চাঁদে যে জলের অস্তিত্ব রয়েছে, এই সম্ভাবনার কথা আলোচিত হয়ে আসছে ১৯৭০-এর দশক থেকেই, যদিও সেসময় এই তত্ত্বের স্বপক্ষে প্রমাণ ছিল নিতান্তই দুর্বল। বস্তুত, ১৯৬০-এর দশকের শেষদিকে এবং ৭০-এর দশকের গোড়ায় নাসা (NASA)-র অ্যাপোলো চন্দ্র অভিযানের কল্যাণে যেসব মাটি এবং পাথরের নমুনা পৃথিবীতে ফেরত আসে, তা থেকে মনে হয়েছিল চাঁদের মাটি একেবারে শুকনো খটখটে, একফোঁটাও জল নেই।
১৯৯০-এর দশকে ক্লেমেন্টাইন এবং লুনার প্রস্পেক্টর নামে দুটি নাসা অভিযান চাঁদে জলের সন্ধান পায়। যেমন পায় ১৯৯৮ সালে শনি (স্যাটার্ন) গ্রহের দিকে ধাবমান ক্যাসিনি মিশন, যা চাঁদের পাশ দিয়ে উড়ে যায়।
কিন্তু ২০০৮ সালে চাঁদে জলের অস্তিত্বের অকাট্য প্রমাণ সংগ্রহ করে ভারতের চন্দ্রযান-১ এ বসানো দুটি যন্ত্র। এই আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের মধ্যে চাঁদ সম্বন্ধে ধারণায় আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছে শুধু নয়, চন্দ্র অভিযানের গুরুত্ব এবং আগ্রহও কয়েক ধাপ বাড়িয়ে দিয়েছে।
আরও পড়ুন: Chandrayaan 2 Landing Date: কখন চাঁদের মাটি স্পর্শ করবে বিক্রম?
সৌরজগত এবং সমগ্র মহাকাশের আরও গভীরে খোঁজ চালাতে চাঁদকে যদি ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে হয়, তবে জলের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কারণ ওইসব ঘাঁটিতে মানুষকে দীর্ঘ সময় ধরে বসবাস করতে হবে, যা জল ছাড়া সম্ভব হবে না। এবং অতদিন থাকতে গেলে যে পরিমাণ জল লাগবে, তা আর্থিক কারণেই পৃথিবী থেকে বয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
চাঁদের দুই মেরুতে প্রচুর পরিমাণ জল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। মনে করা হচ্ছে, এই জল বরফ হয়ে বন্দী হয়ে আছে গভীর গহ্বরের মধ্যে। কিছু গণনা অনুযায়ী, চাঁদের দুই মেরুতে জলের পরিমাণ কয়েক লক্ষ কোটি টন। তা এই মেরু অঞ্চলেই জলের অস্তিত্ব নিয়ে নতুন তথ্য পেশ করবে চন্দ্রযান-২। এছাড়া চাঁদে জলের অণুর পর্যাপ্ততাও বিশ্লেষণ করে দেখবে চন্দ্রযান।
চাঁদে জল আছে, কিন্তু তা উত্তোলনযোগ্য কি?
চাঁদে যে জল আছে, তা আমাদের নিশ্চিতভাবে জানায় চন্দ্রযান-১, কিন্তু এখনও জানা যায় নি, ঠিক কতটা সেই জলের পরিমাণ। এও জানা যায় নি, আদৌ সেই জলের তরলীকরণ এবং উত্তোলন সম্ভব কিনা। যা পাওয়া গেছে তা হলো হাইড্রোজেনের এবং H2O অর্থাৎ জলের অণু, এবং হাইড্রক্সিল স্থুলাণু বা ion।
চাঁদে আবিষ্কৃত জল কীভাবে তৈরি হয়, তার বেশ কিছু সম্ভাব্য কারণ রয়েছে। একথা আমরা জানি যে চাঁদের ভূপৃষ্ঠে উপস্থিত রয়েছে বিভিন্ন উপাদানের অক্সাইড রূপ। এইসব অক্সাইড সৌর বায়ুপ্রবাহে হাইড্রোজেন স্থুলাণুর সঙ্গে মিলে তৈরি করে থাকতে পারে হাইড্রক্সিল অণু, যা হাইড্রোজেনের সঙ্গে মিশলে তৈরি হবে জল বা H2O।
এছাড়াও চাঁদে জলের বহিরাগত উৎসও থেকে থাকতে পারে। অতীতে জলীয় বাষ্প বহনকারী ধূমকেতু (comet) এবং গ্রহাণুর (asteroid) সঙ্গে একাধিকবার সংঘর্ষ ঘটেছে চাঁদের। এর ফলে সম্ভবত কিছু জলের রেশ স্থানান্তরিত হয়েছে চাঁদে, যা আমাদের উপগ্রহের হিমশীতল অঞ্চলগুলিতে আজও বন্দী হয়ে রয়েছে। কিন্তু যদি প্রমাণ হয়ে যায় যে জল চাঁদে তৈরি হয় নি, বরং বাইরে থেকে এসেছে, সেক্ষেত্রে অবশ্যই মেনে নিতে হবে যে জলের পরিমাণ হবে সীমিত।