ললাটলিখন আগেই পড়তে পারছিলেন। নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া ছিল সময়ের অপেক্ষা। তার আগেই টি২০-তে সরে দাঁড়ালেন তারকা। বিরাট কোহলির টি২০ নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর বেশ কয়েক ঘন্টা অতিক্রান্ত। তবে আলোচনা থামছেই না।
জানা যাচ্ছে, বোর্ডের সঙ্গে একের পর এক ইস্যু নিয়ে মনোমালিন্য চলছিলই। যার চরমে পৌঁছয় রোহিতকে সীমিত ওভারের সহ অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব কোহলি বোর্ডকে দেওয়ার পরেই। রোহিতের বয়সের যুক্তি দেখিয়ে কেএল রাহুলকে ভাইস ক্যাপ্টেনশিপের দায়িত্ব দিতে বলেছিলেন। তবে বোর্ড সেই কথা কার্যত কানেই তোলেনি।
আরও পড়ুন: পারলে ওয়ানডের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেখাও! সৌরভের বোর্ডকেই যেন সরাসরি চ্যালেঞ্জ কোহলির
বোর্ডের এক সূত্র সংবাদসংস্থা কে জানিয়েছেন, "রোহিতকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি মোটেই ভালভাবে নেয়নি বোর্ড। বোর্ডের ধারণা হয়ে যায়, বিরাট কখনই নিজের উত্তরসূরি বাছাই করতে চাইছেন না।"
কোনও সন্দেহ নেই ভারতীয় ক্রিকেটের অন্দরমহলে নেতা হিসেবে কোহলি নয়, রোহিতকেই কার্যত মান্যতা দেন জুনিয়র ক্রিকেটাররা। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের জার্সিতে টি২০ নেতা হিসেবে নিজেকে বারবার প্রমাণ করেছেন। আইপিএলে সাফল্যে ছাপিয়ে গিয়েছেন স্বয়ং ধোনিকেও।
কোহলি এমন অবস্থায় রোহিতকেই সরিয়ে দিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতে চেয়েছিলেন। বোর্ড এতেই অসন্তুষ্ট হয়। এমনিতেই কোহলির একাধিক ইস্যু নিয়ে বোর্ডের সঙ্গে খটাখটি চলছিল বেশ কিছুদিন ধরে। ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে জোড়া স্পিনার খেলানো হোক বা গোটা ইংল্যান্ড সিরিজে বিশ্বের একনম্বর স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিনকেন বাইরে রেখে দল সাজানো- মোটেই ভালভাবে নেয়নি বোর্ড। ২০১৯ ওয়ার্ল্ড কাপের আগে চার নম্বর ব্যাটিং পজিশনে কাউকে থিতু হতে দেননি বলেও অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন: কোহলি মূল্যবান সম্পদ! নেতৃত্ব ছাড়ার বিরাট ঘোষণায় টুপি খোলা কুর্নিশ সৌরভের
চলতি বছরের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ায় দল নির্বাচন সংক্রান্ত যাবতীয় ক্ষমতা একচ্ছত্রভাবে পেয়েছিলেন তিনি। তবে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে এডিলেডে ৩৬ অলআউটের পরে। তারপরে পিতৃত্বকালীন ছুটিতে দেশে ফিরে আসার পরে দলের রিমোট কন্ট্রোলটাই হারিয়ে ফেলেন।
কোহলির অনুপস্থিতিতে দলের জুনিয়র ক্রিকেটাররা স্মরণীয় এক সফর উপহার দেন ভারতীয় ক্রিকেটকে। কোহলিকে দেখিয়ে দেওয়ার জন্যই যেন জ্বলে ওঠেন দলের উঠতি তারকারা।
ভারতীয় শিবিরে কানাঘুষোয় শোনা যাচ্ছে, কোহলির বিরুদ্ধে কার্যত এককাট্টা হয়ে পড়ে ড্রেসিংরুম। সতীর্থদের সমর্থনও হারিয়ে ফেলছিলেন কোহলি। বোর্ডের এক কর্তা এক জানিয়েছেন, "কোহলির মস্ত বড় সমস্যা ছিল যোগাযোগবিহীনতা। ধোনির ঘর ২৪ ঘন্টা খোলা থাকত নতুন, যুব, উঠতি ক্রিকেটারদের জন্য। ধোনির ঘরে ঢুকে যেকোনও সময় নতুনরাও পিএস৪ দেখতে পারত, আড্ডা দিতে পারত।"
আরও পড়ুন: জাতীয় দলের নেতৃত্ব ছাড়লেন কোহলি! IPL-এর আগেই মহা ঘোষণায় তোলপাড় ক্রিকেট
কোহলির ক্যাপ্টেনশিপ চাক্ষুস প্রত্যক্ষ করা এক প্রাক্তন তারকা সংবাদসংস্থাকে জানিয়েছেন, "মাঠের বাইরে কোহলি কোনওরকম যোগাযোগ রাখতেন না সতীর্থদের সঙ্গে। রোহিতের নেতৃত্বের ধরণ অনেকটা ধোনির মত। বাইরে একসঙ্গে আউটিংয়ে যায় জুনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে। কঠিন মুহুর্তে সেই সমস্ত ক্রিকেটারদের পিঠে আলতো চাপড় দিয়ে পাশে থাকার বার্তা দেয়। যুব ক্রিকেটারদের মানসিক অবস্থা কীরকম হয়, তা বিলক্ষণ বুঝতে পারে রোহিত।"
সেই ক্রিকেটার আরও বলছিলেন, "কোহলির বিরুদ্ধে সবথেকে বড় অভিযোগ হল, জুনিয়র ক্রিকেটারদের কঠিন সময়ে কোনওভাবেই সমর্থন মেলে না কোহলির। ঋষভ পন্থ যখন ফর্মে ছিল না, কুলদীপ যাদব অস্ট্রেলিয়ায় পাঁচ উইকেট নেওয়ার পরে কার্যত হারিয়েই গেল। এমনকি উমেশ যাদবের মত সিনিয়র ক্রিকেটাররাও সরাসরি কখনও জবাব পাননি, কোনও সিমার চোট না পাওয়া পর্যন্ত কেন তাঁকে ভাবা হচ্ছে না!"
দলের, বোর্ডের সমর্থন হারিয়ে ক্রমশ একা হয়ে পড়ছিলেন কিং কোহলি। সরিয়ে দেওয়ার আগেই তাই কোহলি নিজেই সরে গেলেন। কোচ রবি শাস্ত্রীও টি২০ বিশ্বকাপের পরে সরে দাঁড়াচ্ছেন। তাই কোহলিকে সরিয়ে দেওয়া ছিল সময়ের অপেক্ষা। কালক্ষেপ না করে তাই নিজেই সরে গেলেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন