আর ১৫ দিন পর ফের পৃথিবীর কাছাকাছি আসবে বৃহৎ গ্রহাণু, হুঁশিয়ারি নাসার

আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর আমাদের গ্রহের পাশ দিয়ে ২৩,১০০ কিমি প্রতি ঘণ্টা বেগে চলে যাবে এই গ্রহাণু, জানিয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার পাসাডেনায় অবস্থিত নাসা'র সেন্টার ফর নিয়ার আর্থ অবজেক্ট স্টাডিজ।

আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর আমাদের গ্রহের পাশ দিয়ে ২৩,১০০ কিমি প্রতি ঘণ্টা বেগে চলে যাবে এই গ্রহাণু, জানিয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার পাসাডেনায় অবস্থিত নাসা'র সেন্টার ফর নিয়ার আর্থ অবজেক্ট স্টাডিজ।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
earth asteroid

কিছুটা এরকমই দেখতে পৃথিবীগামী গ্রহাণু। প্রতীকী ছবি

বিশ্বের উচ্চতম বিল্ডিং যে দুবাইয়ের বুর্জ খালিফা, তা জানেন অনেকেই। তা আগামী আন্দাজ দুই সপ্তাহের মধ্যে সেই বুর্জ খালিফার আয়তনের একটি অ্যাস্টারয়েড বা গ্রহাণু পৃথিবীর কান ঘেঁষে বেরিয়ে যাবে বলে সতর্কবার্তা জারি করেছে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা (Nasa)। গ্রহাণুটির নাম দেওয়া হয়েছে 2000 QW7, যার প্রস্থ ২৯০ থেকে ৬৫০ মিটার, এবং উচ্চতা প্রায় ৮৩০ মিটার।

Advertisment

আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর আমাদের গ্রহের পাশ দিয়ে ২৩,১০০ কিমি প্রতি ঘণ্টা বেগে চলে যাবে এই গ্রহাণু, জানিয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার পাসাডেনায় অবস্থিত নাসা'র সেন্টার ফর নিয়ার আর্থ অবজেক্ট স্টাডিজ। আশার কথা হলো, পৃথিবীর থেকে প্রায় ৩.৩ মিলিয়ন মাইল, অথবা ৫.৩ মিলিয়ন কিমি দূর দিয়ে যাবে এই গ্রহাণু, যদিও মহাকাশ গবেষণার নিরিখে এটিকে 'নিয়ার আর্থ অবজেক্ট' হিসেবেই ধরা হচ্ছে।

এর কারণ, পৃথিবীর ১.৩ অ্যাস্ট্রোনমিকাল ইউনিটের মধ্যে কোনও গ্রহাণু অথবা মহাকাশ থেকে অন্য কোনও বস্তু চলে এলেই সেটিকে 'নিয়ার আর্থ অবজেক্ট' ধরা হয়। প্রশ্ন, অ্যাস্ট্রোনমিকাল ইউনিট কীভাবে মাপা হয়? উত্তর, পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব দিয়ে। অর্থাৎ ৯২.৯ মিলিয়ন মাইল অথবা ১৪৯.৬ মিলিয়ন কিমি হলো এক অ্যাস্ট্রোনমিকাল ইউনিট। সেই হিসেব অনুযায়ী, পৃথিবী থেকে ০.০৩৫৬৪ অ্যাস্ট্রোনমিকাল ইউনিটের দূরত্ব বজায় রাখবে 2000 QW7।

আরও পড়ুন: ভূত কণাদের মধ্যেই কি লুকিয়ে মহাকাশের জন্ম রহস্য?

Advertisment

পৃথিবীর মতোই সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে 2000 QW7, কিন্তু মাঝেমাঝে আমাদের গ্রহের কক্ষপথের কাছাকাছি চলে আসে। এর আগে 2000 QW7 পৃথিবীর কাছাকাছি আসে ১ সেপ্টেম্বর, ২০০০ সালে। এবং আগামী ১৪ সেপ্টেম্বরের পর ১৯ অক্টোবর, ২০৩৮-এর আগে আর পৃথিবীর ধারেকাছে আসবে না সে।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি স্পেস এক্স এবং টেসলা সংস্থার সিইও এলন মাস্কের সৌজন্যে খবরের শিরোনামে এসেছে গ্রহাণু। গত সপ্তাহে টুইটারে মাস্ক পৃথিবীবাসীকে মনে করিয়ে দেন যে বর্তমানে কোনও "খুনি অ্যাস্টারয়েড" পৃথিবীর দিকে ধেয়ে এলে তার মোকাবিলা করার সামর্থ্য আমাদের নেই। অ্যাপোফিস নামক গ্রহাণু নিয়ে একটি টুইটের জবাবে একথা বলেন মাস্ক। উল্লেখ্য, এই অ্যাপোফিস গ্রহাণু ২০২৯ সালে পৃথিবীর অত্যন্ত কাছাকাছি চলে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে, এবং মহাকাশ বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যেই এর নাম দিয়েছেন 'গড অফ কেওস', বা 'বিশৃঙ্খলার দেবতা'।

আরও পড়ুন: চাঁদের প্রথম ছবি তুলে পাঠাল চন্দ্রযান-২, উচ্ছ্বসিত ইসরো

অ্যাপোফিস ৯৯৯৪২ নিয়ে হুঁশিয়ারি জারি করেছেন প্রখ্যাত জ্যোতিঃপদার্থ বিজ্ঞানী অর্থাৎ অ্যাস্ট্রো-ফিজিসিস্ট নিল ডেগ্রাস টাইসনও। তাঁর মতে, অ্যাপোফিসের সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষ হলে সৃষ্টি হবে বিশাল এক সুনামির, যা ধ্বংস করে দিতে পারে উত্তর আমেরিকার সমগ্র পশ্চিম উপকূলকেই।

নাসা-র পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিদিন মহাকাশ থেকে শয়ে শয়ে পাথর এবং অন্যান্য বস্তুর ধ্বংসাবশেষ প্রবেশ করে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে। যেসব বড় গ্রহাণু মহাকাশে সম্পূর্ণ নিঃশেষ হয়ে যায় না, সেগুলির সঙ্গেও পৃথিবীর বছরে অন্তত একবার সংঘাত ঘটে, যার ফলে আমাদের কিছু ক্ষতিও হয়। একথা সত্যি, বড়সড় কোনও গ্রহাণু এমুখো হলে তাকে এড়ানোর ক্ষমতা পৃথিবীর নেই। কিছু অপরীক্ষিত তত্ত্ব আছে মাত্র।

সেই তত্ত্বগুলির একটি হলো 'গ্র্যাভিটি ট্র্যাক্টর', যা কিনা গ্রহাণুর গতিপথ বদলে দিতে পারে। এই তত্ত্বকে কার্যকরী করতে গেলে লাগবে একটি মহাকাশযান, যেটি গ্রহাণুর পৃষ্ঠতলে অবতরণ না করেও মাধ্যাকর্ষণের জোরে ধীরে ধীরে ঘুরিয়ে দিতে পারবে গ্রহাণুর গতিপথ।