কোহলি সত্যি কথা বলছেন না। অন্তত এমনটাই দাবি করে বসলেন এবার নির্বাচক কমিটির প্রধান চেতন শর্মা। বিরাট কোহলি বনাম সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিতর্কে সরাসরি বোর্ড প্রেসিডেন্টের পাশে দাঁড়িয়েই চেতন শর্মা বলে দিলেন, টি২০ বিশ্বকাপের আগে কোহলিকে বোর্ডের তরফে নিজের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বলা হয়েছিল।
সৌরভও একই যুক্তি দেখিয়েছিলেন ওয়ানডে নেতা হিসেবে রোহিত শর্মাকে বেছে নেওয়ার পরে। তিনি বলে দেন, কোহলিকে কুড়ি কুড়ি বিশ্বকাপের আগে টি২০-র নেতৃত্ব ছাড়তে বারণ করা হয়েছিল। তবে তা কানে না তোলায় বোর্ডের কাছেও সীমিত ওভারের ক্রিকেটে জোড়া অধিনায়ক হিসেবে চলা সম্ভব ছিল না। তাই একজনকেই সাদা বলের ক্রিকেটে নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: রাহুলের নেতৃত্বে এবার ওয়ানডে খেলবেন কোহলি! বছরের শেষ দিনে বিরাট ঘোষণা BCCI-এর
সৌরভের যে যুক্তি খন্ডন করে আবার কোহলি বলে দিয়েছিলেন, বোর্ডের পক্ষ থেকে তাঁর কাছে নেতৃত্ব ছাড়ার বিষয়ে কোনও অনুরোধই আসেনি। বরং তাঁর পদত্যাগ ভালভাবেই গ্রহণ করে বোর্ড। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাওয়ার আগে প্রেস কনফারেন্সের সেই বিতর্ক এখনও দাউদাউ করে ভারতীয় ক্রিকেটকে পুড়িয়ে চলেছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ওয়ানডে সিরিজের দল ঘোষণার সময় সেই বিতর্কও নতুন করে উস্কে দিলেন প্রধান নির্বাচক চেতন শর্মা। তিনি সাংবাদিকদের বলে দেন, "সেপ্টেম্বরে যখন আমাদের মধ্যে বৈঠক শুরু হয়, তখন সকলেই কার্যত অবাক হয়ে গিয়েছিলাম বিরাটের সিদ্ধান্তে। তখন মিটিংয়ে উপস্থিত সকলেই ওঁকে সিদ্ধান্ত ভেবে দেখার জন্য অনুরোধ করে। সেই সময় আমাদের মনে হয়েছিল, বিরাটের এমন সিদ্ধান্ত টি২০ ওয়ার্ল্ড কাপে ভারতের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলতে পারে। ওঁকে অনুরোধ করা সকলেই বলে, ভারতীয় ক্রিকেটের স্বার্থে ও যেন অধিনায়কত্ব চালিয়ে যায়। সকলেই সেই মিটিংয়ে ছিলেন- বোর্ডের কনভেনার, আধিকারিক সকলেই। তবে ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলায়, আমরাও শেষমেশ সেই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাই।"
আরও পড়ুন: কোহলি vs সৌরভ থেকে শাস্ত্রীর বুক লঞ্চ- ২০২১-এ যে ৫ বিতর্কে দগ্ধ টিম ইন্ডিয়া
এরপরে চেতন শর্মাকে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে জিজ্ঞাসা করা হয়, সেই সময় কী কোহলিকে জানানো হয় যে টি২০-র নেতৃত্ব ছাড়লে ওয়ানডের নেতৃত্বও ছাড়তে হবে? জবাবে চেতন শর্মা বলে যান, "সাদা বলের ক্রিকেটে যে বোর্ড একজনকেই অধিনায়ক দেখতে চায়, সেটা টি২০ ওয়ার্ল্ড কাপের নির্বাচনী বৈঠকে বলার সঠিক সময় ছিল না। আমরা বিশ্বকাপে প্রতিনিধিত্ব করতে চলেছি। সেই সময় কোহলিকে জানানোটা সম্ভব নয় যে- তুমি টি২০-র নেতৃত্ব ছাড়ছ, ওয়ানডের নেতৃত্বও ছেড়ে দাও। টি২০ বিশ্বকাপের পরেও সকলে ওঁকে সেই সিদ্ধান্ত ভেবে দেখার অনুরোধ করেছিল।"
