কামড়ালেও বোঝা যাবে না। অজান্তেই মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়বে ব্যক্তি। 'এক ছোবলেই ছবি' যাকে বলে আর কী! আমাদের রাজ্যেই রয়েছে এমন সাপ। কেউটে, শঙ্খচূড়া বা গোখরোর যে গ্ল্যামার রয়েছে তার ছিটে ফোঁটাও নেই। অথচ, উপরে বর্ণিত সাপের থেকে কোনো অংশেই কম যায় না কালাচ সাপ। ইংরাজিতে যার নাম কমন ক্রেট। নামে ‘ক্রেট’ বা কেউটের চিহ্ন থাকলেও পরিচিতিতে কেউটের গ্ল্যামার নেই।
কালাচ সাপ আসলে নিঃশব্দ ঘাতক। কামড়ালেও বোঝা যাবে না। লোকজন অবিশ্বাসী হয়ে পড়তে পারেন এমন সাপের কথা শুনলে। কারণ সাপের মধ্যে যে বিষধর এলিট সাপ রয়েছে তাদের ব্র্যাকেটে নেই এই সাপের নাম। পাশাপাশি, এই সাপ বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন নামে পরিচিত। কালাচের ভাবমূর্তি আমজনতার কাছে অতটা ভীতিপ্রদ নয়।
আরও পড়ুন
জল থেকে ডাঙায়, তুমুল লড়াইয়ে দুই সাপ, চুল খাড়া করে দেবে ভিডিও
গন্ডারের ‘প্রেমে পাগল’ হাতি, ভাইরাল ভিডিওয় দেখুন খুনসুটি
তার কারণ, এদের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য এমনই যেটা অন্য বিষধর সাপেদের সঙ্গে মেলে না। প্রথম কথা, এই সাপ ফণাহীন। দ্বিতীয়ত, এই সাপ কামড়ালে ব্যথা হয় না। জায়গাটা ফোলেও না। ফলে যাকে কামড়াল, সে বুঝতেও পারে না। অথচ আস্তে আস্তে নার্ভবিষের লক্ষণগুলি দেখা যায়। শুরু হয় পেটে ব্যথা, গলায় ব্যথা কিংবা সারা শরীর জুড়ে অস্বস্তি। যেন জ্বর আসছে। চিকিৎসা সময়মতো শুরু না হলে অবধারিত মৃত্যু।
উপসর্গ মিলে গেলে চিকিৎসক রোগীর বাড়ির লোককে জানালেও তারা মানতে নারাজ হয়ে পড়েন। তারা উল্টে তর্ক জুড়ে দেন। তখনই পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ে। সমীক্ষা বলছে প্রতি বছর এই রাজ্যেই গড়ে একহাজার লোক মারা যান এই সাপের দংশনে।
‘কালাচ’ নামটাও অনেক জায়গায় অন্য নামে পরিচিত। ফলে তাঁরা চিকিৎসকের কথায় আগাগোড়া অবিশ্বাস করার সুযোগ পেয়ে যান। আসলে সারা বাংলা জুড়ে কালাচের নানা নাম। কালোর ওপরে চিত্র আঁকা, তাই এর নাম কালচিতি। থেকেই কালাচ। কিন্তু এই নাম ছাড়াও আরও নাম আছে। শিয়রচাঁদা, নিয়রচাঁদা, ডোমনাচিতি, শাঁখাচিতি।
কোনও কোনও জায়গায় আবার এরই নাম ঘামচাটা। মানুষের ঘামের গন্ধে এরা বিছানায় উঠে আসে, এমন এক প্রচলিত ধারণা থেকেই এমন নাম। যদিও এর কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তবে এরা যে মানুষের সাহচর্য ভালবাসে, সেটা সত্যি। আর তাই নির্জন রাতে উঠে আসে বিছানায়! তার পর কামড় দিয়ে পালায়। রোগী টেরও পায় না। বড়জোড় একটা অনুভূতি হয় মশা কামড়ানোর মতো। তার পর সকাল থেকেই শুরু পেট ব্যথা। আর সময় মত চিকিৎসা না হলেই মৃত্যু।
কালাচ সাপ দংশনের উপসর্গ:
১) কালাচ নিশাচর সাপ। রাতের দিকে কামড় দেয়। তাই ভোরবেলা সকালের দিকে গলা বা পেটের ব্যথা শুরু হয়।
২) অস্বস্তিকর অনুভূতি হয়। যেন জ্বর জ্বর ভাব।
৩) যত সময় গড়িয়ে যাবে ততই রোগীর চোখের পাতা পরে আসবে। চোখের পাতা খুলে রাখতে পারবে না অসুস্থ ব্যক্তি।
৪) কালচের কামড়ে ক্ষতস্থান ফুলে যায় না, বা ব্যথাও হয়না। এই উপসর্গ মিলে গেলেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দিকে রওনা দিতে হবে। যত দেরি হবে পরিস্থিতি ততই নাগালের বাইরে বেরিয়ে যাবে।