Advertisment

ডেঙ্গি রোধে 'সোজা পথে' হাঁটছেই না সরকার, 'ত্রুটি' ধরে ধরে কী ব্যাখ্যা চিকিৎসকদের?

রাজ্যে ফি বছর ডেঙ্গি-আতঙ্ক কেন? ঘাটতি কোথায়? কারণ খুঁজে সমস্যা নিরসণের পথও বাতলালেন ক্ষুব্ধ চিকিৎসকরা।

author-image
Joyprakash Das
New Update
a section of doctors are angry about the government's role in dealing with dengue

রাজ্যে বেড়েই চলেছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। হাসপাতালগুলিতে বাড়ছে রোগীদের ভিড়।

প্রাক পুজো মরসুমে ডেঙ্গি আতঙ্ক গ্রাস করেছে বাংলার মানুষকে। অবশেষে তৎপর হয়েছে রাজ্য সরকার। প্রতি বছর এই আতঙ্কের পরিবেশ ঘুরে-ফিরে আসে। বেশ কিছু এলাকাকে ডেঙ্গিপ্রবণ এলাকা হিসাবে চিহ্নিত করে বিশেষ জোরও দিয়েছে সরকার। এদিকে বেসরকারি মতে, রাজ্যে ডেঙ্গিতে প্রায় ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে, আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩৮ হাজার। সরকারি ভাবে ডেঙ্গিতে মৃত্যু বা আক্রান্তের সংখ্যা না মেলায় প্রশ্ন তুলেছেন খোদ চিকিৎসকরা। এদিকে ডেঙ্গি মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে তীব্র ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন চিকিৎসক সংগঠনগুলি। ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্তের একাধিক কারণ খুঁজে বের করেছেন চিকিৎসকরা। প্রতিরোধের উপায়ও বাতলেছেন তাঁরা।

Advertisment

ক্ষুব্ধ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের রাজ্য সরকার কোনও কাজেই লাগাচ্ছে না। প্রথমত পরিকাঠামোগত সমস্যা, তাছাড়া একদিকে আমলা অন্যদিকে অন্য বিষয়ের চিকিৎসকদের দায়িত্ব দেওয়ায় ডেঙ্গি ছড়িয়ে পড়ছে বলে মনে করছে তাঁরা। অ্যাসোসিয়েশন অফ হেল্থ সার্ভিস ডক্টর্সের সাধারণ সম্পাদক ডা: মানস গুমটা বলেন, 'জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে চলা এটা কোনওকালেই এরাজ্যে দেখতে পাইনি। চক্ষু বিশেষজ্ঞ, গ্যাস্ট্রো অ্যান্ট্রোলজিস্টরা রয়েছেন কমিটিতে। জনস্বাস্থ্যের মূল নীতি রোগ প্রতিরোধ করা। কোনও রোগ যদি দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে তাহলে জলের বালতি নিয়ে দৌড়ালেও ক্ষতিটা হয়ে যাবে। সেটা যেমন ফিরে আসবে না তেমনই ক্ষতিটাকেও বন্ধ করতে পারবে না।' ফি বছর ডেঙ্গি-আতঙ্ক যেন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে গিয়েছে।

ডা: মানস গুমটার বক্তব্য, 'ডেঙ্গি তো নতুন নয়, ১৮২৮ সালে ডেঙ্গি চিহ্নিত হয়েছে। তারপর ১৯৬৩-তে কলকাতায়, ১৯৬৬-তে ভূপালে, ১৯৬৭-তে দিল্লিতে ডেঙ্গির মহামারি হয়েছে। প্রত্যেক বছর শারদ উৎসবের প্রাক্কালে ডেঙ্গির প্রাদুর্ভাব রুটিন হয়ে গিয়েছে। এখন যে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে তা আগে নিলে এত মানুষ সংক্রমিত হত না। এত মানুষ মারা যেত না।'

