মায়াবী এক রাত নেমে এসেছিল। আজ থেকে ঠিক ১০ বছর আগে। এমনই দিনে। ২০১১-র ২ এপ্রিল। গোটা দেশ আনন্দে উদ্বেল হয়ে গিয়েছিল। ক্রিকেট সিংহাসনের চূড়ায় ওঠা সেই দ্বিতীয়বার। আশির দশকে বিশ্বক্রিকেটে স্পর্ধা দেখিয়ে টিম ইন্ডিয়া যখন চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, একটা একটা নতুন ক্রিকেট প্রজন্মই তৈরি হয়ে গিয়েছিল।
কপিল দেবদের লর্ডসের লর্ড হয়ে ওঠা যে প্রজন্ম চাক্ষুস করেনি, তাদের কাছেই মসিহা হয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। ওয়াংখেড়ের বাইশ গজে কীর্তি স্থাপন করেছিল টিম ইন্ডিয়ার এক সাহসী স্কোয়াড। ফাইনালে প্রতিপক্ষ ছিল শ্রীলঙ্কা। কাঁপুনি ধরিয়ে সেই জয়, উন্মাদনা- এখনো যেন আরব সাগরে ঢেউয়ের তরঙ্গে উথালপাতাল করে। ৬ উইকেটে জয় পেয়েছিল ভারত।
আরো পড়ুন: হাসপাতালে ভর্তি হলেন শচীন! বিশ্বকাপ জয়ের দশক পূর্তিতেই ভয়ঙ্কর খারাপ খবর
সেই দলে কে ছিলেন না- গৌতম গম্ভীর, শচীন তেন্ডুলকর, যুবরাজ সিং, জাহির খান, বীরেন্দ্র শেওয়াগ, মহেন্দ্র সিং ধোনি! টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই ভারত ফেভারিট ছিল। স্কোয়াডের প্রত্যেকেই ইতিহাস গড়ার কাজে অবদান রেখেছিলেন। তবে সেরা অবদান ছিল যুবরাজ সিং। ব্যাটে, বলে মাতিয়ে দেন সেই বিশ্বকাপ। ব্যাট হাতে ৩৬২ রান করার পাশাপাশি ১৫ উইকেটও তুলে নিয়েছিলেন তিনি। সিরিজের সেরা হয়েছিলেন পাঞ্জাব দ্য পুত্তর-ই।
ফাইনালে কুমার সাঙ্গাকারার নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হওয়ার আগে ভারত অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তানের মত দলকে হারিয়ে এসেছিল। ফাইনালে ভারতের টার্গেট ছিল ২৭৫। শুরুতেই ঝটকা খেয়েছিল ভারত শেওয়াগ এবং শচীনকে হারিয়ে। দুই ওপেনার ফিরে যাওয়ার পরে টিম ইন্ডিয়ার হয়ে পাল্টা লড়াইয়ের মঞ্চ করে দেন গৌতম গম্ভীর। ১২২ বলে ৯৭ করে যান তিনি। ধোনির নায়ক হয়ে ওঠার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দেন দিল্লির তারকা। তারপরেই ওয়াংখেড়ে জুড়ে ধোনি-ধামাকা। ৭৯ বলে ৯১ রানের সেই ইতিহাস গড়া ইনিংস উপহার দিয়ে যান রাঁচির তরুণ।
বিশ্বকাপ জয়ী ভারতের সেই একাদশে ছিলেন একাধিক তারকা। তবে অনেকেই জানেন না। সেই জয়ের পরে সেই দল আর কখনো একসঙ্গে মাঠে নামেনি। শুনতে আশ্চর্য লাগলেও এটাই সত্যি। বিশ্বকাপ জয়ী একাদশকে সেই ম্যাচের পর আর কখনই একসঙ্গে খেলতে দেখা যায়নি।
ফাইনালে ভারতের একাদশে।ছিলেন বীরেন্দ্র শেওয়াগ, শচীন তেন্ডুলকর, গৌতম গম্ভীর, বিরাট কোহলি, যুবরাজ সিং, মহেন্দ্র সিং ধোনি, সুরেশ রায়না, হরভজন সিং, জাহির খান, মুনাফ প্যাটেল এবং শ্রীসন্থ। সেই ম্যাচের পর জাতীয় দলের জার্সিতে কেন তাঁরা একসঙ্গে খেললেন না, তা এখনো আশ্চর্য্যের বিষয়।
সেই একাদশের একমাত্র হরভজন সিং, বিরাট কোহলি ব্রাত্য হয়ে যাওয়া পেসার শ্রীসন্থ এখনো খেলে চলেছেন। অবসর নেননি। ধোনি-রায়না অবশ্য এখনো আইপিএলে খেলছেন।
গম্ভীরকে সম্প্রতি জিজ্ঞেস করা হয়, কেন সেই একাদশ আর কখনো একসঙ্গে খেলেনি। গম্ভীর যথেষ্ট চাচাছোলা ভাষায় জবাব দিয়েছেন, এই প্রশ্নের উত্তর একমাত্র কোচ ডানকান ফ্লেচার, অধিনায়ক ধোনি এবং তৎকালীন নির্বাচক মন্ডলীর প্রধান কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত জবাব দিতে পারবেন।
"এটা আমাকে একবার ভাজ্জি বলেছিল। এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা উচিত সেই সময়ের কোচ ফ্লেচার (যিনি বিশ্বকাপ জয়ী কোচ গ্যারি কার্স্টেনের পর টিম ইন্ডিয়ার দায়িত্ব নেন), অধিনায়ক ধোনি এবং নির্বাচকদের। যে দল বিশ্বকাপ জিতল, সেই দল আর কখনো একসঙ্গে খেলল না। এমনটা মনে হয় না আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ঘটেছে।" বলে দিয়েছেন বিশ্বকাপ জয়ী তারকা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন