাশ্যে অমন অভব্যতা করার পক্ষে কোনও কারণই যথেষ্ট নয়। এর থেকেই মনে হয় যে নেপথ্যে আরও বেশি কিছু ছিল।"

তাঁর বইতে 'আরও বেশি কিছু' কী হতে পারে, সেই সম্ভাবনার কথা লিখেছেন আপটন। "মুম্বইতে...শ্রীসন্থকে একটি ম্যাচ থেকে বাদ দেওয়া হয়, যেখানে বিকল্প ব্যবস্থা ছিল। আমরা সেই ম্যাচে যেহেতু চান্ডিলাকেও বাদ দিয়েছিলাম, এই দুজনের একজন তৃতীয় ব্যক্তিকে প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল যে ম্যাচ গড়াপেটায় সাহায্য করবে। সেই তৃতীয় ব্যক্তি ছিল অঙ্কিত।"

আরও পড়ুন: ICC Cricket World Cup 2019: ঘাস দিয়েই তৈরি বিশ্বকাপ ট্রফি, স্রষ্টাকে কুর্নিশ আইসিসি-র

এই কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত দিল্লি পুলিশ স্পেশাল সেল-এর ৬,০০০ পাতার চার্জশিটে কিছু কথোপকথনের প্রতিলিপি রয়েছে, যেখানে চান্ডিলা চবনকে সম্ভবত বোঝাচ্ছে, কীভাবে 'ফিক্স' করতে হয়। ১৫ মে, ২০১৩ সালের এক বাক্যালাপে শোনা যাচ্ছে, চান্ডিলা চবনকে বলছে যে তাকে একটি ওভারে ১২ বা তার বেশি রান দিতে হবে। ম্যাচের ওই ওভারে ১৫ রান দেয় চবন। ওভার শেষ হওয়ার পরেই ৮.১৯ মিনিটে চান্ডিলা এমন কাউকে ফোন করে যাকে চার্জশিটে 'বুকি' বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। "খুশ হো গয়ে শেঠজি (খুশি তো, শেঠজি)?" বলতে শোনা যায় তাকে।

তাদের গ্রেফতারির পর ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড যাবজ্জীবন ব্যানের সাজা দেয় শ্রীসন্থ, চান্ডিলা এবং চবনকে, কিন্তু ২০১৫ সালে মহারাষ্ট্র সংগঠিত অপরাধ নিয়ন্ত্রণ আইনের কঠোর আওতায় অভিযুক্ত হওয়ার মুখে দিল্লির এক আদালত রেহাই দেয় তাদের। এ বছরের শুরুর দিকে শ্রীসন্থের যাবজ্জীবন ব্যানের সাজা খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট, এবং বোর্ডকে নির্দেশ দেয় যাতে ঘটনা পুনর্বিবেচনা করে তাঁকে নতুন করে সাজা শোনানো হয়।

কিন্তু শ্রীসন্থ এখনও বলছেন, তিনি দ্রাবিড় বা আপটনের প্রতি কোনও অভব্য আচরণ করেন নি। "অত্যন্ত দুঃখজনক। আমার খারাপ লাগছে প্যাডি আপটনের জন্য। এভাবে যদি উনি অল্প সময়ের জন্য বিখ্যাত হতে চান, তবে হোন। আমি এটুকুই বলতে পারি যে আমি যাঁদের সঙ্গে খেলেছি, তাঁদের সবাইকেই আমি বরাবর সম্মান করে এসেছি, এবং করেও যাব। আপটনের সম্পর্কে আমার আজ পর্যন্ত উঁচু ধারণা ছিল। এটা দেখে খুবই হতাশ হয়েছি। আমি অন্তর থেকে আশা করব যেন তিনি নিজেকে অন্তত সম্মান করেন এবং অন্যকে খুশি করতে নিজেকে বিক্রি না করেন।"

IPL Rahul Dravid