Australia vs West Indies 2003: খেলার মাঠে হার-জিত লেগেই থাকে। কিন্তু তার মাঝে কিছু ঘটনা এমন ঘটে যায়, যা ইচ্ছাকৃত না হলেও এমন স্মৃতি রেখে যায়, যেগুলো পরে মনে পড়লে হাসিও আসে, আবার চিন্তায়ও ফেলে দেয়। প্রত্যেক খেলার নিয়মে কোথাও না কোথাও একটা ফাঁক থেকে যায়। ঠিক এমনই এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল ২০০৩ সালে, তাও ক্রিকেটের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ফরম্যাট টেস্ট ম্যাচে। এমন এক ঘটনা, যা দেখে আম্পায়ারও অবাক হয়ে গিয়েছিলেন এবং প্রতিপক্ষ দলের অধিনায়ক ও খেলোয়াড়রা তো রীতিমতো হতবাক।
ঘটনাটি ঘটেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে। গায়ানার জর্জটাউনের মাঠে অনুষ্ঠিত হয় সেই ম্যাচ। ফ্র্যাঙ্ক ওয়ারেল ট্রফির জন্য খেলা এই সিরিজের ওই ম্যাচটি শুধু অস্ট্রেলিয়ার জয়ের জন্য নয়, বরং এক অভিনব ঘটনার জন্য ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে। এমন একটি ঘটনা, যা আগে কখনও টেস্ট ক্রিকেটে দেখা যায়নি। মাঠে একসঙ্গে চারজন মেরুন হেলমেট পরিহিত ব্যাটারকে দেখে সবাই চমকে গিয়েছিলেন!
২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়া দল ছিল তাদের সর্বোচ্চ ফর্মে। অধিনায়ক স্টিভ ওয়া তখন তাঁর শেষ সফরে ছিলেন। যদিও দলে ছিলেন না শেন ওয়ার্ন ও গ্লেন ম্যাকগ্রা, তবুও অজিরা শক্তিশালী ছিল। প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ করে ২৩৭ রান, যার জবাবে অস্ট্রেলিয়া তোলে ৪৮৯ রান। এরপর শুরু হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংস, যেখানে ঘটে সেই ঐতিহাসিক ঘটনা।
আরও পড়ুন শোকের ছায়া দেশজুড়ে, সকলকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন ভারতীয় ক্রিকেটার
ওয়েস্ট ইন্ডিজ তখন দুই ব্যাটসম্যান শিবনারায়ণ চন্দরপল এবং রিডলে জেকবসের জন্য রানার ব্যবহার করে। চমকের বিষয় হল, দুজন ব্যাটসম্যানের জন্য আলাদা দুই রানার মারলন স্যামুয়েলস এবং ওয়েভেল হাইন্ডস মাঠে নেমে আসেন। একসময় পিচে মোট চারজন ব্যাটসম্যানের পোশাকে খেলোয়াড়! এমন দৃশ্য দেখে আম্পায়ার অশোকা ডি সিলভা এবং রুডি কোয়ের্টজেনও বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন, যেন বুঝতেই পারছিলেন না কী করা উচিত। তবে এই বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি বেশিক্ষণ চলেনি। চন্দরপল মাত্র ৭ রান করে আউট হয়ে গেলে মাঠ ছাড়ে একসঙ্গে দুজন ব্যাটসম্যান, আর সেই সঙ্গে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আম্পায়ার ও অজিরা।
রানার নিয়ম এখন ইতিহাস
ICC ১ অক্টোবর ২০১১ সালে রানার ব্যবহারের নিয়ম বাতিল করে দেয়। আগে আহত ব্যাটসম্যানরা রানার ব্যবহার করতে পারতেন, তবে এখন আর সেই সুযোগ নেই। যদি কোনও ব্যাটসম্যান চোট পেয়ে দৌড়াতে না পারেন, তাহলে তাঁকে হয় ‘রিটায়ার্ড হার্ট’ হতে হয়, না হলে নিজেই লড়ে-চড়ে রান নিতে হয়। এই নিয়ম অপব্যবহারের কারণে অনেকেই ব্যথার অজুহাতে রানার চাইতেন, যা খেলায় অনৈতিক সুবিধা এনে দিত। ফলে আইসিসি খেলার ফিটনেস ও স্কিল উন্নয়নের স্বার্থে এই নিয়ম চিরতরে তুলে দেয়।
এই ঘটনাটি আজও ক্রিকেট ইতিহাসের এক মজাদার ও বিস্ময়কর অধ্যায় হিসেবে মনে রাখা হয়।