India Domestic Cricket Champions: এনিয়ে গত ৭ বছরে তৃতীয়বার ভারতের সবচেয়ে বড় ঘরোয়া ট্রফি জিতল বিদর্ভ, প্রথম ইনিংসে লিডের ভিত্তিতে ম্যাচ ড্র করে চ্যাম্পিয়ন হল। তখন স্টেডিয়ামের ডিজিটাল ঘড়িতে ২:১৫, রোদ চরমে, দারশন নালকান্ডে আদিত্য সারওয়াটেকে মিডউইকেটে সুইপ করে তাঁর অর্ধশতক পূর্ণ করেন। এরপরই, বহু প্রতীক্ষিত ঘোষণা এল— বিদর্ভ তাদের ইনিংস ৩৭৫/৯ রানে ডিক্লেয়ার করে। কেরলের অধিনায়ক জানিয়ে দেন, এই বিরাট রান তাড়া করার কোনও ইচ্ছা তাদের নেই। ম্যাচ ড্র ঘোষণা করা হল, আর প্রথম ইনিংসের লিডের ভিত্তিতে রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল বিদর্ভ।
এরপরই বিদর্ভের খেলোয়াড়রা আনন্দে মাঠে ছুটে আসেন। তাঁরা নালকান্ডে ও যশ ঠাকুরকে ঘিরে উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠৈন। স্মৃতিতে রাখার জন্য হাতে স্টাম্প তুলে নেন। পিচের চারপাশ ঘিরে নাচতে শুরু করেন। স্টাম্প হাতে পুরো মাঠ চক্কর দেয় বিদর্ভ দল। গত বছর মুম্বইয়ের কাছে ফাইনালে হারের হতাশা এই রবিবার বিদর্ভের দূর হয়ে গেল। এনিয়ে তারা তৃতীয়বার রঞ্জি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হল।
প্রতীক্ষিত ফলাফল, ম্যাচের পরিণতি ছিল পূর্বনির্ধারিত
এই ম্যাচের ভাগ্য একপ্রকার নিশ্চিতই ছিল। শেষ দিকের খেলা ছিল যেন সিনেমার মধুরেন সমাপয়েৎ দৃশ্য। যেদিকে কেউ কখনও মনোযোগ দিয়ে কোনওদিনই দেখেনি। এদিনের ম্যাচে বিদর্ভের করুণ নায়ার সকালেই বেশ কয়েকটি রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে আউট হন। তাঁর ১৩২ রানের ইনিংসে এদিন মাত্র ৩ রান যোগ করেছেন এই ব্যাটার। অন্য ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিংও তেমন একটা ভালো মানের ছিল না। যদিও অক্ষয় ওয়াদকর ও হর্ষ দুবের উইকেট হারানোর পর মনে হচ্ছিল, ম্যাচ বোধহয় ঘুরে গেলেও যেতে পারে। কিন্তু, কেরলের মনোবল এতটাই ভেঙে গিয়েছিল যে, ম্যাচের ভাগ্য তারা আগেই মেনে নিল। লম্বা ক্রিকেট মরশুমের ক্লান্তি কেরলের ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষায় ফুটে উঠছিল। এদিন তাঁদের চোখে কোনও আশার আলো ছিল না। নায়ারের আউটেও মনোভাব বদলায়নি কেরলের ক্রিকেটারদের! এই ম্যাচের প্রতি যেন একটা অদ্ভূত উদাসীনতা ছিল তাঁদের চোখমুখে।
বিদর্ভের গ্যালারিতে ছিল আবার অন্যরকম উৎসব
বিদর্ভের খেলোয়াড়দের পরিবার ও বন্ধুরা শিরোপা পাওয়ার প্রতীক্ষাতেই যেন ছিলেন। উল্লাসের অপেক্ষা করছিলেন। প্রতীক্ষা পূরণ হতেই তাঁদের হাততালির শব্দে গোটা মাঠ ভরে ওঠে। আসলে বিদর্ভের দর্শকরা জানতেন, গতকালই আসল কাজটা হয়ে গিয়েছে। আজ তাঁদের জন্য শুধুই আনন্দ অপেক্ষা করছে।
বিদর্ভের অবিস্মরণীয় জয়: অপ্রতিরোধ্য চ্যাম্পিয়ন
২০২৪-২৫ মরশুমের শিরোপা হয়তো তাদের প্রথম ট্রফির মত আনন্দ দিতে পারেনি। তবে, রঞ্জি ট্রফি জয়, সবসময়ই আবেগের। বিদর্ভ এবারের মরশুমে ১০ ম্যাচের মধ্যে ৮টিতেই সরাসরি জিতেছে, অপরাজিত থেকেছে পুরো টুর্নামেন্টে। তারা সহজেই জয় নিশ্চিত করতে পারত, কিন্তু, সেই রাস্তার বদলে সাবধানী পথে হেঁটেছে। আর, কেরলের ম্যাচে ফেরার যাবতীয় রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছিল। তাদের এই হিসেবি পথচলাই রবিবার প্রমাণ করে দিল যে, বিদর্ভ আর আন্ডারডগ নয়, বরং এখন ভারতীয় ঘরোয়া ক্রিকেটের শক্তিশালী দলগুলোর একটি। তাদের ৩টি রঞ্জি ট্রফি আছে। যা বাংলা, তামিলনাড়ু বা হায়দরাবাদ, কারও নেই। অনেকেই যুক্তি দেখাতে পারেন, বড় দলগুলোর তারকারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যস্ত থাকায় বিদর্ভ কিছুটা সুবিধা পেয়েছে। তবে, এটাও মনে রাখা দরকার যে, সত্যিকারের শক্তিশালী দল তৈরি করা মানেই ভবিষ্যতের তারকাদের তৈরি করা। যা বিদর্ভ এবার নিখুঁতভাবে করেছে।
বিদর্ভের ভবিষ্যৎ তারকারা
বিদর্ভের এবারের রঞ্জি সাফল্যের পিছনে তিন তরুণ প্রতিভার বিরাট অবদান রয়েছে:
1️⃣ যশ রাঠোর (২৪ বছর বয়সি) - ৯৬০ রান, গড় ৫৩.৩৩
2️⃣ দানিশ মালেওয়ার (২১ বছর বয়সি) - ৭৮৩ রান, গড় ৫২.২০
3️⃣ হর্ষ দুবে (২২ বছর বয়সি) - ব্যাটিংয়ের ব্যাকরণ এবং আধুনিক কায়দার চমৎকার সংমিশ্রণে তৈরি ব্যাটার
আরও পড়ুন- নিউজিল্যান্ডের ২য় উইকেটের পতন, ফিরলেন ইয়ং
এই তিন জনের মধ্যে যশ রাঠোরকে বলা হয় 'স্টুডিয়াস ওয়ান', কারণ তিনি সবসময় নিজের ব্যাটিং নিয়ে চর্চা করেন, ভিডিও বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিজের ভুল খুঁজে বের করেন।
দানিশ মালেওয়ার চুপচাপ থাকেন, কিন্তু ভয়ংকর ব্যাটসম্যান। তিনি শান্ত স্বভাবের, তবে ক্রিকেটের বিষয়ে কথা বলতে শুরু করলে থামতে চান না!
হর্ষ দুবে দলের 'বুদ্ধিমান খেলোয়াড়', যাঁকে বিদর্ভের কোচিং স্টাফ 'আমাদের অশ্বিন' বলে ডাকেন, কারণ তিনি পিচ বুঝে নিজেকে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারেন।
এই তিন তরুণ ক্রিকেটারের হাত ধরে বিদর্ভ শুধু এবার চ্যাম্পিয়নই হল না, বরং তারা ভবিষ্যৎ ভারতীয় ক্রিকেটের জন্যও আশার আলো ছড়াল বলে, মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।