এক সময় এই উপমহাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা ভারত-পাকিস্তান লড়াই দেখতে উন্মুখ হয়ে থাকত। কালের পরিক্রমায় সেই লড়াইয়ে ঝাঁঝ আর নেই। রাজনৈতিক টানাপোড়েনে বহুদিন হলো দুদলের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ হয় না। তাছাড়া ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ হলে এখন পাকিস্তান কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি করতে পারত, সেই প্রশ্ন রয়েই যায়।
তবে গত কয়েক বছরে পাকিস্তানের জায়গা নিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ হলেই গমগমে একটা পরিবশে তৈরি হয়। অনেক সময় সেটা সীমাও লঙ্ঘন করে যায়। আর এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে ২০১৫ বিশ্বকাপ থেকে। ভারত-পাকিস্তান লড়াইয়ের রোমাঞ্চ এখন অনেকটা ভারত-বাংলাদেশে রূপ পেয়েছে। সেটা ছোটদের খেলায় আরো বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ-ভারত সমানে সমান। তবে একটা জায়গায় গিয়ে বাংলাদেশ বারবার মার খাচ্ছে। ফাইনাল।
গত কয়েক বছর হল বড়দের কিংবা ছোটদের ফাইনাল- ভারতের কাছে বাংলাদেশকে হারতে হয়েছে। শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে বাংলাদেশ তো জয়ের খুব কাছে গিয়ে ফিরে এসেছে। এরপর এশিয়া কাপের ফাইনালও হারতে হয়েছে। অনূর্ধ্ব-১৯-স্তরেও একই ঘটনা ঘটেছে। শ্রীলঙ্কায় এশিয়া কাপ যখন জয় দেখছিল বাংলাদেশ তখনই অবিশ্বাস্যভাবে সেই ভারতের কাছে হেরে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, ইংল্যান্ডে অনূর্ধ্ব-১৯ ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালেও বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। সেখানে হারের যন্ত্রণা সইতে হয়েছে।
বাংলাদেশ ফাইনালে উঠলে অবধারিতভাবে সেখানে হাজির ভারত। আর বাংলাদেশ হারছে এটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দৃশ্য একদিন-দুদিনের নয় গত কয়েক বছরের। এবার কি ছবিটা পাল্টাবে? ভারত জয়ের দুঃসাহস কি আকবর আলিরা দেখাতে পারবেন? এসব নিয়ে অঙ্ক কষছে গোটা বাংলাদেশই। কারণ মঞ্চটা এবার বিশাল। এর আগে যে বাংলাদেশ কখনোই বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠতে পারেনি। ছোট-বড় মিলিয়ে সাফল্যের নিরিখে বিচার করতে গেলে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠাটাই বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় সাফল্য।
অবশ্য এই বাংলাদেশ অদম্য। গত কয়েক বছরে এক ভারত ছাড়া কারোর কাছে মাথা নত করেনি আকবররা। তাদের খেলাতেও সেই ছাপ স্পষ্ট। গ্রুপ পর্বে সেরা হয়েই উঠেছিল কোয়ার্টার ফাইনালে। সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকাকে স্রেফ উড়িয়ে সেমিফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। একইভাবে কিউইদের পাত্তা না দিয়ে সেমিফাইনাল জয় করে প্রথমবার অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে লাল-সবুজের দেশ।
নিউজিল্যান্ডের ২১১ রান মাহমুদুল হাসান জয়ের সেঞ্চুরিতে টপকাতে কোনো সমস্যাই হয়নি বাংলাদেশের। ফাইনালেও এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চান আকবর আলী। ফাইনালের মঞ্চে উঠে কোনো ধরণের চাপ নিতে নারাজ বাংলাদেশ অধিনায়ক। ভারতকে সমীহ করে আকবরের পরিস্কার বার্তা, "ওদের অনেক শক্তিশালী মনে হচ্ছে। আমরা আমাদের স্বাভাবিক খেলা খেলতে চাইব। চেষ্টা করব নিজেদের সেরা খেলাটা দেখাতে। তিন বিভাগেই ভালো করতে হবে আমাদের, ওরা যেহেতু খুব ভালো দল।" এখন দেখাই যাক, রবিবার ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ ‘ফাইনাল ভাগ্য’ বদলাতে পারে কি না?
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন
https://t.me/iebangla