শচীনের আউট, কাম্বলির কান্না! ইডেনে আগুন জ্বালানো সেই ট্র্যাজেডি ২৬ বছর আগে এই দিনেই

চোখে জল নিয়ে বিনোদ কাম্বলির সেই প্রস্থানের দৃশ্য এখনও ক্রিকেটপ্রেমীদের স্মৃতিতে দগদগে।

চোখে জল নিয়ে বিনোদ কাম্বলির সেই প্রস্থানের দৃশ্য এখনও ক্রিকেটপ্রেমীদের স্মৃতিতে দগদগে।

author-image
IE Bangla Sports Desk
New Update
NULL

১৬ বছর কেটে গিয়েছে। তবে এখনও ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়ে দগদগে সেই স্মৃতি। ১৩ মার্চ, ১৯৯৬ ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম কালো দিন। যে ঘটনার ট্র্যাজেডি এখনও তাড়া করে দেশের ক্রিকেটকে।

Advertisment

যে শহর নায়ক বরণে প্রস্তুত থাকে। যে শহর ক্রিকেট উপাসক, সেই শহরেই আগুন জ্বলে উঠেছিল। প্রিয় তারকাদের অসহায় আত্মসমর্পণ দেখে। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ১৯৯৬ বিশ্বকাপের সেই মর্মান্তিক স্মৃতি শহরের বুকে আজও হাহাকারের মত দুঃস্বপ্ন হয়ে ধরা দেয়।

আরও পড়ুন: মোহনবাগানের জার্সিতে ব্যাটে ঝড় তোলেন কোহলি! বিরাটের বাঙালি কোচ এখনও সুখ-স্মৃতিতে ডুবে

বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেট মঞ্চ। কলকাতার ইডেন কানায় কানায় পূর্ণ। সম্ভাব্য ফাইনালে ওঠার প্রতিটি ক্ষণ তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করতে উৎসুক জনতা। দিনের শুরুটাও ভাল হয়েছিল। টসে জিতে ক্যাপ্টেন মহম্মদ আজাহারউদ্দিন ফিল্ডিং নিয়েছিলেন। আর বল হাতে ভারত শুরুতেই লঙ্কান দুই ওপেনারকে আউট করে ম্যাচ জমিয়ে দিয়েছিল। জাভাগল শ্রীনাথ আইট করে দেন সনৎ জয়সূর্য এবং রমেশ কালুভিত্তরনেকে। এরপরে শ্রীনাথ আশঙ্কা গুরুসিংঘেকে ফিরিয়ে ৩৫/৩ ধসিয়ে দেয় শ্রীলঙ্কাকে।

Advertisment

তবে দুঃস্বপ্নের শুরু তারপরেই। অরবিন্দ ডিসিলভা এবং রোশন মহানামা দুরন্ত ব্যাট করে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন নিজেদের। ৪৭ বলে ৬৬ করে যান অরবিন্দ ডিসিলভা। লঙ্কান সুপারস্টার ফিরে যাওয়ার পরে অধিনায়ক অর্জুনা রনতুঙ্গা এবং মহানামা দলের হাল ধরেন।

আরও পড়ুন: ঋদ্ধি কামব্যাক করবেই! ব্রাত্য বাঙালিকে নিয়ে মুখ খুললেন বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় উইকেটকিপার

মহানামা ৫৮ করে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে ফিরে যান। রনতুঙ্গা ৩৫ করে আউট হওয়ার পরে লঙ্কানদের বড় স্কোর গড়ার স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। শেষদিকে হাসান তিলকরত্নে (৪৩ বলে ৩২) এবং চামিন্দা ভ্যাস (১৬ বলে ২৩) দলকে ২৫১/৮-এ পৌঁছে দেন।

এই টার্গেট তাড়া করতে নেমে ওপেনার নভজোৎ সিং সিঁধু ৮ রান করে সাততাড়াতাড়ি আউট হয়ে যান। তবে ভারতকে একাই টানছিলেন শচীন তেন্ডুলকর। সঞ্জয় মঞ্জরেকরের সঙ্গে দলকে একশোর কাছাকাছি পৌঁছে দিয়েছিলেন। তবে শচীন জয়সূর্যের বলে স্ট্যাম্প আউট হতেই ট্র্যাজেডির সূত্রপাত।

১৬৬ বলে ভারতের তখনও দরকার ছিল ১৫৪ রান। হাতে ৮ উইকেট। ভাবা হয়েছিল, বাকি ব্যাটসম্যানরা সহজেই সেই রান তুলে দেবে। তবে ভারত মাত্র ২২ রান তোলার ফাঁকে ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলে। পরপর আউট হয়ে যান আজাহারউদ্দিন (০), শ্রীনাথ (৬), অজয় জাদেজা (০), নয়ন মনগিয়া (১) এবং আশিস কাপুর (০)। ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলার পরে সেই সময় ক্রিজে ছিলেন বিনোদ কাম্বলি এবং অনিল কুম্বলে। ভারতের ব্যাটিংয়ে ধস নামিয়ে দিয়েছিলেন জয়সূর্য। একাই আউট করেন পরপর শচীন, মঞ্জরেকর এবং জাদেজাকে।

আর প্রিয় তারকাদের এরকম অসহায় ভেঙে পড়া দেখে বাঁধ ভাঙে ইডেনের সমর্থকদের। শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটারদের দিকে রোষ আছড়ে পড়ে দর্শকদের। বোতল, প্লাস্টিক ব্যাগ, ক্যান ছোঁড়া হতে থাকে জয়সূর্য, মহানামাদের লক্ষ্য করে। সেই সঙ্গে গ্যালারিতে আগুন জ্বালিয়ে ভাঙচুরের চেষ্টা করা হতে থাকে। বেশ কিছু বল বয়-ও আহত হন।

আরও পড়ুন: রান আউট মায়াঙ্ক, তবু নো বলে LBW-র আবেদন লঙ্কানদের! অদ্ভুত ভিডিওয় চরম শোরগোল, দেখুন

রনতুঙ্গা সরাসরি আম্পায়ারের হস্তক্ষেপ দাবি করেন। লঙ্কান ক্রিকেটাররা মাঠে নামতে অস্বীকার করে বসেন। ম্যাচ রেফারি ক্লাইভ লয়েড বাকি ম্যাচ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে শ্রীলঙ্কাকে জয়ী ঘোষণা করেন। সেই ঘোষণার পর কাম্বলির কাঁদতে কাঁদতে ড্রেসিংরুমে ফিরে আসার দৃশ্য এখনও টাটকা। যে দিনের সূত্রপাত হয়েছিল একরাশ আশা নিয়ে তা দুঃস্বপ্নের মধ্যে শেষ হয়। ফাইনালেও শ্রীলঙ্কা সেশমেষ অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে প্ৰথমবারের মত চ্যাম্পিয়নের শিরোপা জিতে নেয়। শতরান করে ফাইনালের সেরা হন অরবিন্দ ডিসিলভা।

Sachin Tendulkar Sri Lanka Cricket World Cup ICC Cricket World Cup Indian Cricket Team Indian Team