তবে বোর্ডের আধিকারিকরা নয় বরং কোহলিকে ওয়ানডে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার ভাবনা একান্তই নির্বাচক মন্ডলীর। এমন কথাও জানিয়েছেন চেতন। "নির্বাচক কমিটির সকলেই যখন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে যে সাদা বলের ক্রিকেটে দুই অধিনায়ক নিয়ে চলা সম্ভব নয়। সেই সময় আমিই বিরাটকে ফোন করি। সেটা দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের টেস্ট দল বেছে নেওয়ার মিটিং ছিল।"
আরও পড়ুন: ভারতের ঐতিহাসিক জয়ে কোনও অবদানই নেই কোহলির! ব্যাটিং-অঙ্কে লজ্জা পাবে যে কেউ
"বিকাল ৫টার সময় ফোনে ওঁকে জানানো হয় যে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে একজন এবং টেস্টে একজনকে নেতৃত্বের দায়িত্বে রাখা হবে। আমাদের ফোনের কথাবার্তা এরপর ভালই এগোয়। একেবারে নির্বাচনী মিটিংয়ে ওঁকে না জানিয়ে আগাম জানানোর জন্যই ফোনে ওঁকে সেই সিদ্ধান্ত বলে দেওয়া হয়।" জানান চেতন।
কোহলি নিজের বিষ্ফোরক প্রেস কনফারেন্সে আরও দাবি করেন, তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার মাত্র ৯০ মিনিট আগে জানানো হয়। সেই প্রসঙ্গে মুখ খুলে চেতন শর্মা বলেন, "এতে তো কোনও বিভ্রান্তি থাকা উচিত নয়। আজকে ওয়ানডে নির্বাচন মিটিং হচ্ছে। তবে আমরা টেস্ট দল বাছাইয়ের আগেই ওয়ানডের নেতৃত্বে বদল ঘোষণা করি। রোহিত-বিরাট দুজনকেই মানিয়ে নেওয়ার সময় দিতে চেয়েছি আমরা।"
আরও পড়ুন: আর কতদিন অফফর্ম চলবে! কোহলিকে বাদ দেওয়ার দাবিও এবার উঠে গেল
যাইহোক দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে ছিটকে গেলেন রোহিত শর্মা। তাঁর অনুপস্থিতিতে ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দেবেন কেএল রাহুল। সহ অধিনায়ক বাছা হয়েছে জসপ্রীত বুমরাকে। ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ পারফরম্যান্স দেখিয়ে এবার ওয়ানডে স্কোয়াডেও জায়গা করে নিয়েছেন রুতুরাজ গায়কোয়াড এবং ভেঙ্কটেশ আইয়ার। আঙুলে চোট সারিয়ে একদিনের ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন করলেন ওয়াশিংটন সুন্দর।
ভারতের ওয়ানডে স্কোয়াড:
কেএল রাহুল (ক্যাপ্টেন), শিখর ধাওয়ান, রুতুরাজ গায়কোয়াড, বিরাট কোহলি, সূর্যকুমার যাদব, শ্রেয়স আইয়ার, ভেঙ্কটেশ আইয়ার, ঋষভ পন্থ, ঈশান কিষান, যুজবেন্দ্র চাহাল, আর অশ্বিন, ওয়াশিংটন সুন্দর, জসপ্রীত বুমরা (ভাইস ক্যাপ্টেন), ভুবনেশ্বর কুমার, দীপক চাহার, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ, শার্দূল ঠাকুর, মহম্মদ সিরাজ
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন