টেস্ট ক্রিকেটের কুলীন পরিবারে বাংলাদেশ যাত্রা শুরু করেছিল ২০০০-এর ১০ নভেম্বর। সেই একই দিনে অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক ঘটে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের। বাংলাদেশের কাছে দিনটি যেমন স্পেশাল। একইভাবে সৌরভের জন্যও সেই দিনটির কথা ভোলার নয়। সফল ক্যারিয়ার শেষে কলকাতার ‘মহারাজা’ এখন ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের (বিসিসিআই) সভাপতির পদ অলংকৃত করেছেন। বাংলাদেশের সেই ১১ জনের অনেকে হারিয়ে গেছেন ক্রিকেট থেকে। কেউ আবার ব্যবসা করছেন। আবার কেউ নিজেকে ক্রিকেটেই জড়িয়ে রেখেছেন।
আগামী ২২ নভেম্বর কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের সেই ১১ জনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সৌরভ গাঙ্গুলি। সেখানে তাদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। সৌরভের নেতৃত্বে সেই টেস্ট খেলার ভারতীয় দলের সব সদস্যরও উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। সেইদিন অনেকেই নস্ট্যালজিক হয়ে পড়বেন সেটা না বললেও চলে। তার আগে এক নজরে দেখে নেওয়া যাক বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের সেই ১১ জন এখন কে, কোথায়, কি করছেন-
শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ: বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টে ইনিংস গোড়াপত্তন করতে নেমেছিলেন। সেই সময় বলা হচ্ছিল, বাংলাদেশের সেরা ওপেনার এই শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ। দূর্ভাগ্যজনকভাবে তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ার বেশিদূর এগোয়নি। মাত্র ৩ টেস্টেই থেমে গেছে তাঁর কেরিয়ার। ২০০৪ সালে ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন তিনি। তারপর আর ক্রিকেটের সঙ্গে যোগাযোগ নেই তাঁর। ঢাকার অদূরে নারায়নগঞ্জে কেবল টিভির ব্যবসা করছেন।
আরও পড়ুন হাসিনাকে জানানো উচিত ছিল শাকিবের, সাফ জানাচ্ছেন বাংলাদেশের মন্ত্রী
মেহরাব হোসেন অপি: তিনিও অনেক সম্ভাবনা নিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে এসেছিলেন। কিন্তু সাদা পোশাকের ক্রিকেটে কেরিয়ার লম্বা করতে পারেননি। মাত্র ৯ টেস্ট খেলেই শেষ হয়ে গিয়েছে মেহেরাব হোসেনের টেস্ট কেরিয়ার। সাদা পোশাকের ক্রিকেটকে বিদায় বলেন তিনি ২০০৩ সালে। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ানও এই মেহেরাব। তাঁকে টেলিভিশন নাটকেও অভিনয় করতে দেখা গেছে।
হাবিবুল বাশার: যখন খেলতেন তখন তাঁকে ডাকা হতো মিস্টার ফিফটি বলে। হাবিবুল বাশার ব্যাট হাতে নামলেই ফিফটি করে উঠে আসতেন। ফিফটিকে কেন সেঞ্চুরিতে রূপান্তরিত করতে পারেন না-এ নিয়ে তাঁকে অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক টেস্ট খেলার পর সবচেয়ে বেশিবার সাদা পোশাক গায়ে জড়ানোর কীর্তি গড়েছেন হাবিবুল বাশার। বাংলাদেশের জার্সিতে তিনিই প্রথম ৫০টি টেস্ট খেলার নজির গড়েন। ২৪ ফিফটি আর তিন সেঞ্চুরিতে রান করেছেন ৩০২৬। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রাক্তন অধিনায়ক বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আরও পড়ুন ভারতের কাছে হেরে তিন মাস ঘুমোননি মুশফিকুর, দিল্লি দখলের পরে জানালেন বাবা
আমিনুল ইসলাম বুলবুল: অভিষেক টেস্টেই সেঞ্চুরি মেরে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন। ১৪৫ রানের ইনিংসটি খেলে আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে বাংলাদেশকে আলাদা করে পরিচয় করে দিয়েছেন ক্রিকেটবিশ্বে। ১৩ টেস্ট খেলে তিনি অবসরে চলে যান ২০০২ সালে। বর্তমানে পরিবার নিয়ে থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়। অবশ্য সেখানে আইসিসির গেম ডেভলপমেন্ট কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) হয়ে সহযোগি দেশগুলোর ক্রিকেট উন্নয়নে কাজ করেছেন।
আকরাম খান: বাংলাদেশের টেস্টপূর্ব যুগের সবচেয়ে বড় তারকার নাম আকরাম খান। তাঁর নেতৃত্বেই ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফিতে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। কোয়ার্টার ফাইনালে হল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ম্যাচটি আকরাম খানকে অমরত্ব দিয়েছে। টেস্ট খেলেছেন মোটে আটটি। ক্রিকেটকে বিদায় বলে দেন ২০০৩-এ। এখন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আরও পড়ুন দাদি-ই করে দেখাল, বলছেন মোহনবাগানে খেলা দেশের প্রথম ‘গোলাপি’ ক্রিকেটার
আল শাহরিয়ার রোকন: সেই সময় দারুন সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার ছিলেন তিনি। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি যিনি লেগ স্পিনটাও করতে পারতেন। দূর্ভাগ্য আল শাহরিয়ার রোকনের ক্যারিয়ারটা ১৫ টেস্টের বেশি লম্বা হয়নি। ২০০৩-এ ক্রিকেট ছাড়ার পর ক্রিকেটের বাইরে চলে গেছেন তিনি। বর্তমানে সপরিবারে নিউজিল্যান্ডের নেপিয়ারে বসবাস করছেন আল শাহরিয়ার। জানা গেছে, নেপিয়ারে ব্যবসার পাশাপাশি সেখানকার স্থানীয় ক্রিকেট কোচিংয়েও নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন।
নাঈমুর রহমান দুর্জয়: অভিষেক টেস্টেই ভারতের ছয় ছয়টি উইকেট তুলে নেন বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক। ৮ টেস্ট খেলেই থমকে গেছে দূর্জয়ের টেস্ট ক্যারিয়ার। ২০০২-এ ক্রিকেটকে বিদায় বলার পর এখনও ক্রিকেটের সঙ্গেই রয়েছেন। এর মাঝে আবার সাংসদও হয়েছেন। বর্তমানে দূর্জয় ক্রিকেটারদের সংগঠন কোয়াবের সভাপতি এবং বিসিবির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
খালেদ মাসুদ পাইলট: সেই সময়ে তাঁকে এশিয়ার সেরা উইকেটকিপার হলো হতো। তাঁর বিশ্বস্ত গ্লাভস দুটি কখনও ফাঁকি দিতে পারেনি। ৪৪ ম্যাচ খেলা পাইলট টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন ২০০৭ সালে। বর্তমানে ক্রিকেটের সঙ্গেই জড়িয়ে রেখেছেন। বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের সহকারি কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে প্রাইম ব্যাংকের কোচের দায়িত্বও সামলেছেন। তবে তাঁকে বেশি দেখা যায়, টেলিভিশনের খেলা সংক্রান্ত অনুষ্ঠানগুলোতে।
মোহাম্মদ রফিক: অত্যন্ত দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসে বাংলাদেশের ক্রিকেটে নাম করেছেন মোহাম্মদ রফিক। নিজের সময়ের সেরা বোলার ছিলেন। বাঁহাতি স্পিনার সাদা পোশাকের ক্রিকেট ছেড়েছেন ২০০৮-এ। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তিনি ১০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন। রফিক কিছুদিনের জন্য বিসিবির হাই পারফরম্যান্স স্কোয়াডের (এইচপি) বোলিং কোচ হিসেবে কাজ করেছেন।
হাসিবুল হোসেন শান্ত: মাশরাফি বিন মুর্তজা বাংলাদেশের ক্রিকেটে আসার আগে দ্রুতগতির বোলার ছিলেন হাসিবুল হোসেন শান্ত। তিনি ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন ২০০১-এ। ক্যারিয়ারের শেষ দিকে এসে টেস্ট খেলেছেন বলে ক্যারিয়ার অতটা সমৃদ্ধ নয়। তিনি এখন বিসিবির বয়সভিত্তিক দলের নির্বাচক কমিটিরও সদস্য।
বিকাশ রঞ্জন দাস: মাত্র ১৮ বছর বয়সেই বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট খেলে ফেলেন তিনি। দারুন সম্ভাবনাময় এই বাঁহাতি ফাস্ট বোলার অকালেই হারিয়ে গিয়েছেন। তাঁর ক্রিকেট ক্যারিয়ার বলতে ওই এক টেস্টই। অবশ্য বিকাশ রঞ্জন দাসের অভিযোগ, বোর্ড ঠিকঠাক খোঁজখবর রাখলে হয়তো তাঁকে ক্রিকেট থেকে হারিয়ে যেতে হতো না। ক্রিকেট ছাড়ার পর ধর্মান্তরিত হয়ে মাহমুদুল হাসান নাম ধারণ করেন। বর্তমানে তিনি ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল) ঢাকার একটি শাখায় ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।