Turkish Brands Boycott: ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার ঘটনা সামনে এসেছে। পাকিস্তানের প্রতি তুরস্কের 'ভালবাসা' প্রকাশ্যে আসতেই পাকিস্তানকে সমর্থন জানানোয় তুরস্ক ও আজারবাইজানকে কার্যত নিষিদ্ধ করল ভারত। এই দুটি দেশে ভ্রমণ সংক্রান্ত বুকিংয়ে ৬০% হ্রাস পেয়েছে এবং ট্যুর ক্যান্সেলেশন ২৫০% বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন শীর্ষস্থানীয় ভ্রমণ সংস্থাগুলি।
এবার দেশের প্রধান ই-কমার্স কোম্পানি Myntra এবং AJIO-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলি প্রথমে Trendyol, Koton এবং LC Waikiki-এর মতো তুর্কি ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট তালিকা থেকে সরিয়ে দিয়েছে। সূত্রের খবর, Myntra এবং Reliance-এর AJIO এই ব্র্যান্ডগুলি তুর্কি ব্র্যান্ডের সব ধরণের প্রোডাক্ট বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে।
রিলায়েন্স বলেছে, "আমাদের কাছে 'নেশন ফার্স্ট' কেবল একটি স্লোগান নয়, বরং এটি আমাদের সিদ্ধান্তের ভিত্তি। আমরা দেশের অনুভূতি এবং স্বার্থ বিবেচনা করে আমাদের সমস্ত প্ল্যাটফর্মে বিষয়গুলি পর্যালোচনা করছি।"
বর্তমানে, Myntra এবং AJIO-এর মতো প্ল্যাটফর্মে প্রায় ১০টি তুর্কি ব্র্যান্ড রয়েছে, কিন্তু এখন তাদের বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সাথে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা তুর্কি থেকে আসা আপেল এবং মার্বেলের মতো পণ্য বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। এর পাশাপাশি ভারতীয় পর্যটকদের মধ্যে ক্ষোভ এতটাই প্রবল যে বেশ কয়েকটি ট্রাভেল বুকিং প্ল্যাটফর্ম — যেমন MakeMyTrip, EaseMyTrip, Ixigo, Cox & Kings এবং Travomint — এই দুটি দেশের জন্য ফ্লাইট ও হোটেল বুকিং স্থগিত করেছে।
MakeMyTrip-এর এক মুখপাত্র বলেন, “আমরা আমাদের ওয়েবসাইট থেকে তুরস্ক ও আজারবাইজানের সব প্রমোশন সরিয়ে দিয়েছি। আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত।”EaseMyTrip জানিয়েছে, গত সপ্তাহে তুরস্কে ২২% এবং আজারবাইজানে ৩০% ভ্রমণ বুকিং বাতিল হয়েছে।
Ixigo ও Travomint-এর ঘোষণা:
Ixigo শুক্রবার তাদের অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে জানায়: “আমরা তুরস্ক, আজারবাইজান এবং চিনে বুকিং স্থগিত করেছি। ভারতের জন্য, আমরা কোনও আপোস করবো না। জয় হিন্দ।”
Travomint জানিয়েছে যে তারা টার্কিশ এয়ারলাইন্স, পেগাসাস, কোরেন্ডন এবং আজারবাইজান এয়ারলাইন্স-এর সব ফ্লাইটের টিকিট বিক্রি বন্ধ করেছে। ওয়েবসাইটটি জানায়, “এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত এবং অপরিবর্তনীয়। ভবিষ্যতে এই দেশগুলির সঙ্গে কোনও ব্যবসায়িক সম্পর্ক রাখা হবে না।”
ইন্ডিয়ান ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে যে সদস্য সংস্থাগুলির ১৫–২০% বুকিং ইতোমধ্যেই বাতিল হয়েছে। কনফেডারেশন অফ অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স (CAIT) তুরস্ক-আজারবাইজান ভ্রমণ বয়কটের দাবিতে সকল ট্যুর ও ট্রাভেল অপারেটরের সাথে সমন্বয় করছে।
তুরস্কের পর্যটন মন্ত্রকের তথ্য অনুসারে ২০২৪ সালে ৩.৩১ লক্ষ ভারতীয় তুরস্কে ভ্রমণ করেছেন, যা আগের বছরের তুলনায় ২১% বেশি। একইভাবে, আজারবাইজানে ২০২৪ সালে ভারতীয় পর্যটক সংখ্যা ছিল ২.৪৪ লক্ষ। যা ২০২৩ সালের তুলনায় দ্বিগুণ।
২০২৪ সালে ভারত থেকে তুরস্কে সরাসরি ফ্লাইটে যাত্রী সংখ্যা ছিল ৫.০৫ লক্ষ, যা আগের বছরের তুলনায় ১৫% বেশি। আজারবাইজানে এই সংখ্যা ২৮,৮৯৯ থেকে বেড়ে হয়েছে ৮০,৫৬৭। তবে, এখন এই প্রবণতা হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হয়েছে।
তুরস্ক ও আজারবাইজানের পাকিস্তানপ্রীতি ভারতের জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব এবং সন্ত্রাসবাদ প্রশ্নে ভারতের পর্যটকরা এখন এককাট্টা অবস্থান নিচ্ছেন—যার মাধ্যমে বিশ্বমঞ্চে ভারতীয়দের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান আরও সুদৃঢ় হচ্ছে।