অরিত্রি-সত্যরূপদের স্বপ্ন পূরণ করবে ওয়াও মোমো

কারোর ব্য়াঙ্কে দেনা ৪১ লক্ষ টাকা, তো কেউ কমনওয়েলথের রাস্তা থেকে ফিরে এসেছেন। কিম্বা কেউ তাঁর ক্রিকেট অ্যাকাডেমির জন্য কিনতে পারছেন না একটা বোলিং মেশিন। সবাই আটকে যাচ্ছেন ওই একটা জায়গায়। টাকা, ভালো বাংলায় অর্থাভাব।

কারোর ব্য়াঙ্কে দেনা ৪১ লক্ষ টাকা, তো কেউ কমনওয়েলথের রাস্তা থেকে ফিরে এসেছেন। কিম্বা কেউ তাঁর ক্রিকেট অ্যাকাডেমির জন্য কিনতে পারছেন না একটা বোলিং মেশিন। সবাই আটকে যাচ্ছেন ওই একটা জায়গায়। টাকা, ভালো বাংলায় অর্থাভাব।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Wow Momo Event Cover photo

অরিত্রি দে। ছবি: শশী ঘোষ

কারোর ব্য়াঙ্কে দেনা ৪১ লক্ষ টাকার, তো কেউ ক্যারাটে কমনওয়েলথের রাস্তায় রওয়ানা দিয়েও ফিরে এসেছেন। কিম্বা কেউ ক্রিকেট অ্যাকাডেমির জন্য কিনতে পারছেন না একটা বোলিং মেশিন। সবাই আটকে যাচ্ছেন ওই একটা জায়গায়। 'টাকা' ভালো বাংলায় অর্থাভাব। উড়ান ধরা স্বপ্নগুলো জ্বালানির অভাবে আছড়ে পড়ে বাস্তবের মাটিতে। কিন্তু এবার সুদিন দেখবেন তাঁরা। ওই আকাশটাই হবে তাঁদের লক্ষ্য।

Advertisment

প্রতিভায় পচন নয়, থাকবে শুধুই উত্তরণ। সৌজন্যে কলকাতার ওয়াও মোমো, প্রগতিশীল এই কিউএসআর (কুইক সার্ভিস রেস্টুরেন্টস) ব্র্যান্ড দেশের ১৩ টি শহরে তাদের শাখা বিস্তার করেছে। ভারতীয়দের দক্ষিণ এশীয় খাবারের রসনাতৃপ্তির দায়িত্বে ২০০ টি আউটলেট। এবার ওয়াও মোমো বঙ্গজ স্পোর্টসে নিজেদের অবদান রাখতে চায়। পাশে দাঁড়াতে চায় ক্রীড়াক্ষেত্রে সেইসব কৃতীদের, যাঁরা কর্পোরেটদের দোরে দোরে ঘুরে পাননি নূন্যতম স্পনশরশিপ। ওয়াও মোমো প্রাথমিকভাবে বেছে নিয়েছে জাতীয় ক্যারাটে খেলোয়াড় অরিত্রি দে ও পর্বতারোহী সত্য়রূপ সিদ্ধান্তকে। এর পাশাপাশি প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়ের ক্রিকেট অ্যাকাডেমিকেও আগামী পাঁচ বছর স্পনসর করবে তারা। সোমবার পার্ক স্ট্রিটের ওয়াও মোমো আউটলেটে তারই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হল।

আরও পড়ুন: এশিয়ান গেমসের রুপো জয়ী হরিয়ানার রাস্তায় কুলফি বিক্রি করছেন

Advertisment

ওয়াও মোমোর সিইও ও যুগ্ম প্রতিষ্ঠাতা সাগর দরিয়ানি বললেন, "দেখুন, আমি একজন উদ্যোগপতি হয়ে আজ বুঝতে পেরেছি শুরুর দিনগুলোতে কী কঠিন লড়াই করতে হয়। আমরা সবাই সফল হতে চাই। কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জটা নেওয়ার জন্য টাকার প্রয়োজন। অনেক প্রতিভাবানই হারিয়ে যান অর্থাভাবে। আমি চাই তাঁরা এবার দেশের মুখ উজ্জ্বল করুন। আমি সাধ্যমতো তাঁদের পাশে থাকার চেষ্টা করব। আপাতত বাংলা দিয়ে শুরু করলাম। ভবিষ্য়তে সারা দেশের অ্যাথলিট ও স্পোর্টসপার্সনদের পাশে থাকতে চাই। ইচ্ছা আছে ভবিষ্য়তে একটা ওয়াও মোমো স্পোর্টস ফাউন্ডেশনও করার।"

Wow momo Event (1) শরদিন্দু ও অরিত্রির সঙ্গে সাগর। ছবি: শশী ঘোষ

ওয়াও মোমোতে কাজ করেন অরিত্রির এক বান্ধবী। তাঁর সূত্র ধরেই সাগরের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল দেশের এই ক্যারাটে খেলোয়াড়ের। অরিত্রি এই মুহূর্তে ভারতীয় ক্যরাটেকাদের মধ্যে দু’নম্বর। চলতি বছর জানুয়ারি মাসে নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিনিয়র জাতীয় ক্যারাটে চ্যাম্পিয়নশিপে রাজ্যের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে পদক পেয়েছেন। সাতবারের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন তিনি। জাতীয় স্তরে দু’বার সোনা, একবার রুপো ও তিনবার ব্রোঞ্জ জিতেছেন। সিনিয়র ও অনূর্ধ্ব-২১ ক্যাটেগরিতে তাঁর মুকুটে এই পালকগুলো যুক্ত হয়েছিল।

২০১০-এ এশিয়া কাপ জয়ী অরিত্রি এদিন বললেন, "জানেন, টাকার অভাবে ২০১৫-র কমনওয়েলথে যেতে পারিনি। তারপর ভেবেছিলাম আর কখনও কমনওয়েলথে যাওয়া যাবে না। আমার মতো মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়েদের কাছে  লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে কমনওয়েলথের মতো টুর্নামেন্টে যাওয়াটা খুব কঠিন। কেন্দ্রের পক্ষ থেকেও কোনও সাহায্য় পাইনি। ভেবেছিলাম আর কখনও কমনওয়েলথে খেলা হবে না। কিন্তু অবশেষে সেটা সম্ভব হতে চলেছে।"

২০১১ সালে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ক্যারাটের বিশ্বকাপে রানার্স আপ হন অরিত্রি। বললেন, আগামীকালই দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্দেশে রওনা দেবেন তিনি। ডেস্টিনেশন ডারবান। আগামী ২৯ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেখানে চলবে ক্যারাটে কমনওয়েলথ, যেখানে পদক জয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। দেশের হয়ে একাধিক আন্তর্জাতিক পদক পাওয়া অরিত্রি স্বপ্ন দেখেন, একদিন অলিম্পিকের আসর থেকে সোনা নিয়ে আসবেন।

অরিত্রির কথার রেশ কাটতে না কাটতেই বলা শুরু করলেন সত্যরূপ। কলকাতার বছর পঁয়ত্রিশের এই বাসিন্দার কথা অনেকেই জাননে না আজ। তবে আর কয়েকটা মাসের অপেক্ষা। তারপরেই সারা পৃথিবী জেনে যাবে তাঁর কথা। চাকরি সূত্রে বেঙ্গালুরুতে থাকেন সত্যরূপ। বাবা-মা আছেন কবরডাঙায়। সত্যরূপ পেশায় সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার। আর নেশা বলতে পর্বতারোহণ। অজানাকে জানার অদম্য ইচ্ছায় তাঁর প্রয়োজন বেশ মোটা অঙ্কের টাকার। অর্থের যোগান দেওয়ার জন্য বেঙ্গালুরুতে গিয়ে দু’টো শিফটে দু’টো পৃথক অফিসেও চাকরি করেছেন তিনি। বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতেন সকাল সাড়ে ন’টায়। ফিরতেন রাত সাড়ে দশটা নাগাদ। এভাবেই সপ্তাহের পাঁচটা দিন কাটত। শনি আর রবি, এই দু’টো দিন বরাদ্দ রাখতেন নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য়।

Wow momo Event (2) একাকী সত্যরূপ সিদ্ধান্ত। ছবি: শশী ঘোষ

সত্যরূপ বললেন, "ঠিক আট বছর আগে এভারেস্টের বেস ক্যাম্পে গিয়ে এভারেস্টের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। এর পরের বছরই দার্জিলিংয়ের এইচএমআই থেকে পর্বতারোহণের সার্টিফিকেট কোর্স করি। ২০১২-তে শুরু করি মিশন।" পাঁচ নম্বর ভারতীয় ও প্রথম অসামরিক বাঙালি হিসেবে সত্যরূপ সেভেন সামিট করার নজির গড়েন। সত্যরূপ আরও বললেন, "আমি পৃথিবীর কনিষ্ঠতম পর্বতারোহী হিসেবে সেভেন সামিট (সাতটি মহাদেশের সর্বোচ্চ পর্বত) ও সেভেন ভলক্যানিক সামিট ((সাতটি মহাদেশের সর্বোচ্চ আগ্নেয়গিরি) জয়ের রেকর্ড গড়তে চলেছি। এই মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়ার ড্যানিয়েল বুলের এই রেকর্ড রয়েছে। ৩৬ বছর ১৫৭ দিনে সেই নজির গড়েছিলেন তিনি। আগামী জানুয়ারিতে আমার সেভেন ভলক্যানিক সামিট শেষ হবে। আন্টার্টিকার মাউন্ট সিডলিতে গেলেই আমার বৃত্ত পূরণ হবে। তখন আমার বয়স হবে ৩৫ বছর ৯ মাস। গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে আমার আবেদন জমা দিয়েছি। জানুয়ারিতে ফিরে আসার পর প্রমাণপত্র দেব। তারপরেই সেটা চূড়ান্ত হয়ে যাবে।"

সত্যরূপ সাতটি ভলক্যানিক সামিটের মধ্যে পাঁচটি জয় করেছেন। গত সপ্তাহে তিনি ফিরেছেন পাপুয়া নিউ গিনির সর্বোচ্চ আগ্নেয়গিরি ওশেনিয়া মাউন্ট গিলুয়ে আরোহণ করে। আগামী বৃহস্পতিবার সত্যরূপ বেরিয়ে যাচ্ছেন উত্তর আমেরিকার সর্বোচ্চ আগ্নেয়গিরি মাউন্ট পিকো দে ওরিজাবা জয় করতে। কথার ফাঁকে বলছেন, "আমার ছোট থেকে হাঁপানির সমস্য। এটা নিয়েই এতদূর এগিয়েছি। স্বপ্নপূরণ করতে গিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে আমার ৪১ লক্ষ টাকা লোন নেওয়া হয়ে গিয়েছে। বুঝতে পারছিলাম না, কিভাবে দেনা শোধ করব। কর্পোরেটরাও আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে বহুবার। এবার এগিয়ে যেতে পারব।" শুধু সেভেন সামিট করেই থামেননি সত্যরূপ। দক্ষিণ মেরুর ৫০ কেজির স্লেজে চেপে ছ’দিন ধরে ১১১ কিলোমিটার স্কি-ও করেছেন। আজ শুধু ওয়াও মোমোই নয়, অনেকেই তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।

অন্যদিকে শরদিন্দু বললেন, "আমার তিনটে অ্যাকাডেমি মিলিয়ে আজ ৪০০ জন প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। অনেক সময় টাকাপয়সার সমস্যায় অনেক কিছু করে ওঠা হয় না। একটা বোলিং মেশিনই নিতে পারছিলাম না। এবার নিশ্চিন্ত। আগামী পাঁচ বছর আমাদের ওরা স্পনসর করবে।"