১৪৯ বছর পরেও স্বমহিমায় বিরাজমান ছিল ত্রিপুরার রাজন্য আমলের দুর্গাবাড়ির দুর্গাপুজো

Durga Bari Agartala: দুর্গাবাড়িতে অনুষ্ঠিত এই রাজন্য আমলের দুর্গাপুজোর ইতিহাস অবশ্য বর্তমান আগরতলার চাইতেও পুরোনো।

Durga Bari Agartala: দুর্গাবাড়িতে অনুষ্ঠিত এই রাজন্য আমলের দুর্গাপুজোর ইতিহাস অবশ্য বর্তমান আগরতলার চাইতেও পুরোনো।

author-image
Debraj Deb
New Update
দুর্গাবাড়ি পুজো ইতিহাস  ,আগরতলা দুর্গাবাড়ি  ,রাজ্য সরকার পুজো ব্যয়  ,মার্জার চুক্তি ত্রিপুরা,  রাজ্য দায়িত্ব দুর্গাপূজা,  Durga Bari Agartala,  royal era Durga Puja Tripura,  ১৪৯ বছর পুরনো দুর্গাপূজা  ,two-arm Durga idol Tripura,  রাজন্য প্রথা ও সংস্কৃতি

Durga Bari Agartala:এই পুজোর নেপথ্যে অনন্য় এক ইতিহাস।

১৪৯ বছর পরও দুর্গাপূজায় ত্রিপুরার মূল আকর্ষণগুলির মধ্যে স্বমহিমায় বিরাজমান ছিল এবারের আগরতলার দুর্গাবাড়ির বনেদি পুজো। ১৯৪৯ সালে ভারতভুক্তির সময় রাজন্য ত্রিপুরা এবং তৎকালীন ভারত সরকারের মধ্যে যে মার্জার চুক্তি হয় তার শর্তানুধীন ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দির চোদ্দো দেবতা বাড়ি মন্দির এবং দুর্গাবাড়ি মন্দিরের পূজার্চনার দায়ভার সরকারের উপর বর্তায়। সে অনুযায়ী প্রতিবছর নিত্যপূজা সহ দুর্গাপূজার সমস্ত ব্যয়ভার রাজ্য সরকারই বহন করে আসছিল, তা সে বাম কংগ্রেস কিংবা বিজেপি জমানাতেই হোক।

Advertisment

১২৪ বছর পুরনো উজ্জয়ন্ত প্রাসাদের পাশে দুর্গাবাড়িতে অনুষ্ঠিত এই রাজন্ন আমলের দুর্গাপুজোর ইতিহাস অবশ্য বর্তমান আগরতলার চাইতেও পুরোনো। এক বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ১৮৯৯ থেকে ১৯০১ সাল পর্যন্ত মহারাজ রাধা কিশোর মানিক্যের আমলে গড়ে তোলা হয় দ্বিতল বিশিষ্ট এই উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ। 

আরও পড়ুন- West Bengal News Live Updates: 'অপারেশন সিঁদুর' থিমে ইতিহাস! দশমীতেও জনস্রোত সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যারে! আজ একাদশীতেও খোলা মণ্ডপ?

Advertisment

সরকারি হিসেব অনুযায়ী ৫৯০ খ্রিস্টাব্দে যূযারুফার নেতৃত্বে মগ রাজাদের পরাজিত করে তৎকালীন রাঙ্গামাটি দখল করেন বর্তমান মানিক্য রাজবংশের শাসকেরা। ১৫৬৭ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন সেনাপ্রধান গোপীপ্রসাদ মহারাজ অনন্ত মানিক্যকে খুন করে নিজে উদয় মালিককে নাম নিয়ে রাজ সিংহাসন দখল করেন। একই সঙ্গে রাঙ্গামাটির নাম বদলে উদয়পুর নাম রাখা হয়। সেই থেকে ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত উদয়পুরই ছিল রাজন্য ত্রিপুরা রাজধানী। 

১৭৬০ সালে মহারাজ কৃষ্ণ মানিক্য উদয়পুর থেকে রাজধানী সরিয়ে পুরাতন আগরতলায় নিয়ে আসেন। পুরাতন আগরতলার সেই পুরানি হাভেলি এখন অবশ্য আর নেই। এক বিধ্বংসী ভূমিকম্পে সেই রাজবাড়ী সহ সমস্ত রাজন্য স্থাপত্য ধ্বংস হয়ে যাবার পর বর্তমান আগরতলা শহরে নতুন করে রাজবাড়ী গড়ে তোলে রাজপাট নিয়ে আসেন মহারাজ কৃষ্ণ কিশোর মানিক্য বাহাদুর (পৃথক আরেকজন রাজা)।

আরও পড়ুন-Invest in WB:ঢালাও প্রশংসা মুখ্যমন্ত্রীর, উৎসবের আবহে বাংলায় বিপুল বিনিয়োগের ঘোষণা দেশের প্রখ্যাত শিল্পগোষ্ঠীর

বর্তমান উজ্জ্যয়ন্ত প্রাসাদ ও তার পার্শ্ববর্তী গোটা প্যালেস কম্পাউন্ডের গড়নটি আরও পরে মহারাজ রাধা কিশোর মানিক্য সময়। দুর্গা বাড়ির এই দুর্গা পূজোর ইতিহাস যে উজ্জয়ন্ত প্রাসাদের চাইতে পুরনো সে বলাই বাহুল্য। দুর্গা বাড়ির প্রধান পুরোহিত জয়ন্ত ভট্টাচার্যের মতে 500 বছরেরও বেশি আগে ত্রিপুরা রাজারা দুর্গা পূজার প্রবর্তন করেছিলেন। 

রাজন্য আমলে এবং ভারতভুক্তির পর মার্জার চুক্তির শর্তানুসারে জয়ন্ত ভট্টাচার্যের বংশ আজ ছয় প্রজন্ম ধরে দুর্গা বাড়িতে পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করে আসছে। দুর্গা বাড়ির দুর্গাপুজোর কিছু বিশেষত্বও রয়েছে। কথিত আছে মহারাজ কৃষ্ণকিশোর মানিক্যের স্ত্রী সুলক্ষণা দেবী সন্ধ্যারতির সময় দশভূজা দেবী দুর্গার মূর্তি দেখে হঠাৎ মূর্চ্ছা যান। দেবী দুর্গা তখন মহারানীকে এই বলে স্বপ্নাদেশ দেন যে আটটি হাত পেছনে লুক্কায়িত রেখে কেবলমাত্র দুটি হাত সামনে নিয়ে তিনি দেবীর ভয়মুক্তির জন্য নতুন রূপে আসবেন। 

সেই থেকে দেবী দশভূজা, দুর্গা বাড়িতে এই নতুন রূপে পুজিত হইয়া আসছেন। আগরতলায় রাজবাড়ীর প্যালেস কম্পাউন্ডে দুর্গাবাড়ীর পুজো আর প্রভুবাড়ির দুর্গাপুজো রাজধানী শহরের প্রথম শ্রেনীর পুজোর মধ্যে অন্যতম। বিসর্জনের সময়ও সর্বপ্রথম দুর্গাবাড়ি এবং প্রভু বাড়ির পুজো বিসর্জন হয়ে থাকে। 

বিসর্জনের প্রথম দিনে বেশিরভাগ পুজো আয়োজকেরা তাদের প্রতিমা নিরঞ্জন না করলেও দুর্গাবাড়ি, প্রভুবাড়ি এবং অন্যান্য কিছু বনেদি বাড়ির পুজো যেমন কর বাড়ি ইত্যাদির প্রতিমা নিরঞ্জন আজকেই সম্পন্ন হয়েছে।

মার্জার চুক্তি অনুযায়ী রীতিমতো রাষ্ট্রীয় বন্দুক সেলামির মধ্য দিয়ে প্রতিবছর সম্পন্ন করা হয় দুর্গাবাড়ির দুর্গাপুজোর প্রতিমা নিরঞ্জন। বিজয়া দশমীর দিন মহিলাদের বিশেষ করে বিবাহিতা স্ত্রীদের ভিড় প্রতিবছর দুর্গা বাড়িতে লক্ষ্য করা যায়। বিসর্জনের আগে মাকে বরণ করে নেবার জন্যে ধুম পড়ে এই শতবর্ষপ্রাচীন মন্দিরে।

আজকেও অনেক ভক্তবৃন্দের ভিড়ে মহিলারা বলছিলেন, বৃষ্টিতে দুর্গাপূজার ঘোরাঘুরিতে কিছু বিঘ্ন ঘটলেও শেষবেলায় মায়ের দর্শনে কোন বাধা হয়নি। এবছর মোট ২,৯৬৫ টি দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে সারা রাজ্যে। এরমধ্যে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় ৭৭২ টি উত্তর ত্রিপুরা জেলায় ২৬২ টি উনকোটি জেলায় ২২০ টি ধলাই জেলায় ৩১৭ টি খোয়াই জেলায় ৩৫৭ টি সিপাহীজলা জেলায় ৩৭৭ টি গোমতী জেলায় ৩৫২ টি এবং দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলায় ২৬৮ টি দুর্গাপূজা আয়োজিত হয়েছে। 

Bengali News Today Durga Puja 2025 tripura