Kohli in Ranji team: রঞ্জি ট্রফির জন্য মঙ্গলবার দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে অনুশীলন সারলেন কিংবদন্তি ভারতীয় ব্যাটার বিরাট কোহলি। পুরনো বন্ধুদের অনেকের সঙ্গেই তাঁর দেখা হল। শুভেচ্ছা বিনিময় পালা চলল। এক ঘণ্টা ধরে ব্যাটিং অনুশীলন করলেন কোহলি। তার আগে ফুটবলও খেললেন।
মঙ্গলবার সকাল ৯টায়, অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামের বীরেন্দ্র সেওয়াগ গেটের বাইরে সংবাদমাধ্যমের উপস্থিতি দেখে অবাক হয়ে যান দিল্লি পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর প্রদীপ রানা। তিনি ফোনে তাঁর উর্ধ্বতন কর্তাকে সতর্ক করে বলেন, 'স্যার আজকের জন্য আমাদের আরও নিরাপত্তার দরকার হবে, দয়া করে আরও বাহিনী পাঠান।' কয়েক মিনিট পরে, কোটলা স্টেডিয়ামের বাইরে টিভি রিপোর্টার এবং ফটো-সাংবাদিকদের মধ্যে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। তাঁরা বিরাট কোহলির গাড়ি স্টেডিয়ামে প্রবেশ করছে, এটার সেরা শট নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
১২ বছর পর দিল্লির হয়ে কোহলি রঞ্জি ট্রফি ম্যাচ খেলছেন। দিল্লি তাদের শেষ গ্রুপ ম্যাচে ৩০ জানুয়ারি রেলওয়ের মুখোমুখি হবে। দিল্লির টিম ম্যানেজার মহেশ ভাটি বিরাট কোহলি প্যাভিলিয়নের বাইরে কোহলিকে অভ্যর্থনা জানান। একটি প্যাকেট তুলে দেন এবং দুজনেই হাসিতে ফেটে পড়েন। ভাটি এবং কোহলির মধ্যে রসিকতা পরবর্তী তিন ঘণ্টা ধরে চলতে থাকে। ভাটি গর্বের সঙ্গে বলেন যে তিনি তাঁর অনূর্ধ্ব ১৬-র দিনগুলো থেকেই ভারতের কিংবদন্তি খেলোয়াড় কোহলিকে চেনেন।
দিল্লির টিম ফিজিও সঞ্জীব চৌধুরী কয়েকজন পরিচিত মুখকে দেখে বলেন, 'আজ আরও বেশি মিডিয়ার ভিড়। সবাই জানে কোহলি কোন নেটে অনুশীলন করবে।' কোহলি ভাটির সঙ্গে তাঁর নামে নামকরণ করা প্যাভিলিয়ন থেকে নেমে পড়েন। ফুটবল খেলতে থাকা দিল্লি দল কিছুক্ষণের জন্য থামে। সবার মাথা কোহলির দিকে ঘুরে যায়। কারণ, এই খেলোয়াড়দের সকলের কাছেই কোহলি আদর্শ খেলোয়াড়। নবদীপ সাইনি (ভারতীয় দলে কোহলির সতীর্থ) ও হিম্মত সিং (আরসিবিতে এক মরশুম খেলেছেন) ছাড়া, কোহলি বর্তমান দিল্লি দলের কারও সঙ্গেই খেলেননি।
সকলের সঙ্গে করমর্দনের পর, কোহলির কাছে আসেন দিল্লি দলের প্রধান কোচ শরণদীপ সিং ও ব্যাটিং কোচ বান্টু সিং। কোহলি সাইনির সঙ্গে সার্কেল ফুটবল খেলেন। কিছুক্ষণ পর, দলের সদস্যরা মাঠজুড়ে দৌড়য়। টিম ম্যানেজার ভাটি মাঠে আসা-যাওয়া করছিলেন। ২০ সদস্যের দিল্লি দলকে দুই ভাগে ভাগ করে ফুটবল খেলানো হয়। প্রশিক্ষক চৌধুরী রেফারির ভূমিকা পালন করেন। এই ১৫ মিনিটের মধ্যে দিল্লির সব খেলোয়াড় কোহলির পা থেকে বারবার বল কাড়ার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। কিন্তু, ৩৬ বছর বয়সি কোহলি তাঁদের সবাইকেই টেক্কা দিয়ে যান।
কিছুক্ষণ পরে, চৌধুরী দিল্লির খেলোয়াড়দের ওয়ার্ম-আপ করার নির্দেশ দেন। দিল্লির অধিনায়ক আয়ুশ বাদোনি সাবধানতার সঙ্গে কোহলির দিকে এগিয়ে যান এবং ওয়ার্ম-আপের সময় কোহলির পাশে দাঁড়ান। ওয়ার্ম-আপের পরে, কোহলি এবং বাদোনি ১০টা বেজে ১৫ মিনিট থেকে হিল বি-তে নেটে অনুশীলন শুরু করেন। এই সময়ই কোহলি একঘণ্টা ব্যাটিং প্র্যাকটিস করেন।
১০টা ৪০ মিনিটে কোহলি অন্য নেটে চলে যান। যেখানে দুই বাঁ-হাতি স্পিনার হর্ষ ত্যাগী, সুমিত মাথুর এবং অফ স্পিনার শিবম শর্মা বল করছিলেন। কোহলি স্পিনারদের ভালোভাবে খেলার চেষ্টা চালান। তিনি ফুটওয়ার্কের ওপর জোর দিচ্ছিলেন।
মিনিট ২০ পরে, কোহলি পেসারদের নেটে যান। সেখানে সাইনি, সিদ্ধান্ত শর্মা, মানি গ্রেওয়াল, রাহুল গেহলট ও মায়াঙ্ক গুসাইনের বল খেলেন। বেশ কিছু বল তিনি মারতে পারেননি। এই সময় দেখা যায় যে কোহলি পেসারদের বলে স্কয়ার কাট এবং স্কয়ার ড্রাইভ মারছেন। যা অতীতে তাঁকে কখনও করতে দেখা যায়নি।
কোহলি যখন দিল্লির বোলারদের বিরুদ্ধে অনুশীলন করছিলেন, তখন ৮ বছর বয়সি কবির খান তাঁর হাতে কোহলির একটি স্কেচ নিয়ে তাঁর বাবা, দিল্লির প্রাক্তন ক্রিকেটার শাভেজ খানকে জিজ্ঞাসা করছিল, 'বিরাট কোহলি কি সত্যিই তোমার বন্ধু?।' খান মার্কেটে এখন একটি স্পোর্টস শপ চালান শাভেজ। তিনি ছেলের দিকে হেসে বলেন, 'ব্যাটিং শেষ করার পর ও আমাদের সঙ্গে দেখা করবে।'
শাভেজ ঠিকই বলেছিলেন। কোহলির ব্যাটিং অনুশীলন শেষ হয়ে গেলে ব্যাট, প্যাড এবং গ্লাভস কিটে রাখতে রাখতেই কিংবদন্তি ভারতীয় ক্রিকেটার শাভেজকে ডাকতে শুরু করেন। দিল্লির হয়ে অনূর্ধ্ব-১৬ এবং অনূর্ধ্ব-১৯ ম্যাচে কোহলির সঙ্গে খেলা শাভেজ সেই সময় তাঁর ৮ বছরের ছেলের কথা যেন ভুলেই গিয়েছিলেন। শাভেজের ছেলে নেটের বাইরে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে গিয়েছিল, দেখছিল যে তাঁর বাবা বিরাট কোহলির বন্ধু। কোহলি শাভেজকে জড়িয়ে ধরেন। ম্যানেজার ভাটিকে ফোন করেন। শাভেজের গালে আলতো টোকা দেন। তারপর ভাটি, কোহলি আর শাভেজ গল্পে মেতে ওঠেন।
কোহলি শাভেজের ছেলের স্কেচে একটি অটোগ্রাফ দেন। সাংবাদিকরা শাভেজের ছেলের বাইট নেন। তাঁরা শাভেজের কাছ থেকেও কোহলির সঙ্গে তাঁরা পুরোনো দিনের গল্প শুনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, শাভেজ মুখ খুলতে রাজি হননি। ব্যাটিং অনুশীলন শেষ করার পর, কোহলি পরের ১৫ মিনিট ধরে ক্যাচ অনুশীলন করেন।
আরও পড়ুন- ছোলে-ভাতুরে খাবেন না, রঞ্জিতে খেলতে নামার আগেই 'না' করলেন কোহলি
প্রশিক্ষক চৌধুরী অনুশীলন শেষ করার পর সাংবাদিকরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, 'এত দীর্ঘ সময় ধরে অনুশীলনের কারণ কী?' দিল্লি কোচ বলেন, 'সবাই কোহলিকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েই বেশিক্ষণ অনুশীলন করেছে।' ডিডিসিএ-র একজন কর্তা জানান, আড়াই ঘণ্টা ধরে অনুশীলন হয়েছে। রঞ্জি খেলার আগে এত দীর্ঘসময় ধরে অনুশীলন সাধারণত করা হয় না। কোহলি আসাতেই ছেলেরা উজ্জীবিত হয়ে বেশিক্ষণ অনুশীলন করেছে। তবে, এত দীর্ঘসময় অনুশীলনের পরও কোহলির মধ্যে কোনও বিরক্তির ছাপ ছিল না। তিনি লাইন দিয়ে অনুরাগীদের সই বিলোচ্ছিলেন।