'লাঠি পুঁতে দিয়েছি'! পদক জয়ের পরেই নীরজের ফোন গিয়েছিল বাবার কাছে। সেখানেই সোনার ছেলের অম্লানবদনে তার বাবা কে বলে দেন 'গাড দিয়া লাঠি'। লাঠি একেবারে পুঁতে দিয়েছি! লক্ষ লক্ষ ভারতবাসীর একশো বছরের হতাশা পেরিয়ে এটাই যেন অনুভূতির জয়ধ্বনি।
পানিপথের ছেলে নীরজ চোপড়ার কীর্তিতে গর্বিত গোটা দেশ। এর মাঝেই ঘরের ছেলের জগৎজোড়া নজিরকে স্মরণীয় করে রাখতে তাঁর জন্য ৬ কোটি টাকা পুরস্কার মূল্যের ঘোষণা করেছে হরিয়ানা সরকার। পাশাপাশি ভারতীয় সেনায় সুবেদার পদে কর্মরত নীরজের জন্য সরকারি চাকরির ঘোষণাও করেছেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টর। দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ সহ বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা শুভেচ্ছাবার্তা জানিয়েছেন নীরজকে। যে তালিকায় রয়েছে পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংহও।
২০০৮ সালে বেজিং অলিম্পিক্সে অভিনব বিন্দ্রার পর অলিম্পিক্সের মঞ্চ থেকে দেশকে সোনা এনে দিলেন কোনও ক্রীড়াবিদ। পাশাপাশি স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড ইভেন্টে এই প্রথম কোনও খেলোয়াড় দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থে হলেন বিশ্বসেরা। কেরিয়ারের প্রথম অলিম্পিক্সে নেমেই জ্যাভলিনের ফাইনালের মঞ্চে ৮৭.৫৮ মিটার ছুড়ে ভারতের জন্য ঐতিহাসিক সোনা জিতলেন নীরজ। যে কীর্তিতে উচ্ছ্বসিত হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টর বলেছেন, "দীর্ঘদিন ধরে গোটা দেশ এই মুহূর্তটার অপেক্ষায় ছিল। গোটা দেশ তোমাকে নিয়ে গর্বিত নীরজ। অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।"
পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিংহ লিখেছেন, "সোনা। নীরজ চোপড়া তুমি ইতিহাস তৈরি করে গোটা দেশকে গর্বিত করেছো। তোমার আজকের ৮৭.৫৮ মিটার জ্যাভলিন ছোড়ার কীর্তিতে ভারতীয় ক্রীড়াক্ষেত্রের ইতিহাসের পাতায় চিরকালের জন্য স্থান করে নিল। ভারত তোমার জন্য গর্বিত। জয় হিন্দ।"
টোকিও অলিম্পিকে সোনা জয়ের পর বিশ্ব-দুয়ারে দীর্ঘ ১০০ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে নীরজ চোপড়া প্রথম ফোন করেন বাবাকে। উৎফুল্ল নীরজ তাঁর বাবাকে ফোনেই বলে দেন "গাড দিয়া লাঠ"।
গর্বিত বাবা ফোনে তার সোনার ছেলের জয়লাভে আপ্লুত হৃদয়ে শুভেচ্ছা জানান নীরাজকেও। তিনি বলেন, নীরজের সাফল্যে আজ তিনি গর্বিত। তাঁর এই জয় সারা ভারতের জয়। বাবা ছেলের কথোপকথনের মাঝেই, নীরাজের গ্রামের বাড়ির সামনে অসংখ্য ভক্তের ভিড় বাড়তে থাকে। বাড়ির সামনে তখন উৎসবের আমেজ। ঢাক-ঢোল সহ নানা প্রকার বাজনা নিয়ে হাজির গ্রামের লোকজন। হরিয়ানার পানিপথ জেলার খান্দ্রা গ্রামে তখন চলছে মিষ্টি বিতরণ, নাচ গান,তার গ্রামের বাড়ির বাইরে তখন ভর্তি গাড়ির লাইন। সাংবাদিকদের ভিড় বাড়ির বাইরে। পুরো গ্রাম যেন তার বাড়ির সামনে হাজির।
সাংবাদিকরাই নীরজের বাড়িতে প্রথম খবর দেন নীরাজ ৮৭.৫৮ মিটার জ্যাভেলিন থ্রো তে সোনার পদক জিতেছেন। এদিকে নীরাজের মা সরোজ বালা দেবী ছেলের ঘরে ফেরার অপেক্ষায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে রয়েছেন। তাঁর সোনার ছেলে ঘরে ফিরলে নিজের হাতে ছেলের প্ৰিয় দেশি ঘি দিয়ে চুরমা করে খাওয়াবেন।
আরও পড়ুন ‘সোনার ছেলে’র জন্য পুরস্কারের ছড়াছড়ি, কোটি কোটি টাকায় ভাসবেন নীরজ
সোনা জয়ী ভাইপোর বাড়িতেই রয়েছেন তাঁর কাকা ভীম চোপড়া। এক সাক্ষাৎকারে ভীম চোপড়া জানিয়েছেন, "নীরজের এই জয়ের আনন্দ আমি শব্দে প্রকাশ করতে পারব না। এতটাই খুশি হয়েছি। ওর সঙ্গে এখনও কথা বলতে পারিনি। আশা করি ও সময় পেয়েই ফোন করবে আমাদের। বাড়িতে এখন প্রচুর লোক। ভয়ঙ্কর একটা ব্যস্ততা চলছে। আমরা সবাই নীরজের ফেরার অপেক্ষায় আছি।"
যেহেতু একদম ছোট থেকে নীরজকে দেখছেন তাঁর কাকা, তাই তিনি জানতেন যে, নীরজ অলিম্পিক্সে চমকে দেবেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, "ছোট থেকেই নীরজ খেলাধুলোয় খুবই ভাল। ১০ বছর বয়স থেকেই অলিম্পিক্সের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছিল। আমাদের পুরো ভরসা ছিল নীরাজ সোনা পাবেই। আমরা নিশ্চিত ছিলাম ও ভাল ফল করবে। কারণ নীরজ প্রচুর পরিশ্রম করেই এই সাফল্য অর্জন করেছে।"
নীরজের সোনালি সাফল্যে গোটা দেশে আজ খুশির হাওয়া। সত্যিই ৭ অগাস্ট ভারতীয় ক্রীড়ার ইতিহাসে সোনার হরফেই লেখা থাকবে। নীরজের এই সাফল্যে গোটা দেশের সঙ্গে খুশির আমেজে গা ভাসিয়েছে নীরজের ছোট্ট গ্রাম।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন