ল্যান্ডমার্ক টেস্টে খেলতে নামছেন বিরাট কোহলি। মোহালিতে। আর সুদূর কলকাতায় বসে ক্ষণে ক্ষণে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠছেন আবদুল মুনায়েম। তাঁর 'ছাত্র'-ই মোহালিতে ঐতিহাসিক টেস্ট ম্যাচে খেলতে নামছেন যে!
বাঙালি কোচ অবশ্য মাত্র দুটো ম্যাচেই কোহলি নামের ২১ বছরের তরুণকে কোচিং করানোর সুযোগ পেয়েছিলেন। সদ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হাতেখড়ি হয়েছে কোহলির। ২০০৮-এ অভিষেকের পরে সটান কলকাতার ক্লাব ক্রিকেট খেলতে চলে এসেছিলেন, ২০০৯-এ। মোহনবাগানের জার্সিতে নেমে পড়েছিলেন কলকাতার মাঠে।
সেই ম্যাচেই সবুজ মেরুনে ক্রিকেট শিক্ষক ছিলেন আবদুল মুনায়েম। তিনি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে ১৩ বছর আগের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে বারবার নস্ট্যালজিয়ায় ডুব দিলেন। বলছিলেন, "কোহলি যে স্পেশ্যাল ট্যালেন্ট ওই ম্যাচে দেখেই বুঝতে পারি আমরা। দুটো ম্যাচে খেলার আমন্ত্রণ পেয়েছিল ও। এখন ওঁর ব্যাটিংকে গোটা বিশ্ব কুর্নিশ করে। মোহনবাগানে খেলার সময়েও ওঁর প্রতিভার ঝলক আমরা টের পাই।"
আরও পড়ুন: জিমন্যাস্টিক ছেড়ে দিয়েছেন রিও মাতানো দীপা! সাসপেন্ড হতেই বিরাট ঘোষণা কোচ নন্দীর
টাউন ক্লাবের বিপক্ষে খেলা ছিল পি সেন ট্রফির ফাইনালে। মোহনবাগানের জার্সিতে তখন অনেক বড়বড় নাম- ঋদ্ধিমান সাহা, মনোজ তিওয়ারি। টাউন ক্লাবের হয়ে খেলতে এসেছিলেন ইশাঙ্ক জাগ্গি, সৌরভ তিওয়ারিরা। মহম্মদ শামি সেই সময় ময়দানি ক্রিকেট সার্কিটে সামি আহমেদ। টাউন ক্লাবের হয়ে যদিও তিনি কোহলির বিরুদ্ধে বল করেননি সেই ম্যাচে। কোহলির তখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিজ্ঞতা বলতে মাত্র পাঁচটা একদিনের ম্যাচ এবং আইপিএলে আরসিবির নতুন রিক্রুট হিসাবে দুই মরশুমে খেলা।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া কোহলি পি সেন ট্রফির আমন্ত্রণে খেলার ডাক উপেক্ষা করতে পারেননি। সৌরভ ছাড়াও ঐতিহ্যবাহী এই টুর্নামেন্টে খেলেছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, শচীন তেন্ডুলকর, ধোনি এমনকি চামিন্দা ভ্যাসের মত মহাতারকারাও। তাই কলকাতার ক্রিকেট টুর্নামেন্টের খেলার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি কোহলি।
আর সেই বছর একুশের কোহলিই পি সেনের ফাইনালে কোচ আবদুল মুনায়েমের বাহবা আদায় করে নিয়েছিলেন। কীভাবে? বৃহস্পতিবার ছাত্রের বিষয়ে জানতে গিয়ে কোহলিট বাঙালি কোচ বলছিলেন, "পি সেন ট্রফি বরাবর প্রচন্ড গরমে খেলা হয়। কোহলি সেই মারাত্মক গরমে ৮৯ রানে ব্যাট করছিল। ভীষণ গরমে ও প্রায় নিঃশেষিত হয়ে গিয়েছিল। উঠে আসতে চাইছিল। সেই সময় ওঁকে ইঙ্গিতে বোঝাই, হান্ড্রেড থেকে মাত্র দুটো স্ট্রোক দূরে রয়েছে ও। তারপরেই ও পরপর দুটো ছক্কা হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করে নেয়।"
আরও পড়ুন: পোল্যান্ড বর্ডার পেরোতে পারব কিনা জানি না! আতঙ্কের ভিডিওয় EXCLUSIVE ইউক্রেন ফিজিও
"এরকম দাপটের সঙ্গে যে বোলারদের শাসন করতে পারে, সে যে ভবিষ্যতের মহাতারকা হয়ে উঠবে, এ আর আশ্চর্য কী! তবে তখনই বুঝতে পারিনি যে ও এই পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। এরকম ট্যালেন্ট নিয়ে একশো কেন, আরও অনেক টেস্ট খেলবে ও।" বলছিলেন ময়দানের নামি ক্রিকেট কোচ।
সেই ম্যাচে কোহলি শেষ পর্যন্ত ১২১বলে ১৮৪ রানের তান্ডব চালিয়ে যান। মোহনবাগানও টাউন ক্লাবের বিরুদ্ধে জেতে ৯৭ রানের ব্যবধানে।
শুক্রবার কোহলি যখন মোহালির সবুজ পিচে নামবেন, কলকাতা থেকে বুকে হাত রাখবেন আবদুল মুনায়েম নামের ক্রিকেট প্রশিক্ষকও। কোহলি-র কোচ হয়েই ফের একবার টিভির সামনে বসবেন তিনি।