অন্যের বাড়িতে অনধিকার প্রবেশের চরম মাশুল দিতে হল একটি ছোট্ট কুকুরছানাকে। হাঁসুয়ার কোপে তার ছোট্ট শরীর ফালা-ফালা করে দিয়েছিল ওই বাড়িমালিক। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই কুকুরছানাকে নিয়ে প্রাণী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছোন পোষ্যের মালিক। ক্ষতস্থান জোড়া লাগাতে ২৭টি সেলাই করতে হয়েছে চিকিৎসকদের।
নিরীহ প্রাণীর উপর অকথ্য অত্যাচারের কাহিনী এটা নতুন নয়। রাজ্য তথা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এখনও নিরীহ পশুর উপর অত্যাচার চালিয়ে যায় তথাকথিত সভ্য সমাজেরই একাংশ। কিছু ক্ষেত্রে সেই ঘটনা প্রকাশ্যে আসে, কোনওটা আবার ঢাকা-চাপা পড়েই থেকে যায়। এবার নিরীহ কুকুরছানার উপর নৃশংস আক্রমণের ঘটনা ঘটল এরাজ্যেই। হাঁসুয়ার কোপে ছোট্ট কুকুরছানার শরীর ফালা-ফালা করে দিল এক ব্যক্তি।
অবলা জীবের প্রতি এমন নিষ্ঠুরতায় স্তম্ভিত পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের বাসিন্দারা। ঘটনার বিচার চেয়ে পোষ্যের মালিক আনারুল্লা শেখ জখম কুকুরটিকে কোলে করে নিয়ে সটান ভাতার থানায় হাজির হয়েছিলেন। পুলিশকে ঘটনা সবিস্তারে জানিয়ে তিনি তাঁর প্রতিবেশী হ্যাঙাই মল্লিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে মামলাও রুজু করে পুলিশ।
আরও পড়ুন- তোলপাড় ফেলা তথ্য ED-র হাতে? এক তলবেই সোজা দফতরে ‘কালীঘাটের কাকু’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আনারুল্লা শেখের বাড়ি ভাতার থানার মাধপুর গ্রামে। পেশায় তিনি শ্রমিক। আনারুল্লা জানান, মাস পাঁচেক আগে অসহায় ক্ষুধার্ত কুকুরছানাটিকে তিনি রাস্তায় ঘোরাঘুরি করতে দেখেন। পরে কিকুরছানাটিকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে লালন-পালন করা শুরু করেন তিনি। দিনভর কুকুরটি তাঁর বাড়িতেই বাঁধা থাকে। বিকেলের দিকে একটা সময় কুকুরটিকে তাঁরা ছেড়ে দিতেন। রবিবার বিকেলেও যথারীতি কুকুরটিকে ছেড়ে দেন আনারুল্লা।
নিজের মনে ঘোরাঘুরি করতে-করতে তাঁর পোষ্য কুকুরটি প্রতিবেশী হ্যাঙাই মল্লিকের বাড়ির উঠোনে চলে যায়। তার পরেই কুকুরটি ভীষণ চিৎকার করতে শুরু করে। আনারুল্লা জানিয়েছেন, কুকুরটির আর্তনাদ শুনে তিনি ঘর থেকে দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে এসেছিলেন। পরে দেখেন কুকুরটির সারা শরীর থেকে রক্ত ঝরছে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে কুকুরটির দেহের একাংশ ফালা-ফালা হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন- গরু চুরির অভিযোগ ঘিরে রণক্ষেত্র ধানতলা, কিশোরের মৃত্যু, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর
পুলিশকে আনারুল্লা জানিয়েছেন, তাঁর পোষ্য কুকুরটি যখন প্রতিবেশী হ্যাঙাই মল্লিকের বাড়িতে ঢুকে পড়ে হ্যাঙাই তখন বাড়ির উঠানে বসে বাঁশের ঝুড়ি বুনছিল। ওই সময় হ্যাঙাইয়ের হাতে ছিল একটি ধারালো হাঁসুয়া। হ্যাঙাই সজোরে সেই ধারালো হাঁসুয়ার কোপ কুকুরটির শরীরে বসিয়ে দেয়। তাতেই শরীরের একাংশ ফালা-ফালা হয়ে গিয়েছে মাস পাঁচেকের ওই কুকুরছানার। রক্তাক্ত অবস্থায় দৌড়োতে দৌড়োতে এসে আনারুল্লার বাড়ির দরজায় এসে লুটিয়ে পড়ে কুকুরছানাটি।
আরও পড়ুন- পয়লা জুন থেকে মেট্রোর স্মার্ট কার্ডে বড় বদল, জানুন খুঁটিনাটি
আনারুল্লা জানান, কুকুরটিকে প্রাণে বাঁচাতে তিনি ভাতারের রাজ্য প্রাণী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গিয়েছিলেন। পশু চিকিৎসক কুকুরটির দেহের ক্ষতস্থান জোড়া লাগাতে ২৭টি সেলাই করেছেন। কুকুরটির এখনও চিকিৎসা চলছে। এদিকে, পোষ্যের উপর এমন নিষ্ঠুর আক্রমণে অভিযুক্ত প্রতিবেশীর কঠোর সাজার দাবি করেছেন আনারুল্লার পরিবার। এই ঘটনা নিয়ে বর্ধমানের পশু প্রেমী সংগঠনগুলিও নড়েচড়ে বসেছে। তাঁরাও এই ঘটনা নিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।