Advertisment

পানীয়ে মাদক মিশিয়ে খুন, ঘরেই সুড়ঙ্গ, কালিয়াচক খুনে প্রকাশ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য

ধৃত আসিফের দাদার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে পুলিশ।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
malda Kaliachak murder case

ঘটনার পুনর্নির্মাণে শনিবার দুপুরে অভিযুক্ত আসিফ মহম্মদকে পুরাতন মালদার ১৬ মাইলে গুরুটোলার বাড়িতে আনা হয়।

তদন্ত এগোতেই কালিয়াচকে খুনের ঘটনায় সামনে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। কেন ও কীভাবে খুন করা হয়েছিল বাবা-মা সহ পরিবারের চার সদ্যকে। ঘটনার পুনর্নির্মাণে শনিবার দুপুরে অভিযুক্ত আসিফ মহম্মদকে পুরাতন মালদার ১৬ মাইলে গুরুটোলার বাড়িতে আনা হয়। পুলিশ সূত্রে দাবি, জেরায় ধৃত জানিয়েছে ঠান্ডা পানীয়র সঙ্গে মাদক মিশিয়ে প্রথমে অচৈতন্য করা হয়েছিল ওই চারজনকে। এরপর, কফিনবন্দি করে জলে ডুবিয়ে ওই চার জনকে খুন করা হয়। পরে দেহগুলোকে গুদাম ঘরের মাটির নিচে পুঁতে দেওয়া হয়।

Advertisment

এখানেই শেষ নয়, দেহগুলি গুদাম ঘরে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যাতে গ্রামবাসীরা জানতে না পারেন, তার জন্য ১২ ফুটের একটি সুড়ঙ্গ কাটা হয়েছিল। ওই সুরঙ্গ পথেই ঘর থেকে গুদামে দেহগুলো সরানো হয়। পরে ওই গর্ত ঢালাই করে দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ প্রমাণ লোপাটের যাবতীয় মরিয়া চেষ্টা করেছিল আসিফ মহম্মদ।

আরও পড়ুন- বাবা-মা সহ বাড়ির ৪ জনকে মাটিতে পুঁতে নৃশংস খুন, গ্রেফতার ছোট ছেলে

ইতিমধ্যেই, অভিযুক্ত বছর ১৯-এর আসিফকে গ্রেফতার করেছে কালিয়াচক থানার পুলিশ। জেরায় নিজের অপরাধের কথা সে স্বীকার করে নিয়েছে বলেও দাবি পুলিশের। এদিন দুপুরে ম্যাজিস্ট্র্রের উপস্থিতিতে মাটি খুঁড়ে দেহগুলো উদ্ধার করা হয়। ছিলেন পুলিশ সুপার অলোক রাজারিয়াও। দেহগুলোর ময়না তদন্ত হবে। ধৃতের দাদার অভিযোগের ভিত্তিতে আসিফকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দাদাকেও আটক করেছে পুলিশ। খুনের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

প্রথামিত তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, আসিফের বাবার অর্থনৈতিক অবস্থা ভালোই ছিল। জমি কেনাবেচা, ইমারতি দ্রব্যের ব্যবসা করতো সে। বিত্তশালী হওয়ায় ছোট থেকেই ছেলেদের চাহিদাও মিটিয়েছে সে। স্থানীয় মিশন স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে পড়ত আসিফ। বাড়িতেই থাকতো সে। কিন্তু গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নারকীয় এই ঘটনা ঘটানোর পর থেকে সে আর বাড়ির বাইরে বেরতো না। কেন আসিফের বাবা-মা সহ পরিবারের বাকি সদস্যের দেখা যায় না সে প্রশ্ন দানা বাঁধে প্রতিবেশীদের মনে। এইক প্রশ্ন করায় তাঁকেও ভাই খুনের হুমকি দিয়েছিলো বলে দাবি ধৃতের দাদার। ভয়ে সে কলকাতায় পালিয়ে এলে প্রাণে বেঁচে যায়। প্রতিবেশীদের অসিফ জানিয়েছিল, ভিন রাজ্যে ব্য়বসা করছেন বাবা। পরিবার সেখানেই রয়েছে। তিন বছর পর সকলে ফিরবেন। একই সঙ্গে বাড়িটিকে দুর্গে পরিণত করেছিল সে। কাউকে ত্রিসীমানায় ঘেঁষতে দেওয়া হত না, লাগানো হয়েছিল সিসিটিভি। দাদা সব জেনেও তখন পালিয়ে না গিয়ে কেন পুলিশকে সব জানালো না তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।

publive-image
অভিযুক্ত আসিফ মহম্মদ, পুলিশি ঘেরাটোপে সেই বাড়ি, অতঙ্কিত গ্রামবাসীরা

তবে সম্প্রতি বাবার সম্পত্তি বেচার পরিকল্পনা করেছিল আসিফ মহম্মদ। যা তার দাদা জানতে পেরে যায়। খবর দেয় পরিবারের এক কাকাকে। তাঁর সঙ্গে কথা হয় আসিফের। কিন্তু, কাকা জানায় সম্পত্তির মালিক বাবার সাক্ষর ছাড়া কোনও কিছুই বিক্রি করা যাবে না। আসিফের বাবা-মা কোথায় এই প্রশ্নেই কাকাতে এড়িয়ে যেতে থাকে আসিফ। দাদাও কাকাকে বাবা-মা সহ পরিবারের বাকিদের খুনের আশঙ্কার কথা বলে। এরপরই থানায় গিয়ে ভাইয়ের কুকীর্তির কথা জানায় অসিফের দাদা।

সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই শুরু হয় তদন্ত। শুক্রবার রাতেই আসিফের বাড়িতে হানা দেয় উর্দিধারীরা। গ্রেফতার করা হয় 'গুনধর' অসিফকে। জেরায় পুলিশ জানতে পারে, ফেব্রুয়ারির ২৮ তারিখ বাবা-মা সহ পরিবারের চার সদস্যকে খুন করে মাটিতে পুঁতে দিয়েছে সে। কীভাবে খুন করেছিল অভিযুক্ত? তার বিবরণ রীতিমতো হাড় হিম করা। জেরায় অসিফ জানিয়েছে যে, প্রথমে ঠান্ডা পানীয়র সঙ্গে মাদক মিশিয়ে বাবা-মা-বোন ও দিদাকে অচৈতন্য করে সে। এরপর কফিনের মধ্যে একে একে চারজনের হাত পা মুখ বেঁধে জীবন্ত অবস্থায় ঢোকায় সে। এরপর মাটির খুড়ে সেই কফিন রাখা হয়। তারপর ওই গর্তে জল ঢেলে দেওয়া হয়।

বাড়িতে তল্লাশি চালানোর পর গুদামঘরের বেসমেন্ট থেকে চারজনের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আসিফের ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছে ল্যাপটপ, একাধিক ফোন, সাউন্ড সিস্টেম, টিভি, সিসি ক্যামেরা সমেত বহু অত্যাধুনিক গ্যাজেট। জানা গিয়েছে, ল্যাব তৈরি করেছিল অভিযুক্ত। কি কাজে এইসব অত্যাধুনিক গ্যাজেট ব্যবহার করা হত তার অনুসন্ধান চালাচ্ছে পুলিশ।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Malda West Bengal Murder
Advertisment