/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2023/12/ie-bumrah.jpg)
একটি উইকেট নেওয়ার পর জসপ্রিত বুমরাহ। (ফাইল)
ভারতের শীর্ষস্থানীয় বেশ কিছু তারকার কাছে ২০২৩ ছিল একটা বিশেষ বছর। তাঁদের মধ্যে কেউ এবছর খেলায় বিরতি টেনেছেন। কেউ বা তাঁদের পারফরম্যান্সকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। কেউ আবার চোট-আঘাত সারিয়ে উঠে এসেছেন আগের চেয়েও উজ্জ্বল হয়ে।
দুর্দান্ত কামব্যাক
এই সব খেলোয়াড়দেরই অন্যতম হলেন জসপ্রিত বুমরাহ। চোট-আঘাত সারিয়ে তাঁর ফিরে আসাটা, ১৪ অক্টোবর সন্ধ্যা পৌনে পাঁচটা নাগাদ, নতুন করে বুঝিয়ে দেন ভারতের তারকা বোলার। দুর্দান্ত অফ-কাটারে ছিটকে দেন পাকিস্তানের ব্যাটার মহম্মদ রিজওয়ানের স্ট্যাম্প। যা রীতিমতো বিস্মিত করেছিলেন পাক ব্যাটসম্যানকে। এর পর, বিশ্বকাপের ফাইনালে সেই বিখ্যাত স্লোয়ার। যা, বিশ্বকাপের সেরা স্লোয়ারও বলা যেতে পারে। অফ-কাটারে উইকেট হারান স্টিভ স্মিথ। ১৪ মাস ভয়ংকর পিঠের ব্যথা সহ্য করার পর এভাবে ফিরে আসা!
বুমরাহ অন্যদের চেয়ে আলাদা
যেন এক স্বপ্নের দৌড়। যা পাকিস্তানকে বিধ্বস্ত করার পর ঝলক দেখিয়েছিল। কিন্তু, তখনও বুমরাহর কাছে দর্শকদের প্রত্যাশা অতটা ছিল না। প্রত্যাশা না-থাকার কারণও আছে। কারণ, স্ট্রেস ফ্যাকচার থেকে পিঠের আঘাত, অনেকের কেরিয়ারকে লাইনচ্যুত করেছে। ডেনিস লিলি থেকে জেফ থম্পসন, শেন বন্ড- তালিকাটা বেশ লম্বা। তার ওপর বুমরাহর অদ্ভূত অ্যাকশন- যাতে আঘাত আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে বলেই মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে। সেই সব আশঙ্কা দূর করে দিয়েছিল বিশ্বকাপের তিনটি ইয়র্কার।
চোট আশঙ্কা তৈরি করেছিল
শুধু তাই নয়, বিশ্বকাপ যেন বুঝিয়ে দিয়েছে, বুমরাহ কি দীর্ঘ প্রতিযোগিতায় প্রতিম্যাচে বল করতে পারবেন? লম্বা স্পেল বোলিং করতে পারেন? তিনি কি লিড বোলার হতে পারবেন?- এই সব জল্পনা ছিল স্রেফ নিরর্থক। দলের সবচেয়ে কম রান দেওয়া বোলার। ২০ উইকেট নেওয়াই তার প্রমাণ। এক বছর আগে চোট সারিয়ে প্রত্যাবর্তনের পাঁচ মাসের মধ্যেই বুমরাহ যখন দ্বিতীয়বার চোট পান, মনে করা হচ্ছিল তাঁর কেরিয়ার এবার স্রেফ সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেল। টেস্ট দূর, একদিনের জাতীয় দলে ফেরাই অসম্ভব। আর, বুমরাহ নিজেও যদি সেটাই ধরে নিতেন, তাহলে কিন্তু আজকের বুমরাহকে আর পাওয়া যেত না। যেমন করে লাসিথ মালিঙ্গা টেস্ট খেলা ছেড়ে দিয়েছিলেন, বুমরাহর হালও তেমনই হত। ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমি এবং ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের কর্মীদের সতর্কতায় তা হয়নি।
পরদার আড়ালে যা হয়েছে
