ইউপিএসসি সিভিল সার্ভিসের ফলাফল ঘোষণার পর থেকে অনেকের জীবনের মোড় বদল হয়েছে। টপারদের গল্প সারা দেশে UPSC প্রার্থীদের অনুপ্রাণিত করেছে। সেই সঙ্গে আগামী দিনে তাদের লক্ষ্য অর্জনের পথকে আরও মসৃণ করে তুলেছে। এরকম একটি গল্প এখন অনুপ্রাণিত করেছে আপামোর দেশবাসীকে। বিজ্ঞানী কার্তিক কানসাল যিনি তার লক্ষ্য অর্জনের জন্য জীবনের সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। আর এই গল্প আপনাকে অনুপ্রাণিত করবেই।
কার্তিকের যখন আট বছর বয়স তখনই ধরা পড়ে কঠিন ব্যাধি। মাসকুলার ডিস্ট্রোফিতে আক্রান্ত হন সেদিনের সেই ছোট্ট কার্তিক। চোখের সামনে স্বপ্নগুলো কেমন যেন ঝাপসা হতে শুরু করে তার। সেদিন থেকে কার্তিকের মা তার পাশে থেকে তাকে মনের জোর জুগিয়ে গেছেন। অল্প বয়সে সকলে যখন বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে খেলাধুলা করত সেই সময় কার্তিকের সময় কাটত থেরাপি ও যোগব্যায়ামে। কিন্তু শারীরিক দুর্বলতা তাকে তার ইচ্ছাশক্তির পথে কখনই বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি।
২০১৮ সালে আইআইটি স্নাতক হওয়ার পর থেকে ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস পরীক্ষা সহ বেশ কয়েকটি পরীক্ষায় ভাল র্যাঙ্কও আসে তার। কিন্তু শারীরিক অক্ষমতার কারণে প্লেসমেন্ট পেতে পারেননি কার্তিক। এক সর্বভারতীয় চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমি ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস পরীক্ষার প্রিলিতে ভাল ফল করেছিলাম কিন্তু যখন মেইন পরীক্ষার লিস্ট আসে, তখন আমি জানতে পারি যে আমার অবস্থার কারণে আমি কোনও পদের জন্য যোগ্য নই। এটা আমার জন্য একটি কঠিন সময় ছিল। মানসিকভাবে, আমি প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু আমি আমার শরীরের সঙ্গে কীভাবে লড়াই করব? চোখের সামনে সব স্বপ্ন কেমন যেন হারিয়ে যেতে লাগল”। ২০১৯ সালে ইউপিএসসিতে ৮১৩ র্যঙ্ক করেন কার্তিক। কিন্তু তাতে সেভাবে খুশি হতে পারেননি তিনি। কার্তিক চেয়েছিলেন একটি প্রশাসনিক পদ। তার জন্য পরের বার আবার জীবনের অন্যতম কঠিন পরীক্ষায় বসা। চ্যালেঞ্জ নিয়েই প্রিলিতে দারুণ র্যঙ্ক আসে। কিন্তু ফের ভরাডুবি হয় মেন পরীক্ষায়। কিন্তু এই ব্যর্থতা তাকে কঠোর পরিশ্রম করতে অনুপ্রাণিত করেছিল। শেষে তিনি ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশনে (ইসরো) চাকরির পাশাপাশি প্রস্তুতি চালান দেশের প্রশাসনিক পদে চাকরির জন্য।
আরও পড়ুন: চিকেন টিক্কা-নানে মুগ্ধ জনি ডেপ, ভারতীয় রেস্তরাঁয় বিল করলেন ৪৮ লক্ষ টাকা
কার্তিকের কথায়, "যেহেতু আমি কাজের দিনে নয় ঘণ্টা কাজ করতাম, তাই আমি সেই অনুযায়ী পড়াশোনা করতাম। সপ্তাহের কাজের দিনগুলিতে, আমি সকাল ৬ টায় ঘুম থেকে উঠতাম, সকাল ৮ টা পর্যন্ত পড়াশুনা করতাম এবং তারপরে প্রস্তুত হয়ে অফিসের জন্য রওনা দিতাম। অফিস থেকে ফিরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা, আমি রাত ১১টা পর্যন্ত পড়াশোনা করতাম”। UPSC সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা ২০২১, সকলকে চমকে দিয়েই কার্তিকের র্যাঙ্ক আসে ২৭১। বর্তমানে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটায় ISRO-তে কর্মরত কার্তিক। তিনি সমাজের প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে অসাধ্য সাধন করেছেন। প্রত্যেক পিছিয়ে পড়া মানুষের উদ্দেশ্যে কার্তিকের বার্তা “হাল ছেড়ো না বন্ধু”।