TMC Rally posters on July 21: ২১ জুলাই শহীদ দিবস। ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারের ২১ শে জুলাইকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে চলেছে শাসক শিবির। সেই উপলক্ষ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে শুরু হয়ে গিয়েছে বিশাল সমাবেশের প্রস্তুতি। শনিবার ভবানীপুরের দলীয় কার্যালয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করে তৃণমূল কংগ্রেস। সেই বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে দলীয় সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এবার ২১ জুলাইয়ের পোস্টারে থাকবে শুধুমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি থাকবে না।
কেন এই সিদ্ধান্ত? সেই ব্যাখ্যায় সুদীপবাবু বলেন, “ক্যামাক স্ট্রিটের দফতর থেকে যে পোস্টার দেওয়া হয়েছে, তাতে কেবল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই ছবি রয়েছে। এবং এটা অভিষেক নিজেই চেয়েছেন।” উল্লেখ্য, অভিষেক ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতা আসার কয়েক বছর পর দলের যুব সংগঠনের সভাপতি হন। তার আগে মমতা যুবা গঠন করে, সেই সংগঠনের সভাপতি করেছিলেন অভিষেককে। পরবর্তীতে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক হন অভিষেক। কিন্তু তাঁর ছবি পোস্টার থেকে বাদ যাওয়ার বিষয়টিকে ঘিরে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে নানান জল্পনা।
উল্লেখ্য, গত বছর নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এক সমাবেশে অভিষেকের ছবি না-থাকায় দলের অন্দরেই বিক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। কুণাল ঘোষের মতো নেতারা সেই নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলেছিলেন। এবার যাতে তেমন কোনও বিতর্ক না হয় তা নিয়ে আগে ভাগেই সতর্ক অবস্থান নিল দল। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সুদীপবাবু বলেন, “ক্যামাক স্ট্রিটের দফতর থেকে যেসব পোস্টার পাঠানো হয়েছে, তাতে শুধুমাত্র মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিই রয়েছে।” পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, “অভিষেক নিজেই বলেছেন, যেহেতু তিনি ২১ জুলাইয়ের ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন না, তাই তাঁর ছবি পোস্টারে না থাকাই যুক্তিযুক্ত।”
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, মমতা বারবার দলীয় সভায় সাফ বার্তা দিয়েছেন, সরকার যেমন তাঁর হাতেই, সংগঠনেও শেষ কথাও তিনি-ই বলবেন। এমনকি আরও ১০ বছর দল চালানোর ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন তিনি। ফলে এবারের ২১ জুলাই অভিষেকের ছবি না-থাকা এই বার্তাকেই আরও জোরালো করল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই, বাম সরকারের আমলে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন ১৩ জন তৃণমূল কর্মী। সেই শহিদদের স্মৃতিতে প্রতিবছর এই দিনটি পালন করে তৃণমূল। এই সভা থেকেই সাংগঠনিক বার্তা দেন মমতা। যেহেতু সেই সময় অভিষেক রাজনীতিতে ছিলেন না, তাই এবার তিনি নিজেই সরে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছেন এমনটাই দাবি সুদীপের-ফিরহাদদের।
ত0বে এই ছবি বিতর্ক নতুন কোন ইস্যু নয়। ২০২৩ সালে নেতাজি ইন্ডোরের এক সভাতেও শুধু মমতার ছবি ছিল, অভিষেকের ছবি না-থাকায় কুণাল ঘোষ প্রশ্ন তুলেছিলেন। আবার ২০২৫-এর শুরুতে অভিষেকের দফতর থেকে প্রকাশিত ক্যালেন্ডারে তাঁর 'বিরাট' ছবি ঘিরেও শুরু হয়েছিল বিতর্ক। পরে সেটি বদলে দেয় রাজ্য নেতৃত্ব। এরপর ফের ফেব্রুয়ারিতে নেতাজি ইন্ডোরের দলীয় সভায় দেখা যায় শুধুই মমতার ছবি। সব মিলিয়ে ২১ জুলাইয়ের সমাবেশকে ঘিরে যে রাজনৈতিক রূপরেখা তৈরি হচ্ছে, তাতে সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একক নেতৃত্বকেই বারবার সামনে তুলে ধরা হচ্ছে। আর অভিষেকের ছবি না-থাকা সেই বার্তাকেই আরও সুদৃঢ় করল বলেই মত রাজনৈতিক মহলের ।
২১ জুলাইয়ের রেকর্ড ভাঙা ভিড়ের বার্তা
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় আরও জানান, এবারের ২১ জুলাই সমাবেশ হতে চলেছে ঐতিহাসিক। তিনি বলেন, “রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর নেতৃত্বে জেলা সভাপতিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে সব জেলা থেকে বিপুল কর্মী-সমর্থক র্যালিতে অংশ নেয়।”
র্যালির প্রস্তুতির মাঝেই বীরভূমে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে হস্তক্ষেপ
শনিবারের বৈঠকে বীরভূমের দুই প্রভাবশালী নেতা—অনুব্রত মণ্ডল ও কজল শেখ—দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। দীর্ঘদিন ধরে বীরভূমে বারে বারে সামনে এসেছে গোষ্ঠীকোন্দলের ছবি। সম্প্রতি বোলপুর থানার আইসিকে কদর্য ভাষায় আক্রমণ করে দলেরই একাংশের রোষানলে পড়েন অনুব্রত। দলীয় নির্দেশ মেনে সেই ঘটনার পর তড়িঘড়ি ক্ষমাও চেয়ে নেন কেষ্ট। এবার শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁদের স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে—দলের ঐক্য রক্ষা করে একসঙ্গে কাজ করতে হবে এবং নিজেদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বকে দূরে সরিয়ে দলীয় স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখেই এই পদক্ষেপ বলে দলীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে।