Next BCCI secretary after Jay Shah: আইসিসির (ICC) চেয়ারম্যান গ্রেগ বার্কলে জানিয়ে দিয়েছেন, তৃতীয়বারের মত ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থার শীর্ষপদে বসবেন না। আইসিসির সঙ্গে সম্প্রচারকারী স্টার নেটওয়ার্কের ৪.৪৬ বিলিয়ন ডলারের বিবাদের পর চেয়ারম্যান গ্রেগ বার্কলের ভিডিও বার্তায় সরাসরি পদত্যাগ করেছেন। তাঁর মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী নভেম্বরে।
গ্রেগ বার্কলের পদত্যাগের পর আইসিসির চেয়ারম্যান হওয়া প্রায় পাকা বিসিসিআইয়ের বর্তমান সচিব জয় শাহের। তিনি আইসিসির চেয়ারম্যান হলে নিয়ামক সংস্থার ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ (৩৫ বছর বয়স জয় শাহের) শীর্ষকর্তা হিসাবে নজির গড়বেন।
আইসিসি চেয়ারম্যান পদে কেন ফেভারিট জয় শাহ
বিসিসিআইয়ের বোর্ড সভাপতিও নন, সচিব পদে বসেই বর্তমানে ক্রিকেট বিশ্বের সবথেকে প্রভাবশালী কর্তা জয় শাহ। আমলে বিসিসিআইয়ের ক্রিকেট দুনিয়ায় আধিপত্য শিখর ছুঁয়েছে। তাঁর আমলেই গত আইপিএল আয়োজন করেই বোর্ড ৫ হাজারেরও বেশি কোটি টাকা উপার্জন করেছে। যা বিগত সংস্করণের দ্বিগুন। তাছাড়া আইসিসির মূল লভ্যাংশের ৭০ শতাংশ আসে বিসিসিআই থেকে। এর আগে জগমোহন ডালমিয়া, শরদ পাওয়ার এবং শশাঙ্ক মনোহর (স্বাধীন) ভারতীয়দের মধ্যে আইসিসি চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। গ্রেগ বার্কলে তৃতীয় বারের মত চেয়ারম্যান হওয়া থেকে বিরত থাকার বার্তা দিয়েছেন। নভেম্বরেই ওঁর বর্তমান মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ২০২০-এর নভেম্বরে বার্কলে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ক্যান্ডিডেট হিসাবে মনোনীত হয়েছিলেন আইসিসির শীর্ষ পদের জন্য। ২০২২-এ পুনরায় মনোনীত হন তিনি। নতুন চেয়ারম্যানের মেয়াদ শুরু হচ্ছে ১ ডিসেম্বর ২০২৪-এ।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চোখে চোট, IPL-এ ঝড় তোলা শতরান! ভারতীয় সেনসেশন এবার হেড কোচ আমেরিকায়
আইসিসিতে কি ভোটাভুটি হবে?
খুব সম্ভবত কোনও ভোটাভুটি ছাড়াই আইসিসির চেয়ারম্যান হবেন জয় শাহ। আগামী ২৭ অগাস্টের মধ্যে সভাপতি পদে ইচ্ছুক প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দিতে হবে আইসিসির ডিরেক্টরদের কাছে। একাধিক প্রার্থী থাকলে নির্বাচন হবে। আইসিসির পূর্ণ সদস্যের ১৬ দেশের মধ্যে ৯ দেশের সমর্থন পেলেই জয়ী ঘোষণা করা হবে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের। অতীতে নিয়ম ছিল, বিজয়ী প্রার্থীকে দুই তৃতীয়াংশ ভোট পেতে হবে পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে।
জয় শাহ ছাড়াও একাধিক ব্যক্তি মনোনয়ন জমা দিলেও তিনিই নিরঙ্কুশভাবে আইসিসির শীর্ষ কর্তা হতে চলেছেন। কারণ, ইতিমধ্যেই বিশ্বের তিন প্রভাবশালী বোর্ড- অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকার সমর্থন রয়েছে জয় শাহের পাশে।
আইসিসি চেয়ারম্যান পদের মেয়াদ
আইসিসি চেয়ারম্যান হওয়ার মেয়াদ কিছুদিন আগেই পরিমার্জন ঘটানো হয়েছে। এবার থেকে আইসিসি চেয়ারম্যান নূন্যতম তিন বছর পদে থাকতে পারবেন। দুটো টার্মে কোনও বদল ছাড়াই থাকতে পারেন বর্তমান আইসিসি চেয়ারম্যান। অতীতে এই মেয়াদ ছিল দু বছরের জন্য। বার্কলে সবমিলিয়ে এই পদে থাকলেন দুই টার্ম- অর্থাৎ চার বছর। জয় শাহ আইসিসি চেয়ারম্যান হলে ২০৩০-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকতে পারেন এই পদে।
একইসঙ্গে আইসিসি চেয়ারম্যান এবং বোর্ড সচিব কি থাকতে পারেন জয় শাহ?
২০১৬ থেকে পরিমার্জন ঘটানো হয়েছে এই পদে। অর্থাৎ বর্তমানে কোনও আইসিসি কর্তা একই সঙ্গে একাধিক ভূমিকা পালন করতে পারবেন না। নভেম্বরে আইসিসি মিটিংয়ে জয় শাহ যদি নির্বাচিত হন, তাহলে বিসিসিআইয়ের সচিব পদ সঙ্গেসঙ্গেই ছাড়তে হবে তাঁকে। এর অর্থ ২০২৫-এর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিসিসিআইয়ে নিজের পুরো সময়ের মেয়াদকাল থাকতে পারবেন না তিনি।
আরও পড়ুন: ৬ দিনের টেস্ট খেলবে শ্রীলঙ্কা-নিউজিল্যান্ড! ইতিহাস গড়া সিদ্ধান্তে অনুমোদন ICC-র, ঝড় ক্রিকেটবিশ্বে
শশাঙ্ক মনোহর আইসিসি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগেই বোর্ডের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। তবে এটা বাধ্যতামূলক নয়। জয় শাহ চাইলে নভেম্বরে আইসিসি পদে নির্বাচিত হওয়া পর্যন্ত বিসিসিআইয়ের সচিব থাকতে পারেন।
আইসিসির মেয়াদ শেষ হলে বোর্ডে কি ফিরতে পারেন তিনি?
বর্তমান বিসিসিআইয়ের সাংবিধানিক নিয়ম অনুযায়ী, আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে সচিব পদের মেয়াদ শেষের পর জয় শাহকে তিন বছরের জন্য কুলিং অফ পিরিয়ডে যেতে হবে। সেই সময়ে তিনি যেহেতু আইসিসির শীর্ষকর্তা থাকবেন, তাই আইসিসির পদের মেয়াদকাল শেষে পুনরায় চাইলে ফিরতে পারেন বিসিসিআইয়ে। অর্থাৎ বিশ্বক্রিকেটের সবথেকে প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে এখন টানা ধরে রাখতে পারবেন তিনি।
জয় শাহ যদি আইসিসির চেয়ারম্যান হন তাহলে বোর্ড সচিব কে হবেন?
সামনের সপ্তাহে তা নির্ধারিত হবে। এই মুহূর্তে জয় শাহকে রিপ্লেস করার মত কোনও নাম ভেসে ওঠেনি। বোর্ডের অভিজ্ঞ সমস্ত প্রশাসকদের বয়স ৬০ পেরিয়ে গিয়েছে। বোর্ডের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় কিংবা অনুরাগ ঠাকুররা বিসিসিআইয়ের সচিব পদের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। কারণ বোর্ডের সংবিধানে স্পষ্ট বলা রয়েছে, ".... বিসিসিআইয়ের কোনও প্রাক্তন সভাপতি বোর্ডের শীর্ষস্থানীয় কোনও পদের জন্য দ্বিতীয় অথবা চূড়ান্ত টার্মে মনোনীত অথবা নির্বাচিত হতে পারবেন না।"
আরও পড়ুন: বাবা টিম ইন্ডিয়ার তারকা, ছেলে মাঠে নামল ইংল্যান্ডের জার্সিতে! বেনজির দৃশ্য ক্রিকেট দুনিয়ায়
বোর্ডের কোষাধ্যক্ষ আশিস শেহলার অথবা যুগ্ম সচিব দেবরাজ সাইকিয়া পরবর্তী সচিব পদে প্রার্থী হতে পারেন। এছাড়াও বর্তমান কংগ্রেসের সাংসদ রাজীব শুক্লা, অরুণ ধুমল, রোহন জেটলি (প্রয়াত অরুণ জেটলির পুত্র), অভিষেক ডালমিয়া (প্রয়াত জগমোহন ডালমিয়ার পুত্র), দিলশার খান্না, প্রভতেজ ভাটিয়া, বিপুল ফাদকের নাম ভেসে উঠছে বোর্ডের অন্দরমহলে।
আইসিসিতে জয় শাহের চ্যালেঞ্জ কী?
সদ্য সমাপ্ত টি২০ বিশ্বকাপ নিয়ে আইসিসির অন্দরে অসন্তোষ বিরাজমান। কলম্বোয় শেষ আইসিসি বৈঠকে একাধিক সদস্য দেশ বিশ্বকাপের জন্য বাজেটের বেশি অর্থ বরাদ্দ নিয়ে দু-চার কথা শুনিয়ে দিয়েছে আইসিসিকে। এমনকি আইসিসির সম্প্রচারকারী স্টার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ২০২৪-২০২৭ পর্যন্ত ভারতে অনুষ্ঠিত ম্যাচ সম্প্রচারের জন্য যে ৩ বিলিয়ন চুক্তি হয়েছিল স্টারের, তা পরিমার্জন করে কমানোর পক্ষপাতী ব্রডকাস্টিং সংস্থাটি। নিজেদের ক্ষতি এড়াতে জি-কে সাব-লাইসেন্স দেওয়ার জন্যও আইসিসিকে চাপ দিচ্ছে স্টার নেটওয়ার্ক। এসব মোকাবিলা করাই জয় শাহের কাছে আপাতত আসল চ্যালেঞ্জ।