Yusuf Dikec: প্যারিস অলিম্পিকে তাঁর মধ্যে এলেন, দেখলেন, জয় করলেন মার্কা ভাবভঙ্গি খুঁজে পেয়েছে বিশ্ববাসী। যা দেখে গোটা দুনিয়া রীতিমতো মোহিত। তুরস্কের সেই পিস্তল শুটার ইউসুফ ডিকেক এখনও সেই আগের মতই ক্যাজুয়াল। দিল্লির তুঘলকাবাদে ড. করনি সিং শুটিং রেঞ্জ দিয়ে হাঁটছিলেন, আর তাঁকে একঝলক দেখতে বাচ্চা থেকে বুড়ো, নতুন শুটার এমনকী কোচরাও ভিড় জমালেন।
বেজিংয়ে প্রথমবার অলিম্পিকে অংশ নিয়েছিলেন। প্যারিসে প্রথমবার পদক জিতলেন। সতীর্থ সেভাল লায়দা তারহানের সঙ্গে মিক্সড টিমে রুপো জিতেছেন। বেজিং থেকে প্যারিস পর্যন্ত, ৫১ বছর বয়সি এই শুটারকে কেউ তেমন চিনত না। আর, এখন সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে গোটা বিশ্বের অনেকের কাছেই তিনি আইকন।
অলিম্পিক পদক জেতার সময় ডিকেকের গায়ে ছিল তুরস্কের সাধারণ একটা টি-শার্ট। ক্যাজুয়ালভাবে ১০ মিটার এয়ার পিস্তলের নিশানায় চোখ রাখেন। দুই চোখ খোলা ছিল। এক হাত আবার তখন পকেটে। যেন একটা সাধারণ ব্যাপার। তিনি শুধু প্রতিদিনের কাজটা করতে এসেছেন। আর, তাঁর এই আচরণটাই সবার চোখ টেনেছে। তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারার এই বাসিন্দা তাঁর ১৬ বছরের অলিম্পিক কেরিয়ারে এতটা নজর অতীতে কখন টানেননি। সবার চোখ ছিল তাঁর ও দক্ষিণ কোরিয়ার কিম ইয়ে-জির দিকে।
তারপর থেকে এখনও তিনি আগের মতই ক্যাজুয়াল। সম্প্রতি দিল্লিতে রীতিমতো মজা করে সাংবাদিকদের বলেছেন, 'আমরা শিখেছি যে, সোনার চেয়েও রুপো বেশি দামি।' তবে, জনপ্রিয় হয়ে যাওয়ার পর ডিকেককে এখন অনেক কিছু করতে হয়, যেটা তিনি আগে করেননি। যেমন, নিজের ছবির পোজ তুরস্কে ট্রেডমার্ক করতে হয়েছে। তাঁর টুইটগুলো সহজেই ভাইরাল হয়। তুরস্কের প্রেসিডেন্টের আবদার মেনে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। রোবট সম্পর্কে একটা মজার টুইট করেছিলেন। যার জবাবে ইলন মাস্ক পর্যন্ত টুইট করতে বাধ্য হয়েছেন।
এর আগেই অবশ্য ডিকেক শুটিং দুনিয়ায় অন্য কারণে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। তা হল, নিশানাবাজির সময় তাঁর সেই ক্যাজুয়াল ভাব। অনেক শ্যুটারকেই দেখা যায় যে, শ্যুটিং করার সময় চশমা পরেন। যার একটি ব্লিন্ডার, আরেকটি আইরিস ডায়াফ্রাম নামে পরিচিত। ডায়াফ্রাম পরতে হয় অ্যাপারচার কমানো এবং লক্ষ্য স্থির করার জন্য। ডিকেক কিন্তু, একজোড়া ইয়ারবাড আর একটি পিস্তল নিয়েই বরাবর শুটিং করেছেন। চোখ বন্ধের কোনও প্রশ্নই নেই। তাঁর দুই চোখই বরাবর খোলা থাকত।
ডাইকেক বলেন, 'দুই চোখ খোলা রেখে শুটিংয়ের দক্ষতা অর্জন করতে আমার প্রচুর সময় লেগেছে। শেষ পর্যন্ত পেরেছি। দীর্ঘদিন ধরে করছিও। প্রথমে একটা চোখ বন্ধ করে শুটিং করার চেষ্টা করেছি। পরে দুই চোখ খোলা রেখে শুটিং করছি। এতেই কাজ দিয়েছে।'
অলিম্পিক শুটিংয়ে এটাই তুরস্কের প্রথম পদক। অলিম্পিক অ্যাথলিট হওয়ার আগে, ডিকেক তুরস্কের গেন্ডারমারিতে একজন প্রাক্তন নন-কমিশনড অফিসার হিসেবেই শ্যুটিং সার্কেলে বেশি পরিচিত ছিলেন। খেলাধূলায় তাঁর কেরিয়ার বেশ দেরিতে শুরু হয়েছিল। ২৮ বছর বয়সে শ্যুটিং শুরু করেন। ৩৫ বছর বয়সে বেজিং অলিম্পিকে নামেন। যখন লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক হবে, তখন তাঁর বয়স হবে ৫৫। ডিকেক হাল ছাড়তে নারাজ। এখন অলিম্পিকে সোনা জয়ের চেষ্টা করছেন।
আরও পড়ুন- বিতর্কিত মন্তব্য মোরিনহোর, ম্যানঞ্চেস্টার ইউনাইটেডকে নিয়ে কটাক্ষ প্রাক্তন কোচের?
অলিম্পিকে সফল হলেও ডিকেক কিন্তু দিল্লিতে আইএসএসএফ বিশ্বকাপে ১০ মিটার এয়ার পিস্তল ইভেন্টে হেরে গিয়েছেন। এই ব্যাপারে বললেন, 'অলিম্পিকের পরে আমাকে অনেক ডিনার এবং অভ্যর্থনায় অংশ নিতে হয়েছে। শুরুতে এসব ভালোও লাগছিল। কিন্তু, এখন ব্যাপারটা বিরক্তিকর হয়ে গিয়েছে। সবাই একই কথা জিজ্ঞাসা করে। এত সময় গিয়েছে যে প্রশিক্ষণে সময় দিতে পারিনি। বন্ধু থেকে পরিবার, কারও সঙ্গেই দেখা করার খুব বেশি সময় পাইনি। অলিম্পিক শেষ হওয়ার পরে মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে পেরেছি, এটাই ওই সময়ে আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।'