যারা জানেন তাঁদের মতে, ২০২৩ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে একটি পর্যালোচনা সভা গেম চেঞ্জার হিসাবে প্রমাণিত হয়। ফিটনেস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার ভিত্তিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে দলে নেওয়ার পর বুমরাহর পিঠের চোট আবার বাড়ে। প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল, তাঁকে শুধু টি২০ খেলানো হবে। তারপর ধীরে ম্যাচের সংখ্যা বাড়িয়ে সুস্থ করে তোলা হবে। টেস্ট দলে রাখাই হয়নি। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে একটি সূত্র জানিয়েছে, কীভাবে ইনজুরি ম্যানেজমেন্ট করা হয়েছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী, বর্ডার-গাভাসকার ট্রফিতে বুমরাহ একজন নন-প্লেয়িং সদস্য হিসেবে দলের সঙ্গে ভ্রমণ করেন। তাঁর জন্য বিশেষ প্রশিক্ষক নিযুক্ত হয়েছিল। তখনই বুমরাহ এবং অন্যদের মনে হয়েছিল যে অস্ত্রোপচারই একমাত্র প্রতিকার। সেজন্য, দেশ-বিদেশের একাধিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া হয়। এরপর ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমির (এনসিএ) ক্রীড়াবিজ্ঞান ও ওষুধ বিভাগের প্রধান নীতিন প্যাটেল গোটা বিষয়টি তদারকি করেন। ৮ মার্চ, নিউজিল্যান্ডে বুমরাহর অস্ত্রোপচার হয়।
সন্তর্পণে চলেছিল ফেরানোর চেষ্টা
এই অস্ত্রোপচারের পরে সমস্ত স্টেকহোল্ডার- টিম ম্যানেজমেন্ট, নির্বাচক এবং ভিভিএস লক্ষ্মণের নেতৃত্বে জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির সাপোর্ট-স্টাফরা বুমরাহের জন্য যত্ন সহকারে পুনর্বাসনের তদারকি করেছিলেন। সূত্রের খবর, অস্ত্রোপচারের ৪৫ দিন পরে এবং বুমরাহ এনসিএতে যাওয়ার আগে তাঁকে পুরোপুরি ফিট করার জন্য নিবেদিতপ্রাণ বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রশিক্ষক এস রজনীকান্তের সঙ্গে একটি বিশদ পরিকল্পনা করা হয়েছিল। যদিও লক্ষ্য ছিল বিশ্বকাপ, কিন্তু বুমরাহর কাছে জাতীয় দলে ফেরার কোনও তারিখ উল্লেখ করা হয়নি। কারণ, তা এই ভারতীয় পেসারের মধ্যে মানসিক চাপ তৈরি করতে পারে। এমন একজন খেলোয়াড়ের ওপর অতিরিক্ত চাপ আনতে পারে, যিনি ২০২২ সালের আগস্ট থেকে হাতেগোনা ম্যাচও খেলেননি। সকলেই বুঝে গিয়েছিলেন বিষয়টি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হবে। প্রায় একবছর ধরে একইভাবে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। মাত্র চার মাসের ব্যবধানে একই ইনজুরি দু'বার হওয়ায় একটা সন্দেহও থাকবে। সাহায্যকারীরা সকলেই চেয়েছিলেন, বুমরাহকে বিশ্বকাপে পেতে। তার আগেই ফিট করে তুলতে।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2023/12/ie-bumrah-1.jpg)
এনসিএতে পুনর্বাসনের দিনগুলো
যখন সমগ্র ভারতীয় ক্রিকেট ইকোসিস্টেমের মনোযোগ আইপিএলে ছিল, তখন এনসিএ-তে বুমরাহের পুনর্বাসন শুরু হয়েছিল অ্যাকোয়া প্রশিক্ষণের মাধ্যমে। এটি প্রায় একমাস চলে। এনসিএ জানিয়েছে, কর্মীরা বুমরাহর মনকে একঘেয়েমি থেকে সরাতে নানাকিছু করতেন। তাঁকে ভালো জায়গায় রাখা হয়েছিল। স্পিকারে প্রিয় গানের সঙ্গে বুমরাহ জিমে হেঁটেছেন। দেওয়া হয়েছে পছন্দসই খাবার। ঋষভ পন্ত, শ্রেয়াস আইয়ার, কেএল রাহুলও সেই সময়ে এনসিএতে ছিলেন। যা, বুমরাহকে পুনর্বাসনে সাহায্য করেছিল। বুমরাহ যাতে পুনর্বাসনের জন্য তাড়াহুড়ো না-করে, সেদিকে কড়া নজর ছিল এনসিএ কর্মীদের। লোডিং ফেজ নামে এই পর্বে বুমরাহ একটি বা দুটি ওভার বল করানো হয়েছে। ধীরে ধীরে সেই সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। ক্রমশ বুমরাহ পাঁচ ওভার বল করেছেন। তারপর সেটা বেড়ে হয়েছে আট ওভার। সেখান থেকে বেড়ে হয়েছে ১০ ওভার। তাঁর প্রতিটি ডেলিভারির ওপর নজর রাখা হয়েছে।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2023/12/ie-bumrah-2.jpg)
সেশন চলেছে জুন থেকে জুলাইয়ে
নেট সেশন শুরু হয়েছিল জুনের মাঝামাঝি। চলেছে জুলাই পর্যন্ত। প্রথমে তাঁকে কেবল একজন ব্যাটসম্যানকে বোলিং করতে দেওয়া হয়েছিল। তারপর ধীরে ধীরে একাধিক ব্যাটসম্যানকে বোলিং করেছেন বুমরাহ। বুমরাহ যাতে বছরে মাত্র দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেন, সেই দিকেও নজর রাখা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে চেষ্টা হয়েছিল সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপেই বুমরাহকে জাতীয় দলে ফেরানোর। শেষ পর্যন্ত বুমরাহ আয়ারল্যান্ডে ভারতের টি-টোয়েন্টিতে আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে উপস্থিত ছিলেন। তিনি জাতীয় দলে জায়গা করে নেওয়ার পরেও, বিসিসিআই নিশ্চিত করেছিল যাতে প্রশিক্ষক রজনীকান্ত বুমরাহর প্রত্যাবর্তন তত্ত্বাবধান করেন। এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপে তাঁর কাজের ওপর নজর রাখেন।
The moment we have all been waiting for. @Jaspritbumrah93 like we have always known him. 🔥🔥 #TeamIndia pic.twitter.com/uyIzm2lcI9
— BCCI (@BCCI) August 16, 2023
২০২৩ কী শিখিয়েছে, ২০২৪ মানে কী?
২০২৪ সালে, ভারত ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পাঁচটি হোম টেস্ট খেলেছে। তারপরে দুই মাস আইপিএল এবং একটি টি২০ বিশ্বকাপ খেলবে। আইসিসি শিরোপা খরা অব্যাহত থাকায়, ক্যারিবিয়ানে ভারতের জিততে হলে এক্স-ফ্যাক্টর বুমরাহকে প্রয়োজন। এর পরে, পাঁচটি টেস্ট খেলার জন্য অস্ট্রেলিয়া সফরে যাওয়ার আগে বাংলাদেশ এবং নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে একটি হোম মরশুম আছে। সব মিলিয়ে ভারতীয় দল আগামী বছর ন্যূনতম ১৪টি টেস্ট খেলতে তৈরি। যার অর্থ, একটি ব্যাপক কাজের চাপ ব্যবস্থাপনা। বুমরাহর পছন্দের জায়গায় সফরের পাশাপাশি, নির্বাচকরা এবং টিম ম্যানেজমেন্ট ফরম্যাটেও অগ্রাধিকার দিতে চান। এভাবেই বুমরাহর মত খেলোয়াড়দের চোট-আঘাতের মোকাবিলা করতে চায় টিম ইন্ডিয়া।