চিকিৎসকদের একাংশ আবার মনে করছেন আমলাদের দায়িত্ব দেওয়ায় যা হওয়ার হচ্ছে। ডেঙ্গি মোকাবিলায় চূড়ান্ত ব্যর্থ হচ্ছে রাজ্য সরকার। সার্ভিস ডক্টর ফোরামের জেনারেল সেক্রেটারি চিকিৎসক সজল বিশ্বাস বলেন, 'ডেঙ্গি মোকিবিলায় সারা বছর ধরে সক্রিয় নজরদারির ব্যবস্থা থাকা দরকার। পরিকাঠামোগত সমস্যা যেমন আছে তেমনই সরকারের সদ্বিচ্ছার অভাবও রয়েছে। সরকারের উচিত ছিল জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে পুরো বিষয়টা পর্যবেক্ষণ করা। তা না করে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে আমলারা ছড়ি ঘোরাচ্ছেন। চিফ সেক্রেটারি বা প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারিরা ডেঙ্গুর কি বোঝে? ডাক্তারির কি বোঝে? ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। যাঁরা জানে তাঁরা কথা বলতে পারছে না, তাঁদের ক্ষমতা নেই, যাঁরা কিছু জানে না তাঁদের হাতে ক্ষমতা। যাঁর জন্য ডেঙ্গি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে, মানুষ মারা যাচ্ছে।'

আরও পড়ুন- এবার নতুন পাঙ্গা, দুর্গা সম্মানে টক্করে নবান্ন বনাম রাজভবন

ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত হওয়ায় প্রশাসনিক পর্যায়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। স্লাইড শো হয়েছে। ডা: মানস গুমটা বলেন, 'জনস্বাস্থ্যের দফারফা করে ছেড়েছে সরকার। ডেঙ্গি প্রতিরোধের নিয়ম মানা হচ্ছে না। বরং মশা মারার কামান দাগলে ডেঙ্গির মশা ঘরে ঢুকে যাবে। খাটের তলায়, আলমারির পিছনে লুকিয়ে থাকবে। সকাল-বিকেল-সন্ধ্যায় ওই মশার কামড়ে ডেঙ্গি ছড়াবে।'

সজল বিশ্বাসের কথায়, 'হইচই করে প্রচার চলছে। ব্লিচিং ছড়াচ্ছে। এটা ব্লিচিংয়ের কাজ নয়। বরং এতে পরিবেশ দূষণ হবে। মশা নিধনের তেল স্প্রে করতে হবে। শুধু ডেঙ্গি নয় ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া মশা বাহিত রোগ বহু রোগ আছে।'

সরকারি হিসেব অনুযায়ী মশার লার্ভা নিধনকারী ৩ কোটি ৪১ লক্ষ মাছ ছাড়া হয়েছে রাজ্যে। আরও ৪১ লক্ষ ছাড়ার কথা বলা হয়েছে ১৭ সেপ্টেম্বরের ডেঙ্গি পর্যালোচনার বিশেষ বৈঠকে। মানস গুমটার মতে, 'ডেঙ্গি মশার লার্ভা পরিস্কার জলে থাকে নালার জলে থাকে না। তাছাড়া জলের তলার দিকে থাকে। গাপ্পি মাছ ঘুরে বেড়ায় জলের ওপরের দিকে। জনস্বাস্থ্যের প্রাথমিক নিয়ম গুলিয়ে দিচ্ছে সরকার। কিন্তু টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। কোভিডের সময় চূড়ান্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা থেকে শিক্ষা নেয়নি। এখন তো প্রকৃতির নিয়মে বৃষ্টিও কমবে, জমা জলও কমবে, ডেঙ্গিও কমবে। ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে যে পদ্ধতি নিচ্ছে সরকার তা কতটা বিজ্ঞানসম্মত তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। তাই ভুগছে রাজ্যবাসী। সরকার এটাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে না। চমকে বিশ্বাস করছে সরকার।'

kolkata Dengue West Bengal Dengue Fever Doctor
Advertisment