Fans chants ‘RCB, Kohli’: রঞ্জি ট্রফিকে কেন্দ্র করে দিল্লিতে 'কোহলি' ঝড় উঠল। রঞ্জি ম্যাচে প্রায় দর্শকশূন্য থাকে স্টেডিয়াম। সেখানে কোটলায় ১৫ হাজার দর্শক ভিড় করলেন বিরাট কোহলিকে দেখতে। ম্যাচ চলাকালীন কখনও 'আরসিবি' কখনও আবার 'কোহলি-কোহলি' বলে স্লোগানও উঠল। রেলওয়ের সঙ্গে দিল্লির খেলা দেখতে সকাল ৭টা থেকেই ভক্তরা ১৬ এবং ১৭ নম্বর গেটের বাইরে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। ভিড় এতটাই হয় যে, ব্যারিকেড ভেঙে যায়। বাধ্য হয়ে আয়োজক ডিডিসিএ আরও গেট এবং স্ট্যান্ড খুলে দেয় দর্শকদের জন্য।
কোহলি তার মধ্যেই অবিচল ছিলেন। ২০১২ সালের পর এই ফের তিনি দিল্লির হয়ে রঞ্জি ম্যাচ খেলছেন। ম্যাচের তখন প্রথম ঘণ্টা পেরোয়নি। তার মধ্যেই দেখা গেল একজন দর্শক যে কোনও ভাবেই হোক মাঠে ঢুকে পড়েছেন। আর, খেলার মধ্যেই দৌড়ে বিরাট কোহলির কাছাকাছি চলেও গিয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দিল্লি মেট্টো থেকে স্টেডিয়াম- দলে দলে লোক বৃহস্পতিবার চলার পথে 'কোহলি-কোহলি' স্লোগান দিয়েছেন। দিল্লি মেট্রোর ভায়োলেট লাইনেও বৃহস্পতিবার ভিড় ছিল অন্যদিনের তুলনায় বেশি।
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর জার্সি পরে, আইনের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র তেজস এসেছিলেন। সঙ্গে, তিন বোতল জল আর মোড়ানো স্যান্ডউইচ। কোহলি ভক্ত তেজস মজা করেই বললেন, 'আমরা এখানে ভারতীয় রেলের খেলা দেখতে এসেছি।' সোনেপত থেকে তেজসের সঙ্গেই খেলা দেখতে এসেছিলেন তাঁর বন্ধু নির্বাণ। তিনি আবার তেজসকে সংশোধন করে দিয়ে বললেন, 'আমরা এখানে কেবল একজনের জন্যই এসেছি। তিনি হলেন বিরাট কোহলি। আমরা পরে ক্লাস করব। কিন্তু, বিনা পয়সায় কোহলিকে দেখার সুযোগ ছাড়ব না।'
পেট্রোল পাম্পের কাছে, গেট নং ৫ থেকে বেরোনোর পর, বুরারি থেকে আসা আধডজন ছেলে নিজেদের 'নর্দার্ন বয়েজ' বলে পরিচয় দিলেন। স্টেডিয়ামের বাইরে বিরাটের জার্সি বিক্রি হচ্ছিল। 'নর্দার্ন বয়েজ' দলের নেতা গণেশ। তিনি বললেন, 'কে রঞ্জি দেখবে! আমরা এখানে বিরাট কোহলির জন্য এসেছি।' অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামের ১৬ এবং ১৭ নম্বর গেটের বাইরে সকাল ৭টা থেকে দর্শকরা লাইনে দাঁড়াতে শুরু করেছিলেন। দিল্লি এবং জেলা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (ডিডিসিএ) গৌতম গম্ভীর স্ট্যান্ডের দুটি গেটের জন্য বিনামূল্যে প্রবেশের ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু, সকাল ৯টায় দর্শকদের ভিড়ের চাপে ব্যারিকেড ভেঙে যাওয়ার পর ডিডিসিএ ১৮ নম্বর গেটটিও বাধ্য হয়ে খুলে দেয়।
গৌতম গম্ভীর স্ট্যান্ড ভিড়ে পরিপূর্ণ হয়ে গেলে, ডিডিসিএ-কে বিষণ সিং বেদী অ্যালকোভও খুলতে হয়। কিন্তু, সেটাও ১০ মিনিটের মধ্যে ভরে যায়। এই প্রবল ভিড়ের মধ্যেই এদিনের ম্যাচে দিল্লি প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। ম্যাচ শুরু হওয়ার পরও ভিড় বাড়তেই থাকে। ১৬ নম্বর গেটের বাইরে ভিড় সামলাতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন নিরাপত্তারক্ষী এবং দিল্লি পুলিশের কর্মীরা। ৫ বছরের এক শিশু-সহ এক দম্পতি মাঠে ঢোকার সময় পড়ে গিয়ে আহত হয়। পুলিশের একটি বাইক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একজন পুলিশ কনস্টেবলের পায়ে ব্যান্ডেজ করতে হয়।
সুপারস্টার কোহলি মাঠের মধ্যেই একটু ওয়ার্ম-আপের চেষ্টা করতেই দর্শকরা আনন্দে লাফিয়ে ওঠেন। স্টেডিয়াম 'কোহলি', 'কোহলি' ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে। দিল্লির অধিনায়ক আয়ুষ বাদোনি ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর দর্শকরা তুমুল হইচই শুরু করেন। সিদ্ধান্ত শর্মা রেলওয়ের ওপেনার অঞ্চিত যাদবকে ফেরানোর পর, ফের উত্তাল হয়ে ওঠে স্টেডিয়াম। ম্যাচের বাকি সময়েও স্টেডিয়ামে এই কোহলি ঝড় চলতেই থাকে।
তবে, সেই ঝড়ের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল ম্যাচের একাদশ ওভারের পরবর্তী অধ্যায়। একজন ভক্ত মাঠে ঢুকে কোহলির দিকে দৌড়তে শুরু করেন। নিরাপত্তারক্ষীরা পালটা সেই ভক্তকে ধরার জন্য দৌড়তে শুরু করলে প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক নিরাপত্তারক্ষীদের শান্ত করেন। ওই ঘটনার পর, স্টেডিয়ামে নিরাপত্তা কর্মীর সংখ্যা বাড়ানো হয়। একডজন পুলিশ কমান্ডো স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেন। তাঁদের গ্যালারি পাহারার কাজে মোতায়েন করা হয়।
আরও পড়ুন- ধোনির টিম ইন্ডিয়ায় পরিবর্তকেই এবার KKR-এর কোচিংয়ে প্রস্তাব! সরাসরি প্রত্যাখ্যান বাঙালি তারকার
জিও সিনেমার হয়ে এই ম্যাচে ধারাভাষ্যকারের দায়িত্ব পালন করছিলেন প্রাক্তন ভারতীয় ওপেনার ডব্লিউভি রমন। তিনি দর্শকদের মধ্যে কোহলির প্রতি বিরাট আবেগের সঙ্গে শচীন টেন্ডুলকরের প্রতি দর্শকদের আবেগের তুলনা করেন। রমন বলেন, 'এটাই ঠিক বললাম, তাই না? আমি জানি না শেষ কবে এত লোককে রঞ্জি ট্রফির ম্যাচ দেখতে দেখেছি!'