ISRO-NASA: ইসরোর আরও এক বিরল কৃতিত্ব, ভূমিকম্প সম্পর্কে দেবে আগাম সতর্কতা, ইতিহাস গড়ার দোড়গোড়ায় ভারত
ভূমিকম্প, ভূমিধ্বস বা ভয়ঙ্কর কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম পূর্বাভাস পেতে চলেছে বিশ্ব। কারণ, ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO এবং মার্কিন গবেষণা সংস্থা NASA যৌথভাবে তৈরি করেছে এক শক্তিশালী পৃথিবী পর্যবেক্ষণকারী উপগ্রহ NISAR (NASA-ISRO Synthetic Aperture Radar)। এই উপগ্রহটি ২০২৫ সালের জুলাই মাসের শেষে উৎক্ষেপণ করা হবে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে।
NISAR-এর নজরদারি
এই উপগ্রহে রয়েছে ডুয়াল SAR রাডার প্রযুক্তি
দুটি রাডার:
S-Band (ISRO দ্বারা নির্মিত)
L-Band (NASA-এর Jet Propulsion Laboratory দ্বারা তৈরি)
এই রাডারগুলো একসঙ্গে পৃথিবীর পৃষ্ঠের সূক্ষ্ম পরিবর্তন, আগ্নেয়গিরি, ভূমিধ্বস, মেরু বরফ গলা, ভূমিকম্প ইত্যাদি নজরদারি করতে পারবে। প্রতি ১২ দিনে একবার পৃথিবীর নির্দিষ্ট অঞ্চল পর্যবেক্ষণ করবে।
ভারত ও আমেরিকার যৌথ মিশন NISAR জুলাইয়ের শেষের দিকে উৎক্ষেপণ করা হবে। এটি হবে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল পৃথিবী-পর্যবেক্ষণ উপগ্রহ, যা ডুয়াল SAR রাডার প্রযুক্তিতে সজ্জিত। 'NISAR'-এর মাধ্যমে পৃথিবীর পৃষ্ঠ পর্যবেক্ষণ, ভূমিকম্প ও ভূমিধসের মতো দুর্যোগের সঠিক পূর্বাভাস এবং পরিবেশগত পরিবর্তন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য শীঘ্রই সম্ভব হবে।
NASA এবং ISRO-এর এই যৌথ অভিযানটি ২০২৫ সালের জুলাইয়ের শেষ নাগাদ অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে GSLV রকেটের মাধ্যমে উৎক্ষেপণ করা হবে। এই প্রকল্পের মোট ব্যয় প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ১২,৫০০ কোটি টাকা), যা এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল আর্থ ইমেজিং স্যাটেলাইটে পরিণত করেছে।
NISAR কীভাবে কাজ করবে?
NISAR স্যাটেলাইটকে বিশেষ করে তোলে এর ডুয়াল ফ্রিকোয়েন্সি রাডার প্রযুক্তি। এতে দুটি ভিন্ন রাডার রয়েছে -
ISRO-এর আহমেদাবাদ-ভিত্তিক স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার (SAC) দ্বারা নির্মিত প্রথম S-ব্যান্ড রাডার।দ্বিতীয় এল-ব্যান্ড রাডারটি নাসার ক্যালিফোর্নিয়া-ভিত্তিক জেট প্রপালশন ল্যাব (জেপিএল) দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। উভয় রাডার একসাথে পৃথিবীর পৃষ্ঠের সূক্ষ্ম পরিবর্তন, মেরু বরফ, হিমবাহের কার্যকলাপ, আগ্নেয়গিরি, ভূমিধস এবং ভূমিকম্পের মতো ঘটনাগুলি পর্যবেক্ষণ করবে। এই প্রযুক্তি "সিনথেটিক অ্যাপারচার রাডার (SAR)" এর উপর ভিত্তি করে তৈরি।
২০১২ সালে ISRO এবং NASA-এর মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে এই অভূতপূর্ব অভিযানের সূচনা হয়েছিল। ২০১৪ সালে, দুটি সংস্থার মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যার অধীনে একটি রাডার ভারতে এবং অন্যটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি করার কথা ছিল। আহমেদাবাদের SAC সেন্টারের পরিচালক ডঃ নীলেশ দেশাইয়ের মতে, এটি ভারতের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রতীক।
NISAR স্যাটেলাইট ভূমিকম্প, ভূমিধ্বস, হিমবাহ গলে যাওয়া, সমুদ্রের পরিবর্তন এবং অন্যান্য পরিবেশগত কার্যকলাপের সঠিক পর্যবেক্ষণ সক্ষম করবে। এই স্যাটেলাইট প্রতি ১২ দিনে একবার পৃথিবীর একই স্থানের ছবি তুলবে, যার ফলে বিজ্ঞানীরা এমনকি ক্ষুদ্র-স্তরের পরিবর্তনগুলিও শনাক্ত করতে পারবেন। এটি কেবল ভারত এবং আমেরিকা নয়, সমগ্র বিশ্বকে জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস দিতে সহায়তা করবে। উৎক্ষেপণের ১ থেকে ৩ মাসের মধ্যে, উপগ্রহটি এমন তথ্য সরবরাহ শুরু করবে যা নীতি নির্ধারণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশ সুরক্ষায় কার্যকর হবে।