দিল্লিতে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দেখা গিয়েছিল অর্জুন সিংকে। তবে ঘটনার পরম্পরায় স্পষ্ট বিজেপি থেকে তৃণমূলে এসে শান্তিতে নেই অর্জুন। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে তৃণমূলেই ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন 'রবীনহুড' নেতা। তাঁর একসময়ের ডান হাত দাপুটে ঘরের ছেলেই এখন দলের বিরোধী শিবিরে। দলের বিরুদ্ধ গোষ্ঠী প্রতিটি ইস্যুতেই প্রবল বিরোধিতা করে চলেছে অর্জুনের বিরুদ্ধে। ভিকি যাদব খুনের ইস্যুতে একেবারে কোমর বেঁধে নেমেছে জগদ্দলের বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম গোষ্ঠীর লোকজন।
মহাভারতে অর্জুনপুত্র অভিমন্যুকে চক্রব্যূহে ঘিরে ফেলেছিল কৌরবরা। সেই কাহিনী আজও মানুষের মনে গেঁথে রয়েছে। ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ তৃণমূলে ফিরে আসা অর্জুন সিংকে সেই অভিমন্যু করতে চাইছে দলের একাংশ? এই আলোচনাই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে ততই এভাবেই অভিমন্যু করার প্রয়াস জারি রয়েছে। ক্রমশ কোণঠাসা করা হচ্ছে অর্জুনকে।
জগদ্দলের তৃণমূল নেতা ভিকি যাদব খুনে গ্রেফতার করা হয়েছে অর্জুন সিংয়ের ভাইপো সঞ্জিৎ সিং ওরফে পাপ্পুকে। তা নিয়ে সরাসরি বাকযুদ্ধে নেমে পড়েছেন অর্জুন সিং বনাম সোমনাথ শ্যাম। অর্জুন বলছে, এক ভাইপো যখন বিধায়কের সঙ্গে তখন সে ভালো। আরেকজন যখন আমার সঙ্গে সে অপরাধী। বিধায়কের গ্রেফতার দাবি করেছে সাংসদ। শ্যামও ছেড়ে কথা বলছে না তা বলাই বাহুল্য। অপরাধীকে পুলিশ তো গ্রেফতার করবেই, মন্তব্য সোমনাথ শ্যামের।
তৃণমূল ছেড়ে ২০১৯-এ ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী হন অর্জুন সিং। তাঁর ছেড়ে আসা ভাটপাড়া বিধানসভা আসনে উপনির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী হন ছেলে পবন সিং। তারপর ২০২১-এ ফের বিজেপির বিধায়ক হন পবন। অর্জুন সিং তৃণমূল কংগ্রেসে ফিরে এলেও পবন বিজেপিতেই থেকে গিয়েছেন। বাবার হাত ধরে রাজনীতিতে এলেও তেমন ডাকাবুকো নন পবন সিং। তৃণমূলে ফিরে বাবা অর্জুনের হাত শক্ত করার মতো প্রতিপত্তিও নেই পবনের।
দ্বিতীয়ত অর্জুন সিংয়ের ডান হাত ছিল আরেক ভাইপো সৌরভ সিং। শোনা যায়, রাজনীতির ময়দানে ছেলের থেকেও বেশি ভরসা ছিল সৌরভের প্রতি। এই সৌরভ এখন সোমনাথ শ্যামের সঙ্গী। অর্জুনের রাজনৈতিক কলাকৌশল হাতের মুঠোয় নিয়ে ফেলেছেন দলের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতৃত্ব। তারওপর যে ভাইপোর ওপর ইদানিং ভরসা করছিল, সেই পাপ্পু এখন ভিকি খুনের অভিযোগে গ্রেফতার। রাজনৈতিক মহলের মতে, অর্জুনকে নানা ভাবে কাবু করার চেষ্টা চলছে।
আরও পড়ুন- অধ্যক্ষ পদে মানিকের নিয়োগ: হাইকোর্টে হলফনামায় বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি রাজ্যের
দিন দুয়েক আগে ১৮ জন কাউন্সিলর ও প্রায় ৮৫ জন পঞ্চায়তে সদস্য ভিকি যাদবের খুনিদের গ্রেফতারের দাবিতে মিছিল করে গিয়ে পুলিশ কমিশনারেটকে স্মারকলিপি দেয়। এর পিছনেও সোমনাথ শ্যাম ছিলেন বলেই সূত্রের খবর। বিভিন্ন কায়দায় ক্রমশ কোণঠাসা করা হচ্ছে অর্জুন সিংকে। পাশাপাশি নৈহাটির বিধায়ক ও মন্ত্রী পার্থ ভৌমিককেও যে অর্জুন পাশে পাচ্ছেন তেমন কোন খবর দলের অন্দরে নেই। ব্যারাকপুর-দমদমের দলীয় সভাপতি তথা বরানগরের বিধায়ক তাপস রায়ের সঙ্গে অর্জুন সিংয়ের একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।
২০১৯-এ অর্জুন বিজেপিতে চলে যাওয়ার পর দলের নানা সমীকরণ পরিবর্তন হয়েছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূলে ফিরে এলেও ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে পুরনো দাপট ফিরে তো পাননি বরং ক্রমশ ফিকে হচ্ছে অর্জুন সিংয়ের।