মহাকাশে এর আগেও অনেক বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ড হয়েছে, যে কারণে পৃথিবী এবং মানুষের জীবন প্রতিদিন নতুন প্রযুক্তির দরজা খুলেছে এবং মানুষ উন্নয়নের পথে হেঁটেছে। তবে, বৃহস্পতিবার মহাকাশে এমন দুর্ঘটনা ঘটতে চলেছিল, যার ফলে এক মুহূর্তে পুরো বিশ্ব এক দশক পিছিয়ে যেতে পারত। মহাকাশে উপস্থিত আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে একটি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। যাই হোক, দুর্ঘটনার পরেও এর তেমন কোনও প্রভাব পড়েনি এবং কোনও ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি। কিন্তু, দুর্ঘটনার পর মহাকাশ স্টেশনের সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ ৪৫ মিনিটের জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং সব থেকে ভয়ঙ্কর ঘটনা সাত মহাকাশচারীও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ঠিক কী হয়েছিল?
মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার মতে, মহাকাশে অবস্থিত আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন পুরো ৪৫ মিনিটের জন্য নিজের জায়গা থেকে সরে গিয়েছিল। এই কারণে, নাসাকে বোয়িং সিএসটি -১০০ স্টারলাইনার রকেটের উৎক্ষেপণ স্থগিত রাখতে হয়েছিল। রিপোর্ট অনুযায়ী, এটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে স্থাপন করার কথা ছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই পুরো ঘটনাটি ঘটে যখন রাশিয়ার একটি মডিউলের থ্রাস্টার স্বয়ংক্রিয়ভাবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে শুরু হয় এবং তারপর মহাকাশ স্টেশনটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। রাশিয়ার এই মডিউলটি কিছুদিন আগে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে স্থাপন করা হয়েছিল।
নাসার একটি রিপোর্ট অনুসারে, উৎক্ষেপণ শুরুর কিছুক্ষণ আগে, 'নওকা' নামে রাশিয়ান ল্যাবরেটরি মডিউলে কিছু প্রযুক্তিগত সম্যসার সম্মুখীন হয়েছিল, যার কারণে জেট থ্রাস্টারগুলি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়েছিল এবং পুরো স্পেস স্টেশনটি নিজেই তার স্থান থেকে সরে যাচ্ছিল। নাসার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুরো ৪৫ মিনিটের জন্য স্পেস স্টেশনটি তার জায়গা থেকে সরে গিয়েছিল এবং এই সময়ে স্পেস স্টেশনটির সঙ্গে নাসার যোগাযোগ পুরপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে এবং নাসার বিজ্ঞানীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা দেয়।
যদি এই স্পেস স্টেশনটি ক্ষতিগ্রস্ত হত বা মহাকাশে হারিয়ে যেত, তাহলে সমগ্র পৃথিবী প্রযুক্তিগত সমস্যায় পড়েতে পারত। নাসা তার বিবৃতিতে বলেছে যে পুরো ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে এবং রাশিয়ান স্পেস এজেন্সির সাহায্যও পাচ্ছে তারা এবং এখন স্টারলাইনার ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে বোয়িং লকহিডের সঙ্গে চালু করা হবে মার্টিন কর্প ‘আটলভ ভি’। রকেটটি ৩ আগস্ট উৎক্ষেপণ করা হবে। অন্যদিকে ৪ আগস্ট ব্যাকআপ তারিখ হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে। যার মানে হল যে যদি কোনও কারণে লঞ্চটি ৩ আগস্ট করা না হয় বা যদি কোনও সমস্যার সম্মুখীন হয় তাহলে এটি ৪ আগস্ট আবার চালু করা হবে।
আরও পড়ুন প্রবল গতিতে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে সৌর ঝড়! মহাপ্রলয়ের আশঙ্কা
৪৫ মিনিটের দম বন্ধকর অবস্থার পর নাসার স্পেস স্টেশন ম্যানেজার মন্টালবানোর মতে, "আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনটি তার জায়গা থেকে ৪৫ মিনিটের জন্য তার নির্দিষ্ট জায়গা থেকে সরে গিয়েছিল এবং সেখানে সাতজন ক্রু মেম্বার উপস্থিত ছিলেন”। কন্ট্রোল থ্রাস্টারদের সহযোগিতায় মহাকাশ স্টেশনটি পুনরায় তার জায়গায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। নাসা তার এক বিবৃতিতে বলেছে যে, এই সময়ে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন তার স্থান থেকে খুব দ্রুত সরে যাচ্ছিল এবং ভয়াবহ দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেল আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনটি।
নাসার স্পেস স্টেশনের ম্যানেজার জোয়েল মন্টালবানো বলেন, সেই সময় আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে দুজন রুশ, তিনজন নাসার মহাকাশচারী, জাপান ও ফ্রান্সের প্রত্যেকে একজন ছিলেন এবং যদি কোনও ঘটনা ঘটত তাহলে সাতজনেই বড় বিপদে পড়তে পারতেন। এই ৪৫ মিনিটের সময়, মহাকাশ স্টেশনে উপস্থিত ক্রুদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যাই হোক, 'নওকা' মডিউলে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণ কী এবং কেন হঠাৎ থ্রাস্টার চালু হয়েছিল তা এখনও স্পষ্ট নয় তদন্ত চলছে, এক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে নাসা।
রাশিয়ার 'নওকা' মডিউলটি কী?
কিছুদিন আগে রাশিয়া আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে 'নওকা' নামে তার বৃহত্তম বৃহত্তম মহাকাশ গবেষণাগার চালু করেছিল , মহাকাশ গবেষণার উদ্দেশ্যে। 'নওকা' মানে রুশ ভাষায় বিজ্ঞান এবং এটিকে মহাকাশে রাশিয়ার সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তির উদাহরণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। পরীক্ষাগারে অক্সিজেন জেনারেটর, রোবটিক কার্গো ক্রেন, একটি টয়লেট এবং রাশিয়ান মহাকাশচারীদের জন্য বিছানার ব্যবস্থাও আছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি “প্রোটন রকেট” ব্যবহার করে কক্ষপথে পাঠানো হয়েছে ‘নওকা’কে। রাশিয়ান এই 'নওকা' মডিউল আগামী সময়ে মহাকাশ সম্পর্কিত অনুসন্ধানে অনেক সাহায্য করবে বলে আসা মহাকাশ গবেষণাকারীদের।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন