১০ জুন, ২০১৯। মুম্বইয়ের এক হোটেলে সাংবাদিক বৈঠক করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন যুবরাজ সিং। ৩৭ বছরের বিশ্বকাপ জয়ী স্টার ক্রিকেটার আলবিদা বলেছিলেন বাইশ গজকে। যুবির অবসরের এক মাসও পেরোয় নি। দেশের কিংবদন্তি এই ক্রিকেটার মঙ্গলবার পা রাখেন শহর কলকাতায়। ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কর্মাসের পক্ষ থেকে তাদের ৯১তম বার্ষিক সাধারণ সভায় যুবিকে জীবনকৃতী সম্মান তুলে দেওয়া হয় এদিন। সেই উপলক্ষ্য়েই দুপুরে বাইপাসের ধারের এক হোটেলে এসেছিলেন 'পাঞ্জাব দা পুত্তর'।
অনুষ্ঠানে যুবরাজ এমন এক কথা শোনালেন, যা সম্ভবত আগে কখনও শোনা যায়নি তাঁর মুখ থেকে। সাফ জানিয়ে দিলেন, সব মিলিয়ে দীর্ঘ ২৫ বছরের ক্রিকেট কেরিয়ারে তাঁর একটাই আক্ষেপ রয়ে গিয়েছে - ইন্ডিয়ান প্রিমিয়র লিগে নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে না পারা। কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব (২০০৮-১০), পুণে ওয়ারিয়র্স ইন্ডিয়া (২০১১-১৩), রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্য়াঙ্গালোর (২০১৪), দিল্লি ডেয়ারডেভিলস (২০১৫), সানরাইজার্স হায়দরাবাদ (২০১৬-১৭), কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব (২০১৮) ও মুম্বই ইন্ডিয়ান্স (২০১৯) এর জার্সিতে আইপিএল খেলেছেন যুবরাজ।
আরও পড়ুন: ক্রিকেটকে গুডবাই বললেন যুবরাজ
যদি পরিসংখ্যান দেখা যায়, তাহলে যুবির আক্ষেপ যথার্থ। ১৩২টি আইপিএল ম্য়াচ খেলা যুবি মাত্র ২,৭৫০ রান করেছেন। তাঁর ব্য়াটিং গড় ২৪.৭৭, স্ট্রাইক রেট ১২৯.৭১। ১৩টি অর্ধশতরান করলেও যুবি কখনও সেঞ্চুরির মুখ দেখেন নি। তাঁর সর্বোচ্চ রান ৮৩। সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ও মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে আইপিএল খেতাব জয়ের স্বাদও পেয়েছেন তিনি। যুবির মতো একজন টি-২০ স্পেশালিস্ট ব্য়াটসম্যানের থেকে হয়তো এই পরিসংখ্যান প্রত্য়াশিত নয়। যুবরাজ এদিন বললেন, "আমি আইপিএলে কখনই কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে সেভাবে ধাতস্থ হতে পারি নি। একক ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে একাধিকবার খেলেও মানিয়ে নিতে পারি নি।"
২০১৪ সালে যুবরাজ আইপিএল ইতিহাস লিখেছিলেন, ১৪ কোটি টাকার বিনিময়ে বিরাট কোহলির রয়্য়াল চ্য়ালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরে এসে। আইপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার হয়ে যান সেসময়। যদিও পরের বছরই তিনি নিজের রেকর্ড নিজেই ভাঙেন, ১৬ কোটি টাকায় দিল্লি ডেয়ারডেভিলসে এসে। কিন্তু ২০১৪-র কথা তিনি ভুলতে পারেন নি। যুবি বলছেন, "২০১৪-তে আমি কেকেআর-এ প্রায় যোগ দিয়েই ফেলেছিলাম। কিন্তু শেষ মুহূর্তে নিলামে আমাকে আরসিবি নিয়ে নেয়। সম্ভবত আইপিএলে-র সেরা মরসুমটা আরিসিবি-তেই কাটিয়েছি। কিন্তু কেকেআর-এ খেলতে না পারাটা দুর্ভাগ্যজনক। যদিও এটা নিয়ে কোনও অভিযোগ করতে পারি না। সব দলের হয়েই খেলা উপভোগ করেছি। হায়দরাবাদ আর মুম্বইয়ের হয়ে ট্রফি জয়ের স্বাদ ভুলব না।"
দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ২০০৭ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম টি-২০ বিশ্বকাপই জিতে নিয়েছিল ভারত। মহেন্দ্র সিং ধোনি ছিলেন সেই দলের ক্যাপ্টেন, যুবরাজ ছিলেন ডেপুটি। স্টুয়ার্ট ব্রডকে ওভারের প্রতিটি বলে ছয় মারা থেকে দ্রুততম অর্ধ-শতরান, টুর্নামেন্ট মাতিয়ে দিয়েছিলেন যুবি একাই। ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম কারিগর ছিলেন তিনি।
মঙ্গলবার যুবরাজ জানালেন, এই টুর্নামেন্টই ক্রিকেটে নতুন যুগের সূচনা করেছিল। দেশের সিনিয়র ক্রিকেটারর ততটা গুরুত্ব দেন নি এই ফর্ম্যাটকে, ফলে একেবারে নতুন টিম আর নতুন অধিনায়ক নিয়েই অভিযানে বেরিয়ে পড়ে ভারত। যুবি বলছেন, "অসাধারণ টুর্নামেন্ট ছিল ওটা, ক্রিকেট খেলাটাকেই অন্য পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল। কেউ ভাবেনি আমরা জিততে পারব। ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলেই জিতেছিলাম। দলে ছিল নতুন অধিনায়ক। কয়েকটা ম্য়াচ আমাদের হারতে হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু ফাইনালের আগে গুরুত্বপূর্ণ তিনটে ম্যাচ জিতেছিলাম। মন খুলে খেলার মাঠে নিজেদের প্রকাশ করেছিলাম। আর ব্রডকে ছয় বলে ছ'টি ছক্কা মারার ক্ষেত্রে একটা কথাই বলব, ক্রিকেটে এক একটা দিন এরকম আসে। যখন সবকিছুই একদম ঠিকঠাক যায়। নাহলে ব্রডের ওভারের পাঁচ নম্বর ইয়র্কারটা মাঠের বাইরে পাঠাতে পারতাম না। ওটা আমার দিন ছিল।"