আইসিসি ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে হারের ২৪ ঘন্টা কাটেনি। এর মধ্যেই বিরাট কোহলি গণ ছাঁটাইয়ের ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন। সাউদাম্পটনের ফাইনালে ব্যাটিং ব্যর্থতায় ডুবেছে ইন্ডিয়া। তারপরেই কোহলি জানিয়ে দিচ্ছেন, খেলার মানসিকতা যাঁদের আছে, তাদেরকেই একমাত্র একাদশে রাখা হবে।
কোনো নাম নেননি। তবে দলের কয়েকজনের ব্যাটিং পারফরম্যান্সে তীব্র অখুশি কোহলি। কোহলির ব্যক্তিগত অভিমত রান করার জন্য বেশ কয়েকজন ইচ্ছাই দেখাননি। টেস্ট শেষ হওয়ার পরই কোহলি সেই কারণে বলে দিয়েছেন, "দলের এই হার পর্যালোচনা করে দেখা হবে। সকলের সঙ্গে আলোচনা করে দলের শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করা হবে। একই ধাঁচে বারবার আউট হওয়া বন্ধ করতে হবে এবার।"
নাম না করলেও জানা গিয়েছে চেতেশ্বর পূজারার ব্যাটিং পারফরম্যান্সে একদমই সন্তুষ্ট নন কোহলি। প্ৰথম ইনিংসে ৫৪ বলে ৮ করেছিলেন পূজারা। ৩৫ বল খেলার পরে রানের খাতা খোলেন তিনি। দ্বিতীয় ইনিংসে ৮০ বল খেলে করেন মাত্র ১৫ রান। ইংল্যান্ড সিরিজে প্রথম একাদশে একাধিক পরিবর্তন ঘটতে চলেছে।
আরো পড়ুন: হেরেই গেল ভারত! উইলিয়ামসনের ব্যাটে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ড
ক্ষিপ্ত কোহলি সেই ইঙ্গিত দিয়েই বলে দিয়েছেন, "এই দলে পরিকল্পনা করার অছিলায় আর বেশি সময় অপেক্ষা করা যাবে না। আমাদের সাদা বলের ক্রিকেটের গভীরতা সকলেই জানেন। ছেলেরাও আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। টেস্ট ক্রিকেটেও সেই বিষয়টা আমদানি করতে হবে। সমস্ত কিছু পর্যালোচনা করে দলের প্ল্যানিং ঠিক করতে হবে। কোন সমীকরণে দল আরো ভালো পারফর্ম করে সেটাও খুঁজে দেখতে হবে। যাদের পারফর্ম করার খিদে রয়েছে, তাঁদেরই ঠিক জায়গায় আনা হবে।"
জানা যাচ্ছে, পূজারার আল্ট্রা ডিফেন্সিভ ব্যাটিংয়ে একদমই অখুশি টিম ম্যানেজমেন্ট। দলের অন্দরমহলের বার্তা ৮০ বলে ১৫-এর তুলনায় ৮০ বলে ৫০ অনেক বেশি কার্যকরী। এত ডিফেন্সিভ ব্যাটিংয়ে বাকি ব্যাটসম্যানদের ওপর অনর্থক চাপ তৈরি হয়। এক্ষেত্রে টিম ম্যানেজমেন্ট কেন উইলিয়ামসনের ব্যাটিংকে দৃষ্টান্ত করছেন। বলা হচ্ছে, কেন উইলিয়ামসন প্ৰথম ইনিংসে আল্ট্রা ডিফেন্সিভ ব্যাটিং করেন যখন পিচ মোটেই সহজ ছিল না। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করার সময় যখন বল পিছু রানের হিসাব চলে আসছিল সেখানে উইলিয়ামসন প্ৰথম ইনিংসের সমসংখ্যক বল খেলেই হাফসেঞ্চুরি করে ম্যাচ বের করে দেন। পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাটিংয়ের গিয়ার চেঞ্জ বিষয়টিকেই গেমচেঞ্জার ধরা হচ্ছে।
কোহলি তাই রাখঢাক না করেই বলে দিচ্ছেন, "খেলার সঙ্গে পারফরম্যান্স উন্নতি করা বেশ প্রয়োজনীয় বিষয়। বিশ্বের শীর্ষসারির একটা দল হয়েও গুরুত্বপূর্ণ একটা ম্যাচে নিজের খেলার মান হঠাৎ এতটা নেমে যাওয়া, কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। অদূর ভবিষ্যতে আমরা এই বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেব।"
আরো পড়ুন: WTC ফাইনালে লজ্জার রেকর্ড টিম ইন্ডিয়ার! কলঙ্কের সাক্ষী থাকল সাউদাম্পটন
দলের দুই ইনিংসেই প্রত্যাশার অনেক কম রানে অলআউট হয়ে যাওয়া নিয়েও মুখ খুলেছেন ক্যাপ্টেন, "কীভাবে আরো রান স্কোরবোর্ডে যোগ করা যায় সেই পরিকল্পনা আমাদেরই খুঁজতে হবে। মোটেই ম্যাচ থেকে সময়ে সময়ে হারিয়ে যাওয়া নয়, বরং খেলার গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তোলার চেষ্টা করতে হবে আমাদের। দলের ব্যাটসম্যানদের কোনো টেকনিক্যাল সমস্যা হচ্ছে, মানতে পারছি না। ম্যাচ সম্পর্কে আমাদের আরো বেশি সচেতন হতে হবে। বিপক্ষ বোলাররা যাতে দীর্ঘক্ষণ একই লাইন লেংথে বল না করে যেতে পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। তবে প্রথম দিনের মত মেঘলা পরিবেশে সিমিং কন্ডিশন হলে আলাদা বিষয়।"
সেই সঙ্গে কোহলির সংযোজন, "আউট হওয়া নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন হলে বোলারকে ম্যাচে ফিরে আসার সুযোগ করে দেওয়া হয়। আমাদের স্কোয়াডে যে বোলাররা রয়েছে, তাদের জন্য স্কোরবোর্ডে ন্যূনতম ৩০৯ রান তোলা জরুরি। কঠিন পরিস্থিতিতে রান তোলার চেষ্টা করতে হবে। আউট হওয়ার বিষয়টি সবসময় মাথায় থাকলে প্রতিপক্ষের বোলারদের ওপর চাপটাই থাকবে না। কারণ এতে নেতিবাচক মানসিকতা প্রকাশ পায়। যাঁরা আউট হওয়া নিয়ে অতিরিক্ত সতর্ক থাকে, তাঁরা কিন্তু শেষ পর্যন্ত আউট হয়-ই।"
আরো পড়ুন: কেরিয়ারের শেষ দিনে ভাঙল আঙ্গুলও, তবু মাঠ ছাড়লেন না কিউয়ি তারকা! চোখে জল সকলের
কোহলির তির কার উদ্দেশ্যে, বলার অপেক্ষা রাখে না। ইংল্যান্ডের সিরিজে আরো একবার সুযোগ দেওয়া হবে সৌরাষ্ট্র ব্যাটসম্যানকে, নাকি তিনি শেষ খেলা খেলে ফেললেন ফাইনালেই, সেটাই আপাতত দেখার।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন