তিনি তর্কাতীতভাবে খেলার মাঠের লোক ছিলেন না। অধুনা প্রয়াত প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি, মদন মিত্ররা যেভাবে কলকাতা ময়দানে পরিচিত মুখ, সেই বৃত্তের বাইরেই রয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
পরিচিতির অর্ধেকটা অভিনেতা সত্ত্বা দখল করে থাকলে, অন্যদিকে বসতি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে। তিনি কত বড় অভিনেতা, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কতটা বিতর্কিত, তা বহুলচর্চিত বিষয়। তবে চেনা পরিচিতির বাইরে তাপস পালের হৃদয়ে কলকাতা ময়দানও ছিল।
আরও পড়ুন ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার রাজস্থান রয়্যালস তারকা, হাসপাতালে ভর্তি ক্রিকেটার
অবাক হলেও এমনটাই সত্যি। সাহেব সিনেমায় ব্যর্থ, ভেঙে পড়া গোলকিপারের ভূমিকায় অভিনয় করে তাপস পাল নিজেকে বাংলা সিনেমায় জনপ্রিয়তায় শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছিলেন। হতাশ 'সাহেব'-কে কোচ শম্ভুদা মোহনবাগান মাঠে নিয়ে গিয়ে চার্জড আপ করেছিলেন। পেপ টকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন মোহনবাগান গ্যালারিতে নিয়ে এসে।
সেই দৃশ্য বাংলা সিনেমায় আইকনিক স্ট্যাটাস পেয়েছে বহু আগেই। সেই দৃশ্যের সংলাপ কে ভুলতে পারে!
-চেয়ে দেখ.... ফাঁকা গ্যালারি, তাই না? এবার চোখ বুজে দেখ! সন্তোষ ট্রফি কী আইএফএ শিল্ডের ফাইনালের খেলা হচ্ছে। দু-পাশে গোলপোস্টের নিচে দু-জন দাঁড়িয়ে। ওই দু-জনের একজন তুই হতে পারিস না? চাস না সেই দিন আসুক?
-চাই। শম্ভুদা চাই।
-আজকের খেলাটা তোকে, সেভাবে খেলতে হবে সাহেব।
-জান লড়িয়ে খেলব, আমি জান লড়িয়ে খেলব।
-এই তো চাই।
তাপস পালের প্রয়াণের সঙ্গে সঙ্গেই ময়দানি ফুটবলের স্রোতে ভেসে এসেছে সাহেব সিনেমার এই দৃশ্য। পুরনো ক্লিপিং ফের ভাইরাল ময়দানি ফুটবল সমর্থকদের সৌজন্যে। তাপস পালের সঙ্গে ময়দানি ফুটবলের সম্পর্ক যে এখানেই শেষ!
আরও পড়ুন একবার নয়, দু-বার বিয়ে করেছিলেন এই সাত ক্রিকেটার
তবে অনেকেই জানেন না তাপস পাল সরাসরি ফুটবল সংস্কৃতির সংস্পর্শে না থাকলেও রীতিমতো খোঁজখবর রাখতেন। একসময়ের রাজনৈতিক সতীর্থ সৃঞ্জয় বোস স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলছিলেন, "মোহনবাগানের কথা উঠলেই উনি রীতিমতো আড্ডা মারতেন আমাদের সঙ্গে। উনি কোন দলকে সমর্থন করতেন, তা সরাসরি বলতেন না। তবে ইস্ট-মোহন প্রসঙ্গ উঠলে উনি রীতিমতো ঠাট্টা-ইয়ার্কি, লেগপুল করতেন।"
তবে মোহনবাগানের শীর্ষ কর্তার আক্ষেপ অন্যত্র, "তাপস পালের চলে যাওয়া বাংলা সিনেমার অনেক বড় ক্ষতি। পুরনো দিনের অনেকেই নেই। তাপস পালের মতো নক্ষত্রের প্রয়াণে আরও ক্ষতি হল সিনেমা জগতের।"
কাছের ছিলেন একসময় সৃঞ্জয়বাবুর। একসময়ের রাজনৈতিক সহকর্মীর বিষয়ে স্মৃতিচারণে বলছিলেন, "ওঁর সবথেকে বড় গুণ, ভীষণ বড় সিনেমা তারকা হয়েও উনি সহজে মিশতে পারতেন। ইজিলি অ্যাক্সেস করা যেত ওঁকে।"
তাপস পাল আদতে কোন দলের সমর্থক, তা প্রকাশ না পেলেও তাঁর হৃদয়েও যে ময়দানি ফুটবল রয়েছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই।