আইপিএলে এবার চিন হঠাও অভিযান। জেরার মুখে ডিসিলভা। সবথেকে দামি ক্রিকেটার জাদেজা। স্যামির মুখে এবার ফেয়ার এন্ড লাভলি। এশিয়ান কাপ আয়োজনে উৎসাহী ভারত। লিভারপুলের ভারতীয় সমর্থকের কীর্তি।
চিনা স্পনসর সরানোর দাবিতে সোচ্চার নেস ওয়াদিয়া
ধীরে ধীরে চিনা স্পনসরদের আইপিএল থেকে ছেঁটে ফেলা হোক। এমনটাই আইপিএল কর্তৃপক্ষকে এবার পরামর্শ দিলেন কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের অন্যতম অংশীদার নেস ওয়াদিয়া। গালোয়ান উপত্যকায় ইন্দো-চিন দ্বৈরথের পরে দাবি উঠে গিয়েছিল, আইপিএল সহ ভারতীয় ক্রিকেটে সরিয়ে দেওয়া হোক চিনের স্পনসর-সংস্থাগুলোকে। এরপর বিসিসিআই-ও জানিয়ে দেয়, সমস্ত স্পনসরদের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হবে।
সোমবারই আবার কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ৫৯টি চিনা এপস বাতিল করা হয়েছে। তারপরেই এদিন নেস ওয়াদিয়া সাফ জানিয়ে দিলেন, "আমাদেরও উচিত চিনা স্পনসরদের সঙ্গে সমস্ত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা। দেশের জন্য। সবার আগে দেশ। অর্থ গৌণ। এবং আমাদের বুঝতে হবে এটা ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ, চায়না প্রিমিয়ার লিগ নয়। দেশের কাছে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা উচিত আমাদের।"
প্রশ্ন ওঠে গিয়েছে, চিনা স্পনসরদের বয়কটের পথে হাঁটলে আইপিএলে আর্থিক অসুবিধার পরিস্থিতি তৈরি হবে কিনা। সেই বিষয়ে নেস ওয়াদিয়া জানাচ্ছেন, "প্রাথমিকভাবে হয়ত স্পনসর খোঁজা সমস্যার হয়ে দাঁড়াবে। তবে, দেশে পর্যাপ্ত স্পনসর রয়েছে যারা এদের জায়গা নিতে পারে। আমাদের দেশ, কেন্দ্রীয় সরকার এবং দেশের জন্য যারা বলিদান দিয়েছে সেই সৈনিকদের প্রতি আমাদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে হবে।"
নেস ওয়াদিয়া কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকা জারি করার অপেক্ষায় বসে থাকার পক্ষপাতী নন। তাঁর বক্তব্য, "এই মুহূর্তে দেশের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক কর্তব্য। আমি যদি বোর্ড সভাপতি হতাম, তাহলে বলতাম, সামনের মরশুমের জন্য কেউ ইন্ডিয়ান স্পনসর খুঁজে দাও। আইপিএলের মত বিশ্বের সেরা টি২০ লিগ থেকে চিনা স্পনসররা যা সুবিধা পেয়েছে তা ভারতীয় কোম্পানিগুলোরও পাওয়া উচিত। আইপিএলের টিম গুলোকে আপাতত ইন্ডিয়ান স্পনসর খোঁজার জন্য পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হোক। আগেও বলেছি, দেশেই অনেক স্পনসর রয়েছে যারা চিনা স্পন্সরদের জায়গা নিতে পারে।"
গড়াপেটার অভিযোগে জেরা ডিসিলভাকে
ভারতের বিরুদ্ধে ৯ বছর আগে বিশ্বকাপের ফাইনালে গড়াপেটা হয়েছিল কিনা তা তদন্ত করে দেখছে শ্রীলঙ্কা সরকার। ২৪ ঘন্টা আগেই সরকারিভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই তদন্তের অংশ হিসেবেই এবার সেই সময়ের শ্রীলঙ্কার জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক অরবিন্দ ডিসিলভাকে জেরা করা হল।
প্রাক্তন ক্রীড়ামন্ত্রী মহেন্দ্র আলুথামাগে অভিযোগ করে জানিয়েছিলেন, ভারতের বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কার হার কোনো তৃতীয় পক্ষ ঠিক করে দিয়েছিল। তারপরেই দ্বীপরাষ্ট্র এর ক্রিকেটে হৈচৈ পরে যায়।
১৯৯৬ সালে একবারই বিশ্বকাপ জিতেছিল শ্রীলঙ্কা। সেই বিশ্বকাপের ফাইনালে ম্যাচ সেরা হন অরবিন্দ ডিসিলভা। ক্রীড়া সংক্রান্ত দুর্নীতি খতিয়ে দেখার জন্য শ্রীলঙ্কা সরকার একটি তদন্তকারী সংস্থা গঠন করেছে। সেই কমিটির পক্ষ থেকেই তদন্তের জন্য প্রথমবার জেরা করা হল অরবিন্দ ডিসিলভাকে। সেই কমিটির সুপারিনটেনডেন্ট জগনাথ ফনসেকা স্থানীয় প্রচারমাধ্যমে জানান, "২০১১ বিশ্বকাপের ম্যাচ গড়াপেটার অভিযোগের তদন্ত শুরু করা হল এদিন। অরবিন্দ ডিসিলভা এদিন যা জানিয়েছেন, সেই বয়ানের উপর নির্ভর করে ২০১১ স্কোয়াডের এক সদস্যকে আমরা ডাকছি। ইনি উপুল থরঙ্গা।"
ফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে ওপেন করতে নেমেছিলেন থরঙ্গা। ২০ বলে মাত্র ২ রান করে আউট হয়ে যান তিনি।জানা গিয়েছে, বুধবার ডিসিলভাকে ছয় ঘন্টার বেশি সময় ধরে জেরা করা হয়েছে।
স্যামি ও ফেয়ার এন্ড লাভলি
ভারতে "ফেয়ার এন্ড লাভলি' নামের ক্রিম কেন বাজারে বিক্রি হয়। বর্ণবিদ্বেষ নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ড্যারেন স্যামি ফের একবার বোমা ফাটালেন। আউটলুক ম্যাগাজিনে এক সাক্ষাৎকারে ক্যারিবিয়ান তারকা অলরাউন্ডার জানালেন, "ভারতের বিজ্ঞাপণ ফেয়ার এন্ড লাভলি জানাচ্ছে, যারা ফরসা তারাই একমাত্র লাভলি হয়। এর অর্থ তো এমনটাই। এটাই বর্ণবিদ্বেষ।"
এই বিদ্বেষ নিয়ে অন্য একটি সাক্ষাৎকারে টেডএক্স হায়দরাবাদকে জানিয়েছেন, শিক্ষার গুরুত্ব। ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারের বক্তব্য, "এটা একটা বিস্তৃত বিষয়। আমেরিকায় জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যাকান্ড হয়ত সমাজে কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি অবিচার, বৈষম্যের একটা বিদ্রোহ চালু করে গিয়েছে। এই নিয়ে মানুষ কথা বলতেও অস্বাচ্ছন্দবোধ করছেন। এমন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমি কিছু শব্দ শিখেছি, যা গায়ের রং নিয়ে মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি করে।"
এরপরে তিনি আরো বলেন, "২০১৩-১৪ সালে যে ঘটনার কথা আমি জানিয়েছি, বর্ণবিদ্বেষ নিয়ে যা বলেছি তা শিক্ষার একটা অংশ। মানুষকে বোঝাতে হবে, শিক্ষা দিতে হবে কিছু শব্দ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে যা অন্যদের আহত করে। আমি ভারতের অন্যতম বড় একটি কোম্পানিকে বলেছি। যে কোম্পানির অলিখিত ক্যাম্পেন ছিল এটাই যে ফরসা ব্যক্তিরাই একমাত্র সুন্দর হয়ে থাকে।"
জাদেজাই শ্রেষ্ঠ
শচীন, ধোনি, কিম্বা কোহলি নন। চলতি শতকে ভারতের সবথেকে মূল্যবান ক্রিকেটার রবীন্দ্র জাদেজা। বিখ্যাত ক্রিকেট ম্যাগাজিন উইজডেনের পক্ষ থেকে এমনটাই জানানো হয়েছে। কোনো ক্রিকেটারের মূল্যায়ণ করার ক্ষেত্রে 'ক্রিকভিজ' নামক একটি বিশেষ এপ্লিকেশন ব্যবহার করেছে উইজডেন। সেখানেই দেখা গিয়েছে, ব্যাট, বল কিংবা ফিল্ডিংয়ে দলের প্রতি জাদেজার মিলিত অবদান বাকিদের থেকে অনেকটাই বেশি।
জাদেজার এমভিপি (মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার) রেটিং ৯৭.৩। বিশ্বের সব দেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে একমাত্র শ্রীলঙ্কার মুথাইয়া মুরলিধরণ এর রেটিং জাদেজার থেকে বেশি। সব দেশের বিচারে একবিংশ শতকে জাদেজা টেস্টের দ্বিতীয় সর্বাধিক মূল্যবান ক্রিকেটার।
পারফরম্যান্স এনালিস্ট 'ক্রিকভিজ' টুলের এক কর্তা ফ্রেডি ওয়াইল্ড জানাচ্ছেন, "ভারতের স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার জাদেজা ভারতের সবথেকে মূল্যবান ক্রিকেটার। এমনটা দেখে অনেকেই আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছেন। কারণ প্রথম একাদশেই জাদেজা অটোমেটিক চয়েস নন। তবে জাদেজা যখন খেলেন, তখন ফ্রন্টলাইন বোলার হিসাবে ওকে ব্যবহার করা হয়। ৬ নম্বর পজিশনে ব্যাটিং করেন। দলের ইনভলভমেন্টে জাদেজা সবথেকে বেশি অবদান রাখেন।"
পাশাপাশি তার যুক্তি, "৩১ বছরের তারকার বোলিং গড় ২৪.৬২। যা শ্যেন ওয়ার্নের থেকেও ভালো। আবার ব্যাটিং গড় ৩৫.২৬। যা শ্যেন ওয়াটসনের থেকেও বেশি। ব্যাটিং ও বোলিং গড়ের পার্থক্য মাত্র ১০.৬২। চলতি শতকে যারা নূন্যতম ১০০০ রান ও ১৫০ উইকেট নিয়েছে তাদের মধ্যে জাদেজা দ্বিতীয় সেরা। ও একজন সর্বোচ্চ পর্যায়ের অলরাউন্ডার।"
এশিয়ান কাপের আয়োজনের দৌড়ে ভারত
২০২৭ এশিয়ান গেমস আয়োজক হতে রাজি এআইএফএফ। এএফসি-র কাছে এমনটাই জানিয়ে দিল ভারতীয় ফুটবল সংস্থা। বুধবারই এআইএফএফ-এর ইছাপ্রকাশের এই খবর বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিল এএফসি। ভারত ছাড়াও এই টুর্নামেন্ট আয়োজনের লড়াইয়ে রয়েছে কাতার, ইরান, সৌদি আরব এবং উজবেকিস্তান। আগামী বছর আয়োজকের নাম চূড়ান্ত করবে এশিয়ান ফুটবল কাউন্সিল। এএফসি-র বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বিড প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া প্রত্যেক দেশের সঙ্গে সংশ্লিস্ট নথি খতিয়ে দেখবে। বিডিং প্রক্রিয়ার পর ২০২১ এ ১৯তম এশিয়ান গেমসের আয়োজকের নাম চূড়ান্ত করা হবে।
সেই বিবৃতিতে এএফসির সভাপতি শেখ সালমান বিন ইব্রাহিম আল খলিফা বলেন, "টুর্নামেন্ট আয়োজক হওয়ার ইছাপ্রকাশ করে এগিয়ে আসার জন্য এশিয়ান ফুটবল সংস্থার পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ। আন্তর্জাতিক মানের এক মঞ্চ প্রস্তুত করে আমাদের দল, ফুটবলার, সমর্থক, অফিসিয়ালদের স্বাগত জানানোর প্রস্তাব দেওয়ায় আমরা আপ্লুত। প্রত্যেকের জন্য শুভকামনা রইল।"
ভারত এর আগে কখনও এশিয়ান কাপ আয়োজন করেনি। এশিয়ার সর্বোচ্চ পর্যায়ের এই ফুটবল টুর্নামেন্টে ভারত মূলপর্বে উঠেছে মাত্র চারবার। এর মধ্যে একবারও গ্রুপ পর্বের বাধা পেরোতে পারেনি তারা। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন কাতার এবং ইরান আগে এই টুর্নামেন্টের আয়োজক হয়েছে। অন্যদিকে সৌদি আরব এবং উজবেকিস্তান ভারতের মতোই কোনোদিন এই টুর্নামেন্ট আয়োজক হয়নি।
লিভারপুলের ভারতীয় সমর্থকের কীর্তি
৩০ বছর পর ইপিএল চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল। শুধু ইংরেজ সমর্থকরাই নন। দেশ-বিদেশের বহু সমর্থক নিজেদের মতো করেই ক্লাবের ঐতিহাসিক জয় উদযাপন করছেন। এমন আবহেই প্রবাসী এক ভারতীয় সমর্থক শিরোনামে ফুটবল দুনিয়ার। সোমবারে ইপিএলের ভারতীয় পেজে একটি ভিডিও শেয়ার করা হয়। সেখানে দেখা যাচ্ছে, মালয়েশিয়া প্রবাসী এক শিখ পরিবার ভারতীয় সুরে গাইছে লিভারপুলের থিম সং 'ইউ উইল নেভার ওয়াক এলোন'। গুরমুখ সিং ও তাঁর পরিবারের এই লিভারপুলের থিম সংয়ের ক্লাসিকাল ভার্সন সাড়া ফেলে দিয়েছে সব জায়গায়।
৪০ বছরের বেশি সময় ধরে লিভারপুল সমর্থক। ৩০ বছর আগে প্রত্যক্ষ করেছিলেন প্রিয় দলের হাতে ইপিএল খেতাব। তারপর অপেক্ষা করতে হয়েছে তিন দশক। এতদিন পরে লিভারপুল খেতাব জেতায় আরো আনন্দের বাঁধ মানেনি। তবে বাইরে বেরিয়ে নয়। অভিনব উপায়ে দলের জয় সেলিব্রেট করেছেন। ঘরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেই গেয়েছেন 'ইউ উইল নেভার ওয়াক এলোন'। একদম ভারতীয় থিমে।
সেই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, গুরমুখ স্ত্রী ইন্দরজিৎ কৌর এবং দুই কন্যা গুরসীমার এবং কাভেলিন সেই গানে সঙ্গত দিচ্ছেন তাঁকে। ১৫ বছরের পুত্র গুরশিভার আবার ডাই হার্ড ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফ্যান। সে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাবার কনসার্টে যোগ দেয়। ভিডিওর একদম শুরুতেই গুরমুখ জানিয়ে দেন, তার দলে না থেকে পুত্র অনেকদিন আগেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সমর্থক হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি তিনি আরো জানান, তাঁর পরিবার কখনো 'ইউ উইল নেভার ওয়াক এলোন' গান গায়নি। তবে বাড়িতে ভক্তিমূলক গানের চর্চা চলতই। তাঁদের এই গান লিভারপুলের জয়কে স্মরণীয় করে রাখার জন্য।