ছোট্ট মেয়েটির নাম অর্শিয়া। বয়স মাত্র ৮ বছর। এর মধ্যেই আন্তর্জাতিক দাবা প্রতিযোগিতায় ভারতের জন্যে সোনার মেডেল জিতে দেশে রীতিমত হইচই ফেলে দিয়েছে সে।
চলতি মাসের ২০ তারিখ থেকে উজবেকিস্তানের তাসখন্দে অনুষ্ঠিত এশিয়ান স্কুল দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে ব্লিটজ ইভেন্টে সোনা জিতেছে সে। এছাড়া স্ট্যান্ডার্ড ইভেন্টে ব্রোঞ্জ মেডেল এবং র্যাপিড ইভেন্টে চতুর্থ স্থান তার দখলে। এবছর এই চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের দখলে একমাত্র সোনার মেডেলটি অর্শিয়ারই।
তবে লক্ষ্যভেদ সবেমাত্র শুরু হয়েছে। বড় হয়ে গ্র্যান্ডমাস্টার বিশ্বনাথন আনন্দের মত হতে চায় অর্শিয়া। একজন মহিলা গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা তার। তাই দিল্লিতে আগামী ৭ জুলাই শেষ হতে চলা কমনওয়েলথ চ্যাম্পিয়নশিপে এবং আগামী বছর জর্জিয়ায় বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে দেশের জন্যে সোনা জিততে বদ্ধপরিকর অর্শিয়া।
আরও পড়ুন, শ্রীলঙ্কার ক্যাপ্টেনকে কি ভিকি কৌশলের মতো দেখতে? প্রশ্ন আইসিসি-র
উত্তরপূর্ব ভারতের ছোট রাজ্য ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় থাকে অর্শিয়া। তার বাবা পূর্ণেন্দু দাস বিএসএনএল-এর কর্মচারী, মা অর্ণিশা নাথ দাস গৃহিণী। পরিবারের কেউই কখনও সেভাবে দাবা খেলেন নি।
ল্যাপটপ কম্পিউটারে দাবা খেলা দেখে তিন বছর আগে শখ জাগে। তারপর শপিং মল-এ মায়ের সাথে ঘুরতে ঘুরতে দাবার বোর্ড দেখে তার নাছোড় আবদার, এই খেলনাটা তার চাই-ই। সেই শুরু; তারপর গত তিন বছরে বিজয়ওয়াড়ায় ২০১৭ অনূর্ধ্ব-৭ ন্যাশনাল গার্লস চ্যাম্পিয়নশিপ, টেলিগ্রাফ চ্যাম্পিয়নশিপ, নর্থ-ইস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ - সবেতেই মেডেল জিতেছে অর্শিয়া, জানালেন মা অর্ণিশা।
তার বাবা পূর্ণেন্দুবাবু তো সোজা বলে দিলেন, মেয়ের সাফল্যের সম্পূর্ণ কৃতিত্ব তার নিজের এবং তার কোচ প্রসেনজিৎ দত্তের। নিজের সময়ে প্রসেনজিৎ দত্ত খোদ মারাত্মক প্রতিভাবান দাবাড়ু্ ছিলেন। পরিবারের আর্থিক অনটনের টানাপোড়েনে প্রায় এক দশক আগে খেলা ছেড়ে দাবা প্রশিক্ষণে লেগে পড়েন। আজকে দিল্লিতে ম্যাট্রিক্স দাবা একাডেমি নামে তার প্রখ্যাত দাবা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে।
তবু রাজ্যের টানে কয়েক মাস পরপরই চলে আসেন ত্রিপুরায়। তখন দৈনিক সাত ঘন্টা করে চলে অর্শিয়া ও তার মতই আরও কয়েকজনের কড়া প্রশিক্ষণ। বছরের বাকি সময়ে দিনে দু-তিন ঘন্টা করে তিনি অনলাইন কোচিং করান।
আজ অর্শিয়ার এই সাফল্যে তিনি খুব খুশি। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ডট কম-কে দেওয়া টেলিফোন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ছাত্রীর পারফরম্যান্সে তিনি দারুণ খুশি। সামনের প্রতিযোগিতাগুলোর জন্যে ছাত্রীর জোর প্রস্তুতি চলছে, জানালেন তিনি।