টোকিও পৌঁছানো আর হল না! স্বপ্ন বুকে নিয়ে কাবুলেই আটকে রইলেন দুই আফগান ক্রীড়াবিদ। দেশের মধ্যে বাড়তে থাকা আশান্তির আঁচ এবার খেলার ময়দানেও। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে প্যারালিম্পিক গেমসে আফগানিস্তানের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে যাওয়া প্রথম মহিলা ক্রীড়াবিদ হতেন জাকিয়া খুদাদাদি। তবে ইতিহাস গড়া আর হল না। দেশের ভেঙে পড়া অবস্থায় প্যারালিম্পিক গেমসে অংশ নিতে পারবেন না তিনি।
টোকিওতে শুরু হচ্ছে প্যারালিম্পিকের আসর। এমন অবস্থায় আন্তর্জাতিক এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে আফগানিস্তান প্যারালিম্পিক কমিটির এক আধিকারিক আরিয়ান সাদিকি জানিয়েছেন, ২৪ অগাস্ট থেকে টোকিওতে শুরু হওয়া প্যারালিম্পিক গেমসে তাদের দুই প্রতিভাবান অ্যাথলিট অংশ নিতে পারবেন না। তিনি বলেছেন, “দেশের এই কঠিন পরিস্থিতিতে আফগান দল সঠিক সময়ে কাবুল ছাড়তে পারেনি।"
আরও পড়ুন: অতিমারীর অভিশাপ! ব্যাট ছেড়ে হাতে কোদাল বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় তারকার
সাদিকি এক বিবৃতিতে আরও জানিয়েছেন, “আমেরিকান সেনা কাবুল বিমানবন্দরে বিমান চলাচলের নিয়ন্ত্রণ জারি করেছে।" প্রসঙ্গত উল্লেখ্য গত সোমবার কাবুল বিমানবন্দরে বেড়ে চলা অশান্তির কারনে পাঁচ জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তালিবান বিদ্রোহীরা প্রধান শহরগুলোকে এখনও দখল করে রেখেছে এবং এখন আফগানিস্তানের অধিকাংশ এলাকা আপাতত তাদের নিয়ন্ত্রণে।
সাদিকি বলেছেন, প্যারালিম্পিক গেমস উপলক্ষে গত সোমবারই তাঁর জাপান যাওয়ার কথা ছিল। তাঁর সঙ্গেই ১৭ অগাস্ট মহিলা ক্রীড়াবিদ খুদাদাদি এবং দৌড়বিদ হোসেন রসুলির টোকিও যাওয়া নির্ধারিত ছিল। তায়কন্ডো অ্যাথলিট খুদাদাদি গত সপ্তাহেই প্যারালিম্পিক ওয়েবসাইটে তার একটি প্রোফাইল তৈরি করেছিলেন। আসন্ন প্যারালিম্পিক নিয়ে অত্যন্ত আশাবাদীও ছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: বাবা বিছানায়! অলিম্পিক থেকে বহু দূরে দারোয়ানের কাজে নামলেন চ্যাম্পিয়ন বক্সার
হেরাত থেকে এক সাক্ষাৎকারে ২৩ বছর বয়সী খুদাদাদি জানান, “প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য আমি ওয়াইল্ড কার্ড পাওয়ার খবরে ব্যাপক আনন্দ পেয়েছিলাম। এই প্রথম কোনও মহিলা ক্রীড়াবিদ প্যারালিম্পিক গেমসে আফগানিস্তানের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবে এটা ভেবেই গর্ব হচ্ছিল।"
আক্ষেপের সুরে সাদিকি বলছিলেন, “প্যারালিম্পিক গেমসে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে যাওয়া অ্যাথলিটদের বিমানে টোকিও পৌঁছানোর জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, কিন্তু তালিবানরা একের পর এক শহর দখল করার জন্য বিমানের ভাড়া আস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যায়। তারপর এটা অসম্ভব হয়ে ওঠে।"
সেই সঙ্গে তাঁর আরও সংযোজন, “দেশের এই পরিস্থিতির আগে অ্যাথলিটরা গেমস নিয়ে তারা খুবই উৎসাহী ছিলেন, পার্ক বাগান সহ বিভিন্ন জায়গায় যখনই সময় পেত তারা প্রশিক্ষণে ব্যস্ত থাকতেন।"
আরও পড়ুন: অলিম্পিকের সময়েই মৃত্যু প্রিয় বোনের! দেশে ফিরেই বুকচেরা হাহাকার ভারতীয় তারকার
দেশের হয়ে প্রথম প্যারালিম্পিক গেমসে আফগানরা অংশ নেয় ১৯৯৬ সালে কিন্তু পদকজয় কার্যত অধরাই ছিল। রোহুল্লাহ নিকপাই ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত বেজিং গেমসে তায়কোন্দোতে ব্রোঞ্জ পদক জিতে দেশের হয়ে প্রথম পদক আনেন। ২০১২ সালে লন্ডনেও তায়কোয়ান্দোতে ব্রোঞ্জ জিতে চমক সৃষ্টি করেন তিনি।
সাম্প্রতিক সময়ের কথা বলতে গিয়ে সাদিকি বলেন, “অলিম্পিক এবং প্যারালিম্পিক উভয় ক্ষেত্রেই অনেক অগ্রগতি হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে দলের হয়ে অংশগ্রহণ করার জন্য ব্যাপক উৎসাহ ছিল যুবসমাজে।" কিছুক্ষণ থেমে তিনি অসহায় গলায় আরও বলেন, “অতীতে যা ঘটেছিলো তা থেকে আমরা কেবল ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারি।"
এর আগে তালিবান শাসনকালে সেভাবে খেলাধুলা করার কোন সুযোগ ছিল না। অ্যাথলিটরা সেভাবে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারতেন না। বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে সে সুযোগ একদমই ছিল না।
সাদিকি বলেন, “আমার জন্য এটি ভীষণ বেদনার। প্রথম মহিলা হিসাবে প্যারালিম্পিক গেমসে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব এটা দেশের জন্য একটা ইতিহাস গড়ার সুযোগ ছিল আমাদের সামনে। খুদাদাদি নিজেও গেমস নিয়ে খুবই আশাবাদী ছিলেন। পদক জয়ই ছিল ওঁর প্রথম লক্ষ্য।" সাদিকির কথায়, "জাকিয়া দেশের বাকি মহিলাদের জন্য একটি দুর্দান্ত রোল মডেল হতে পারতেন।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন