Firecrackers banned: বাতিল ছিল ১০১ টি বাজি। সোমবার সকালে টালা পার্কে কলকাতা পুলিশ, দমকল, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সামনে চলে বাজি পরীক্ষা। আর সেখানেই বাতিল হয়ে যায় আরও চার ধরনের বাজি। এবছর ছাড়পত্র পেয়েছে সাতটি। পরীক্ষামূলকভাবে শব্দ মাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছে ৯০ ডেসিবেলে। চার ধরনের বাজি সেই মাত্রা অতিক্রম করায় কলকাতা পুলিশ ও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আধিকারীকদের তত্ত্বাবধানেন সেগুলি নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়।
List of Banned Firecrackers in Kolkata, West Bengal
বাজি বাজারের সংগঠনের তরফ থেকে কলকাতা পুলিশ ও দমকল, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের হাতে মোট ১১ ধরনের বাজি তুলে দেওয়া হয়। শব্দের নিরিখে পাঁচ মিটার দূরত্ব থেকে মাপা হয় বাজি ফাটানোর পরে আওয়াজের তীব্রতা। যার মধ্যে সাতটি বাজি ছাড়পত্র পায়, বাকি চারটির বিক্রি নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। PESO'র প্রতিনিধিদের সঙ্গে পরীক্ষা করার পর পরিবেশবিদ্যা ইঞ্জিনিয়ার বিপ্লব বৈদ্য জানান, নিষিদ্ধ করা হয়েছে ওসিকে বাস্টার্স, ১৫ শট স্টার উৎসব, অনিরুদ্ধ সেল, মেগা সিরিজ সেল, এই চারটি আতসবাজি।
নিষিদ্ধ তালিকায় যে যে ধরণের বাজি থাকবে, সেগুলিকে বিক্রি করা হবে না বলে জানিয়েছেন উত্তর ডিভিশন বাজি বাজারের সহ সম্পাদক শুভঙ্কর মান্না। সেল ফাটানোর ওপরেও আপত্তি রয়েছে প্রশাসনের তরফে। বিগত বছরগুলিতে শব্দবাজির পরীক্ষা করা হত তারাতলায়। কোন কোন বাজি ভালো, এবং কোনগুলি ফাটোনো উচিত নয় যার ফলে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে, জনস্বার্থে এই বার্তা দেওয়ার জন্যই মূলত পরীক্ষা করা হয় বলেই জানিয়েছেন শুভঙ্করবাবু। কলকাতা পুলিশের রিজার্ভ ফোর্সের আধিকারিক সৌম্য রায় বলেন, "পাঁচটি বাজি ডিলারদের সংগঠনের কাছ থেকে কোনো রকম বাছাই ছাড়াই ১১টি বাজির ধরণ বাছা হয়। যেগুলো বাতিল হয়ে যাবে, সে সব বাজি কেউ বিক্রি করলে বা ফাটালে তাদের গ্রেফতার করা হবে ও আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
সমস্ত বাজি বাজারকে নিয়ে এবছর নতুন এক সংগঠন তৈরি করা হয়, পশ্চিমব্ঙ্গ বাজি শিল্প উন্নয়ন সমিতি। এই সংগঠনের উদ্দেশ্য, ৯০ ডেসিবেলের বেশি শব্দের যে বাজি রয়েছে তা যেন কোনোভাবেই বাজারে বিক্রি না হয় তার দিকে নজর দেওয়া। সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে কিভাবে পরের বছর পরিবেশবান্ধব বাজি বানানো সম্ভব তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা এই সংগঠনের কাজ।
চিন থেকে চোরা পথে বাজি ঢুকছে পশ্চিমবঙ্গে, এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে সংগঠনের প্রধান সঞ্জয় দত্ত বলেন, "এই ধারণা একেবারেই অমূলক, চিন থেকে কোনো বাজি পশ্চিমবঙ্গে ঢোকে না। ব্যবসার খাতিরে সাময়িক কোনো লেবেল ছেপে চিনা বাজি বলে বিক্রি করা হয়। কোনো এক সময় চিন থেকে কলকাতা বন্দরে জাহাজভর্তি বাজি আসে, সেবছরই কলকাতা পুলিশের রিজার্ভ ফোর্সের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকের নির্দেশে তা ফিরিয়ে দেওয়া হয়।"
আরও পড়ুন: বাজি পোড়ানোয় আংশিক নিষেধাজ্ঞা, ২ ঘণ্টার অনুমতি সুপ্রিম কোর্টের
একইসঙ্গে কলকাতার বাজি বাজার নিয়ে জমছিল ধোঁয়াশা। ২৬ তারিখ অবধি ঠিক ছিল, ময়দানেই করা হবে বাজি বাজার। সেনা বাহিনীর আপত্তিতে বেশ কয়েকদিন আগেই নাকচ হয়েছে সেই প্ল্যান। তার পরবর্তী কালেই চারটি বিকল্প ভাবা হয়: ১) বাগবাজার সার্বজনীন মাঠ ২) দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন পার্ক ৩) কাঁকুড়গাছি সুভাষ পার্ক এবং ৪) দেশপ্রিয় পার্ক। বাগবাজারের মাঠে বাজির বাজার করা সম্ভব নয়, কারণ লরি ঢুকতে পারবে না ওই এলাকায়। একই ভাবে ঘিঞ্জি এলাকার জন্য বাতিল হয় দেশবন্ধু পার্ক ও সুভাষ পার্ক।
গত পরশু অবধি বাজি বাজারের আধিকারিকরা জানতেন, দেশপ্রিয় পার্কেই ময়দানের বাজি বাজার স্থানান্তরিত করা হবে। কিন্তু নবান্ন থেকে জানানো হয় দেশপ্রিয় পার্কে ২,৩, ৪ নভেম্বর রাজ্য সরকারের অনুষ্ঠান হবে। যেখানে উপস্থিত থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, দেশপ্রিয় পার্কে বাজি বাজার সম্ভব নয় এবছর। অবশেষে কলকাতা পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করে তালিকায় আনা হয় ম্যাডক্স স্কোয়ার ও বিবেকানন্দ পার্ক।
অবশেষে সারা বাংলা বাজি বাজারের চেয়ারম্যান বাবলা রায় জানিয়েছেন, বহু টালবাহানার পরে সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিবেকানন্দ পার্কে বাজি মেলা ২০১৮ অনুষ্ঠিত হবে। ময়দানে মেলা না হওয়ার ফলে বাজি ব্যবসায়ীদের প্রায় ৪০% ক্ষতি হবে বলে দাবি। আগামী ৩ নভেম্বর থেকে পুরোদমে বাজিমেলা শুরু হয়ে যাবে। আজ মঙ্গলবার ২২ তম কলকাতার বাজিমেলা অনুষ্ঠিত হবে বিবেকানন্দ পার্কে।
আরও পড়ুন: কোন কোন পর্ন সাইট নিষিদ্ধ করা হল, দেখে নিন পূর্ণাঙ্গ তালিকা
এর আগে বাজি পোড়ানোর ওপর আংশিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে দীপাবলি বা কালিপুজার দিন দু'ঘন্টা বাজি পোড়ানোর অনুমতি দেয় সুপ্রিম কোর্ট। সব ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই নিয়ম বলবৎ থাকবে। বড়দিন এবং বর্ষবরণের রাতে ১১.৪৫ থেকে ১২.৪৫ পর্যন্ত বাজি পোড়ানো যাবে বলেও জানিয়েছে আদালত। এছাড়া লাইসেন্স প্রাপ্ত বিক্রেতারাই কেবলমাত্র বাজি বিক্রি করতে পারবেন বলে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি, অনলাইনে বাজি বিক্রিতেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। এতে ব্যবসায় ভাঁটা পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন খুচরো বাজি ব্যবসায়ীরা। হাতে সময় কম থাকার ফলে ক্রেতারা কম বাজি কিনবেন বলে মনে করা হচ্ছে। যার ফলে প্রত্যেকবারের তুলনায় দাম বৃদ্ধি পাবে বাজির। আবার কিছু ব্যবসায়ীর মতে, দু'ঘন্টা টানা বাজি পোড়াবেন সকলে, কাজেই পর্যাপ্ত বিক্রিই হওয়ার কথা।