বিদ্রোহে ইতি টেনে ক্ষমা চাইলেন দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটকিপার-ব্যাটার কুইন্টন ডিকক। দলের সতীর্থদের কাছে ক্ষমা চেয়ে ডিকক জানিয়ে দিলেন, বিশ্বকাপের বাকি ম্যাচগুলিতে সবার সঙ্গে হাঁটু গেড়ে বসে বর্ণবিদ্বেষের প্রতিবাদ জানাবেন। ৩২ বছরের ডিকক দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে বাকি ম্যাচগুলি খেলতে চান বলে জানিয়েছেন। একটি বিবৃতি দিয়ে তিনি বলেছেন, "যদি আমার হাঁটু গেড়ে প্রতিবাদে বাকিদের শিক্ষা হয় আর অন্যদের জীবন ভাল হয় তাহলে আমি খুশির সঙ্গে সেটা করতে রাজি।"
প্রসঙ্গত, দক্ষিণ আফ্রিকা বোর্ডের তরফে বার্তা এসেছিল গ্রুপ পর্বের বাকি ম্যাচে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের প্রতি সহমর্মিতা জানানোর জন্য ম্যাচের আগে ক্রিকেটাররা যেন হাঁটু মুড়ে বসেন। বোর্ডের সেই প্রস্তাবে বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন ডিকক। বোর্ডের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে সরাসরি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। পরে দক্ষিণ আফ্রিকা বোর্ডের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, ব্যক্তিগত কারণে সরে দাঁড়িয়েছেন তারকা।
বিবৃতির শুরুতে ডিকক বলেছেন, "প্রথমেই আমি সতীর্থ এবং দেশের ফ্যানদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমি কখনওই এটা আমার ব্যক্তিগত সমস্যা করতে চাইনি। আমি বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর গুরুত্ব বুঝি। আর এটাও জানি খেলোয়াড়দের দৃষ্টান্ত তৈরি করার দায়িত্ব সম্পর্কে। যদি যদি আমার হাঁটু গেড়ে প্রতিবাদে বাকিদের শিক্ষা হয় আর অন্যদের জীবন ভাল হয় তাহলে আমি খুশির সঙ্গে সেটা করতে রাজি।"
তিনি আরও বলেছেন, "আমি কোনওভাবেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে না খেলে কাউকে আঘাত করতে চাইনি। ক্যারিবিয়ান টিমের বিরুদ্ধে তো নয়ই। জানি না কিছু মানুষ এটা নিয়ে ভুল বুঝেছে মঙ্গলবার সকালে। আমি গভীর ভাবে দুঃখিত এই আঘাত, ভুল বোঝাবুঝি এবং রাগের জন্য। যাঁরা জানেন না তাঁদের বলতে চাই, আমি মিশ্র জাতির পরিবার থেকে এসেছি। আমার সৎ মা কৃষ্ণাঙ্গ এবং সৎবোনরাও। তাই আমার কাছে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার জন্ম থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। কোনও আন্তর্জাতিক আন্দোলনের জন্য নয়।"
"ব্যক্তির থেকে সমষ্টির সমানাধিকার বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাকে ছোট থেকে এটা বোঝানো হয়েছে সবার সবরকম অধিকার আছে। কিন্তু আমার মনে হয়েছিল, বাকিদের মতো আমাকে এটা করতে বলায় আমার অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। শেষে তিনি বলেছেন, আমি বুঝতে পারছি না এটা আচরণের মাধ্যমে আমি কী প্রমাণ করতে পারব! যখন প্রতিনিয়ত প্রতিদিন আমি সব মানুষকে ভালবাসছি। কিন্তু যখন কোনও আলোচনা ছাড়াই আমাকে এটা করতে বলা হচ্ছে তখন মনে হল কোনও মানে হয় না এটার। আমি যদি বর্ণবিদ্বেষী হতাম তাহলে মিথ্যাচার করে হাঁটু মুড়ে বসতাম। যেটা অন্যায় আর সমাজের জন্য ভাল নয়।"
আরও পড়ুন বিশ্বকাপের মঞ্চেই বিদ্রোহী ডিকক, খেললেন না ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ
"অনেকেই আমাকে বোকা, মাথামোটা, স্বার্থপর, অপরিণত বলেছে। আগেও বলেছে। তবে সেটা আমাকে অতটা আঘাত দেয়নি। কিন্তু ভুল বোঝাবুঝির জন্য আমাকে বর্ণবিদ্বেষী বলায় আমি আঘাত পেয়েছি। এটা আমার পরিবারকে আঘাত করেছে, গর্ভবতী স্ত্রীকেও। আমি বর্ণবিদ্বেষী নই। যাঁরা আমাকে চেনে সেটা তাঁরা জানে।" বিবৃতিতে জানিয়েছেন ডিকক।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন