দোলেই দিল্লিতে কেষ্ট। তবে এদিন আসানসোল সংশোধনাগার থেকে বেরনোর পথে শক্তিগড়ের একটি ধাবায় থামে কেষ্টর গাড়ি। সেখানেই জলযোগ সারেন তৃণমূল নেতা। শক্তিগড়ের ধাবায় পুলিশের উপস্থিতিতেই অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে একই টেবিলে বসে জনাতিনেক ব্যক্তি খাওয়া-দাওয়া সেরেছেন। তাঁরা কারা? কি তাঁদের পরিচয় ? ওই তিনজনের মধ্যে একজনের কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে কি উপদেশ দিয়ে গেলেন অনুব্রত? এই প্রশ্নই এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতেও তৈরি হয়েছে জোর চর্চা।
মঙ্গলবার সকাল সাতটারও আগে বিশাল পুলিশ বাহিনীর কনভয় অনুব্রত মণ্ডলকে নিয়ে আসানসোল জেল থেকে বের হয়। ৮ টা ৪৫ মিনিট নাগাদ পুলিশ অনুব্রতকে নিয়ে ’ল্যাংচা কুঠি’ নামে শক্তিগড়ের নির্দিষ্ট একটি খাবারের দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের পাশাপাশি সেখানে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের নিরাপত্তাও ছিল।
তবে ঠিক যেন আগে থেকে কথা হয়ে থাকা মতোই ওই খাবারের দোকানের সামনে আগেই উপস্থিত ছিলেন ওই তিন ব্যক্তি। অনুব্রত গাড়ি থেকে নামার পর পুলিশ যখন তাঁকে ওই খাবারের দোকানের একটি ঘরে নিয়ে যাচ্ছিল তখন সেই ঘরে একই সঙ্গে ঢোকেন ওই তিন ব্যক্তি।
এক টেবিলে বসে ওই তিন ব্যক্তি অনুব্রতর সঙ্গেই প্রাতরাশ সারেন। দোকানের কর্মী শেখ আমরুল হক বলেন, ’অনুব্রত বাবু এদিন চারটি ডাল-কচুরী, তরকারি, ছোলার ডাল, স্পেশাল ল্যাংচা ও রাজভোগ দিয়ে প্রাতরাশ সেরেছেন। এদিন তিনি চা খাবেন না বলেন। সবার খাবার খরচ ধরে বিল হয় ৯৯৫ টাকা। ওনার পিএ টাকা মিটিয়েছেন।’
আরও পড়ুন- সন্ধের বিমানেই দিল্লি-যাত্রা কেষ্টর, বিমানবন্দরে আপাতত বিশ্রামে অনুব্রত
কিন্তু গোটা ঘটনায় রহস্য দানা বেঁধেছে শক্তিগড়ের খাবারের দোকানে পুলিশের উপস্থিতিতে অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে তিন সাধারণ ব্যক্তির প্রাতরাশ সারা নিয়ে। খাবারের টেবিলে বসেই ওই তিন জনের সঙ্গে প্রায় আধ ঘন্টা ধরে অনুব্রত মণ্ডল শলাপরামর্শ করে চলেন। যে তিনজন অনুব্রতর সঙ্গে এক টেবিলে বসে খাওয়া-দাওয়া সারেন তাঁদের মধ্যে সবুজ পাঞ্জাবি পরা যে ব্যক্তি ছিলেন তাঁর নাম কৃপাময় ঘোষ বলে জানা গিয়েছে। এও জানা গিয়েছে ,কৃপাময় অনুব্রতর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বীরভূমের টিএমসিপি নেতা। অপর গেঞ্জি পরা যুবক অনুব্রত কন্য সুকন্যার গাড়ির চালক তুফান মিদ্দা বলে জানা গেলেও কালচে শার্ট পরা অপর এক যুবকের সঠিক পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
তবে বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, করেছে কালচে শার্ট পরা অনুব্রত ঘনিষ্ঠ ওই যুবকের নাম ছটু সিং। গরু পাচার মামলায় কৃপাময় ও তুফান সিবিআইয়ের ডাক পেয়েছিল বলেও বিজেপি নেতৃত্বের দাবি। বিচারাধীন বন্দি অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে এক টেবিলে বসে খাওয়া ও শলা-পরামর্শ করার ছাড়পত্র পুলিশ কীভাবে দিল তা নিয়ে সোচ্চার বিরোধীরা।
আরও পড়ুন- শক্তিগড়ে থামল পুলিশের কনভয়, কচুরি-ছোলার ডাল খেয়ে বিল মেটালেন অনুব্রত
পূর্ব বর্ধমান জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি সৌমরাজ বন্দোপাধ্যায় বলেন ,“এদিনের ঘটনা আরও একবার প্রমাণ করে দিয়েছে এখনও অনুব্রতর অঙ্গুলী হেলনেই চলছে রাজ্য পুলিশ। সবটাই আইন বিরুদ্ধভাবে হয়েছে। সিবিআই-এর এই বিষয়টিও তদন্ত করে দেখা উচিত।'' যদিও জেলা তৃণমূলের কোনও নেতা এই বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি।